মাদার তেরেসার সংস্থার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

মাদার তেরেসা প্রতিষ্ঠিত মিশনারিজ অব চ্যারিটির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে ভারত। তদন্তের কথা বলেই অ্যাকাউন্টগুলো জব্দের কথা জানিয়েছে মোদি সরকার। তবে কলকাতায় মাদার হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে ফোন করা হলে অপর প্রান্ত থেকে বারবার বলা হয়, ‘আমরা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করবো না।’
খবরের সত্যাসত্য জানতে চাইলেও মন্তব্য না করার কথা বলা হয়। তবে মোদি সরকারের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মিশনারিজ অব চ্যারিটির খবর সামনে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ময় প্রকাশ করেন মমতা। টুইটারে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, ‘বড়দিনের উৎসবের মধ্যে মাদার তেরেসা-র মিশনারিজ অব চ্যারিটির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ করে দিয়েছে শুনে আমি বিস্মিত। মিশনারিজ অব চ্যারিটির ২২ হাজার রোগী এবং কর্মীরা খাবার এবং ওষুধ পাচ্ছেন না। আইন সবার উপরে হলেও মানবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠিক নয়।’
কোন তদন্তের প্রয়োজনে এমন সিদ্ধান্ত তা জানা না গেলেও সম্প্রতি গুজরাটে বিতর্কে জড়ায় মাদার তেরেসার সংস্থা। ধর্মান্তকরণের অভিযোগে মোদির রাজ্যে মিশনারিজ অব চ্যারিটির বিরুদ্ধে এফআইআর-ও দায়ের হয়। গুজরাটের বডোদরা শহরে ওই সংগঠনের যে হোম রয়েছে, তার বিরুদ্ধে ধর্মান্তকরণ ছাড়াও হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করা হয় এমন কাজের অভিযোগ উঠে। তবে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয় সংগঠনের তরফে। তাদের দাবি, ওই হোমে কোনওভাবেই জোর করে কাউকে ধর্মান্তকরণ করা হয়নি।
এই অভিযোগ উঠার পর কলকাতায় মাদার হাউসে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তারা জানান, এ নিয়ে তারা কিছু বলতে চান না।
পাঞ্জাবের এক তরুণীকে জোর করে এক খ্রিস্টান যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে বডোদরার ওই হোমের বিরুদ্ধে। স্থানীয় পুলিশ কমিশনার সমশের সিংহ জানিয়েছেন, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আলাদা করে তদন্ত চলছে। আর জেলা সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তা ময়ঙ্ক ত্রিবেদীর অভিযোগ, ওই হোমে হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে। তার দাবি, হোমের অল্প বয়সী মেয়েদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়।
গুজরাটের ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন, ২০০৩-এর আওতায় মকরপুরা থানায় এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেছেন ময়ঙ্ক। তার বক্তব্য, গত ৯ ডিসেম্বর জেলার শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে ওই হোমে গিয়েছিলেন তিনি। এফআইআরে তিনি বলেছেন, সেখানে তিনি দেখেছেন, হোমের মেয়েদের জোর করে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ানো হয়। তাদের গলায় ক্রস পরতে বলা হয় এবং তাদের খ্রিস্টানদের প্রার্থনায় অংশ নিতেও বলা হয়।
ময়ঙ্কের আরও অভিযোগ, হিন্দু মেয়েদের আমিষ খাবারও খেতে দেওয়া হয় ওই হোমে। এভাবেই প্রকারান্তরে মিশনারিজ অব চ্যারিটি কর্তৃপক্ষ হোমের মেয়েদের জোর করে ধর্মান্তকরণের পথে নিয়ে যাচ্ছে।
ময়ঙ্ক জানিয়েছেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ওই সংগঠন নিয়মিত হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করেছে। পুলিশ ময়ঙ্কের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ কি না, তা অবশ্য নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, ১৯৫০ সালে কলকাতায় মাদার তেরেসা মিশনারিজ অব চ্যারিটি স্থাপন করেন। কলকাতার পাশাপাশি ভারতে এবং দেশটির বাইরেও বহু জায়গায় সক্রিয় তার প্রতিষ্ঠিত এই চ্যারিটি। ভারতে ২৪৩টি হোম রয়েছে সংস্থার। কলকাতায় প্রধান কার্যালয় সরকারিভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হয়ে যাওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও সংস্থার একজন সদস্য বলেন, ‘গোটা দেশে ও বিদেশে অনেক সেবামূলক কাজের সঙ্গে আমরা যুক্ত। হাজার হাজার অসুস্থ মানুষের সেবা চলে। কিন্তু এর ফলে সেই রোগীদের খাবার থেকে ওষুধ সরবরাহ সমস্যার মুখে পড়বে।’
সূত্র: আনন্দবাজার।