মাল্টা চাষে সফল বাবুগঞ্জের মাসুম

মাল্টা চাষে সফল বাবুগঞ্জের মাসুম

প্রবাস জীবন ছেড়ে দেশে ফিরে মাল্টা চাষে সফল হয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের দক্ষিন রাকুদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মকবুল হোসেন হাওলাদারের ছেলে তারিকুল ইসলাম মাসুম।

মাসুম ২০১০সালের প্রথম দিকে কর্মের তাগিদে সিঙ্গাপুর যান। সেখানে দীর্ঘ ৮বছর কর্মরত থেকে ২০১৮সালে দেশে ফিরে আসেন সংসার রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার তাগিদে। দেশে ফিরে তিনি বসে থাকেননি, ইউটিউবে মাল্টা চাষ ও তার ফলন সম্পর্কে ধারনা পেয়ে নিজেই উদ্বুদ্ধ হয়ে পরেন মাল্টা চাষে। সে মোতাবেক পরিকল্পিত ভাবে নিজস্ব ১৪ শতক জমিতে মাটি ভরাট করে স্বরুপকাঠী থেকে (বারি-১ জাতের) মাল্টা চারা সংগ্রহ করে ২০১৯সালের প্রথম দিকে ওই জমিতে রোপন করেন। অতপর বাবুগঞ্জ উপজেলা বর্তমান কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, কৃষিসম্প্রসারন কর্মকর্তা শাহ মোঃ আরিফুল ইসলাম, দপ্তরের সাবেক সহকারী কৃষিকর্মকর্তা মজিবুর রহমানসহ অন্যদের পরামর্শ, নিজস্ব পরিচর্যা, মেরামত এবং নিজের অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে খাটিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি। এতে গাছগুলো সুস্থ সবল থেকে ১বছরের মাথায় প্রতিটি গাছে ফল আসতে শুরু করে। বর্তমানে ৩২টি গাছের প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে মাল্টা ধরেছে যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। 

বৃহস্পতিবার ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে সরেজমিন ঘুরে মাসুমের মাল্টা চাষের সফলতার চিত্র দেখা গেছে। ইতিমধ্যে তিনি কেজি প্রতি ১ শত টাকা দরে ৪ মনেরও বেশী মাল্টা বিক্রি করেছেন যার মধ্যে ৮০কেজি ক্রয় করেছেন বাবুগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তর। এবছর ৩২টি মাল্টা গাছ থেকে ২০মন মাল্টা সংগ্রহ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খরচের ব্যপারে মাসুম বলেন, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ প্রতি বছর তার মোট ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চলতি বছর যদি তিনি ২০মন মাল্টা সংগ্রহ করতে পারেন তবে সব মিটিয়ে তিনি কম হলেও ৫০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন। মাসুম বলেন তার বাগান ও ফলন দেখে এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন।

শখের বসে বাগান করতে গিয়ে মাসুম এখন বাণিজ্যেক ভাবে চিন্তা করছেন। তিনি মাল্টা বাগান সম্প্রসারণের জন্য পাশর্^বর্তী আরো ৩৫ শতক জমিতে মাটি ভরাট করে চাষের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছেন। বসে না থেকে মৎস্য চাষসহ উৎপাদানমুখী অন্য পরিকল্পনাও তার রয়েছে যা পর্যায়ক্রমে শুরু করবেন বলে জানান মাসুম। শুধু মাল্টা নয় মাল্টার সাথে সাথে তার ১২মাসি থাই পেয়ারা ও কাটিমন আমের বাগানও রয়েছে।

এলাকার যুব সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অযথা আড্ডা এবং ঘোরা ফেরা না করে সকলেরই কিছু একটা করা উচিৎ। এতে বেকারত্ব সমস্যারও অনেকটা সমাধান হতে পারে।


মাসুমের মাল্টা বাগানের সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন উপজেলা প্রধান কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, মাসুমের আগ্রহ ও প্রচেষ্টা এবং আমাদের তথ্য প্রযুক্তি এ সব বিছুর সমন্বয়ে মাসুম মাল্টা ছাষে শতভাগ সফলতা অর্জন করেছেন। তাছাড়া আমাদের দপ্তর থেকে মাসুমের মাল্টা বাগানের প্রতি নিয়মিত তদারকি ও নজরদারি করা হচ্ছে। মাসুম ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত শতাধিক মাল্টা বাগান আছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনে সফলতা পেয়েছেন। মাসুমদের মত যারা সফলতা পেয়েছেন তাদের দেখে ইতিমধ্যে অনেকেই মাল্টা চাষে এগিয়ে এসেছেন যাদের আমরা প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিত করে আসছি।