মেহেন্দিগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর লতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান নেহালে বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইউপি সদস্য মো. তাজুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওই ইউনিয়নের আরো ৪ জন ইউপি সদস্য।
সোমবার দুপুর ১২ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহানারা আবদুল্লাহ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
কাজীর হাট থানার ২ নম্বর লতা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. তাজুল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, সরকারী নিয়মানুযায়ী জনপ্রতি জন্ম নিবন্ধন বাবদ ৫২ টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলেও প্রতি জন্ম নিবন্ধন থেকে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা নিচ্ছেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। জন্ম নিবন্ধন খাত থেকে তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সরকারী নিয়মে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিমাসে একজন ইউপি সদস্যর সম্মানী ভাতা ৪ হাজার ৪০০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও সাড়ে চার বছরে মোট ১২ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। অথচ জনপ্রতি ইউপি সদস্য ইউনিয়ন পরিষদে মোট ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা সম্মানী ভাতা পাওনা রয়েছে। সম্মানী ভাতা পরিশোধ না করে প্রত্যেক বছর বাজেট মিটিংয়ে ভাতার টাকা পরিশোধ দেখানো হয়েছে। যা আইন বহির্ভূত। সম্মানী ভাতার সব টাকা চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেছেন।
মহামারী করোনার সময় মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় মোট ৪৩৯ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্ধ হয়। তা ইউনিয়নে কোথায় কিভাবে বরাদ্দ বা বিতরণ হয়েছে তার কোন হদিস নেই। ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ২০২১ উপলক্ষে গরীবদের মাঝে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন জোনাল অফিস বরিশাল ত্রাণ সহায়তা অনেক মানুষই পায়নি। এসব ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।
১০ টাকা মূল্যে বিজিএফ কার্ড বিতরণে দুর্নীতি করেছেন। বিজিএফ চালের কার্ড প্রতি ৪/৫ হাজার টাকা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চেয়ারম্যান। এমনকি একই পরিবারে একাধিক কার্ড বিতরণ করেছেন। ২ বছর মেয়াদী ভিজিডি কার্ডে প্রত্যেক কার্ডে বাবদও ৪/৫ হাজার টাকা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। বয়স্ক/ প্রতিবন্ধ/ বিধবা ভাতায় দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চেয়ারম্যান।
এলজি এসপির টাকা দিয়ে বিশেষ প্রয়োজনে জনস্বার্থে টিউবয়েল দেওয়ার নিয়ম আছে। কিন্ত ব্যক্তি স্বার্থে টিউবয়েল দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান এলজি এসপির টাকা দিয়ে রাস্তা, কালভার্ট, পুল নির্মাণ কার্যক্রমে ব্যয় না করে বরাদ্ধের ৯০ ভাগ টাকা ব্যক্তির নামে টিউবয়েল দিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
নন ওয়েজ প্রকল্পের টাকা কোথায় কিভাবে ব্যয় হয়েছে তা কেউ জানে না। ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পের টাকা, ১০০/- টাকায় ১০ ভাগ কাজ করা হয় না। একাউন্ট হোল্ডারের টাকা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ সব অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং গত ১৭ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন ইউপি মেম্বর তাজুল ইসলাম।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ২নম্বর লতা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. স্বপন, ৫ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও আ. লীগের ওয়ার্ড সভাপতি মো. আলমগীর কাজী, ৭ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. আলী হোসেন বিশ^াস ও ৭-৮-৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোসাম্মৎ হেনা বেগম।
২ নম্বর লতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান নেহাল মুঠোফোনে বলেন, সামনে নির্বাচন, তাই একটি পক্ষ মিলিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা প্রচারণা করছে। আর আমি যদি দুর্নীতি করি তাহলে ইউপি সদস্যরাও তো তাতে জড়িত রয়েছে। আসলে সবই ষড়যন্ত্র।