ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় রেনুপোনা পাচারের অভিযোগ

ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় রেনুপোনা পাচারের অভিযোগ
আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেনুপোনা আহরণ করছে একটি চোরাচালান চক্র। প্রতিদিন অন্তত অর্ধকোটি টাকার রেনুপোনা চালান হচ্ছে খুলনা বিভাগে। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক দপ্তরকে ম্যানেজ করে রেনুপোনা চোরাচালানের এই অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে সংঘবদ্ধ দলটির নেতৃত্বে নাম পাওয়া যায় টুঙ্গিপাড়ার টুলু মিয়া, বরিশালের রনি ও হারুন নামের দুইজনের। প্রশাসন থেকে বিষয়টি স্বীকার করে নজরদারি আরো বাড়ানো হবে বলে গদবাঁধা পুরানো কথা জানানো হয়েছে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বরিশালের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেনুপোনা পাচারে ব্যাপক চিত্র চোখে পড়ে। তবে যত পরিমাণ পাচার হয় তার অতি নগন্য জব্দ হয়। বরিশালে রেনুপোনা পাচারের পয়েন্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বরিশালের একতলা লঞ্চঘাট, তালতলী ও বেলতলা খেয়াঘাট, বালুরমাঠ, নেহালগঞ্জ, লাহারহাট ফেরীঘাট, গোমা ফেরিঘাট, গলাচিপা ফেরিঘাট, বেকুটিয়া ফেরিঘাট। রেনুপোনা পাচারের ঘটনা সচিত্র ধারণ করার জন্য বরিশালের বাকেরগঞ্জ যাবার পাথে দেখা মেলে রেনুপোনা ভর্তি তিনটি গাড়ি। থামাতে অনুরোধ করলে একটি গাড়ি থামে বাকি দুটি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। থামানো গাড়িতে ২২টি ড্রাম ভর্তি আড়াই লাখ রেনুপোনা ছিল। গাড়িতে থাকা একজন জানায়, তারা আড়াই লাখ রেনুপোনা নিয়ে যাচ্ছে। ভোলা থেকে বাগেরহাট নিয়ে যাচ্ছেন তারা। একএকটি পোনা ষাট পয়সায় কিনেছেন তারা। বরিশাল থেকে তারা খুলনা বাগেরহাট পর্যন্ত নিতে পরিবহণ ও বিভিন্ন সেক্টরে বিটমানি দিয়ে প্রতিটি পোনা ১২ থেকে ১৩টায় বিক্রি করবেন। প্রতি চালানে তারা আড়াই থেকে পাঁচ লাখ পোনা নিয়ে যায়। ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার রেনুপোনা পাচার হয় এ অঞ্চল থেকে। কথা বলতে বলতে ঘটনাস্থলে চলে আসেন রেনুপোনা চালানের মালিক টুলু মিয়া। তিনি আরো বলেন, ‘আমি পরিবহণের ব্যবসা করি। মাছ কি সেটাই জানি না। আগে সিস্টেম করে দু-চার পয়সা আয় করলেও এ বিষয়ে এখন আর কিছুই জানি না।’ তিনি জানান, কেবল বরিশাল নয়, মাদারীপুর থেকে রেনু পাচার বেশি হয়। মাদারীপুরে জাহাঙ্গির এই ব্যবসা করে। সেখানে বিটমানি কম, বরিশাল মহানগরি এলাকা হওয়ায় বিটমানি বেশি। তাই এই এলাকায় ব্যবসা নাই।’ এই কথা বলে রেনুপোনা নিয়ে প্রতিবেদন করতে তিনি অনুরোধ জানান। অর্থাৎ ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান। যেমনটি টুলু মিয়ারা ম্যানেজ করেন কতিপয় পুলিশ সদস্য, মৎস্য কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রভাবশালী, ভুইফোর সাংবাদিকদের। তবে সংশ্লিষ্টরা রেনুপোনা পাচারের সত্যতা স্বীকার করে নিমূর্ল করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টুলুর হাত ধরে বরিশালে আরো দুজন র্শীর্ষ রেনু চোরাচালানকারীর উঠে আসে। এই দুজন হচ্ছে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের রনি ও হারুন। এরা দুজন বরিশাল থেকে চোরাকারবারি করেন রেনুপোনা। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। এদিকে, বিভিন্ন সময় পোনা জব্দ হলেও তার সবটা অবমুক্ত না করে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে ক্ষোদ মডেল থানা থেকে ছাড়িয়ে নেবারও অভিযোগ পাওয়া গেছে সম্প্রতি। মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক অলিয়ুর রহমান বলেন, ‘এই ব্যবসার সঙ্গে রাঘব বোয়ালরা জড়িত। তাদের চাপ উপেক্ষা করে কাজ করা বেশ কঠিন। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। মৎস্য বিভাগের জনবল সংকট, রাতে কাজ করা বেশিরভাগ সময়েই সম্ভব হয় না। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খাঁন বলেন, ‘ রেনুপোনা পাচারের সঙ্গে কেউ কেউ অসাধু পন্থা অবলম্বন করছে। তবে পাচার রোধে চষ্টা করি।’ বরিশাল বিভাগের কমিশনার রাম চন্দ্র দাস বলেন, রেনুপোনার গুরুত্ব রয়েছে বলেই তো মৎস্য আইনে এইটি আহরণই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রেনুপোন বহন তো দূরে থাক, আইনের ব্যাত্যয় হলে আমাদের কর্মকর্তারা অপরাধীদের আইনের আওতায় আনছে।