রাজনীতির নামে আগস্ট ট্রাজেডি বন্ধ হোক

আজকের বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নয়নের মহাসড়কে থাকার কথা। স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও আমরা উন্নত দেশের সারিতে দাঁড়তে পারিনি। অথচ আমাদের পরে স্বাধীন হওয়া দেশগুলো উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটছে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এখনো ওইসব দেশের অর্জনের কথা বলে সামনে যাওয়ার পথ খুঁজে বেড়াই। কিন্তু কেন আমাদের পেছনে পড়ে থাকা? কারা এর জন্য দায়ি? স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে দুটি নির্মম ঘটনা আমাদের সামনে যেতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাজনীতির নামে এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চিন্তা এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রর কারণেই পেছনে পড়েছে বাংলাদেশ। রাজনীতির নামে দুই আগস্ট ট্রাজেডি বাংলাদেশের অগ্রগতি পিছিয়ে দিতে মূখ্য ভূমিকা রেখেছে। আমরা রাজনীতির নামে আর কোন নির্মম হত্যা এবং আগস্ট ট্রাজেডি দেখতে চাই না। একই সঙ্গে দুই আগস্টের কুশিলবদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। সেই সঙ্গে দেশে সুন্দর রাজনীতি এবং রাজনৈতিক সহাবস্থান প্রত্যাশা করছি।
আগস্ট মাস এলেই আমাদের মানসপটে দুটি নির্মম ঘটনা ভেসে ওঠে। এর একটি ঘটনানো হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। অন্যটি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ইতিহাসের দুটি নির্মম ঘটনায় বাংলাদেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ হতবাক হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই সময় কোনমতে দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের কুশিলবরা বুঝতে পারেনি আবারো বঙ্গবন্ধুর পরিবারই দেশের দায়িত্ব নেবে। শেখ হাসিনা যখনই দায়িত্ব নিয়েছেন তখনই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলেছে। হত্যার চেষ্টাও হয়েছে একাধিকবার। সেই চেষ্টার অন্যতম মহড়া হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটানো হয় সেদিন।
১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্টের মধ্যে পার্থক্য শুধু একটি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের আঁধারে ষড়যন্ত্র এবং হত্যাকা- ঘটানো হয়। আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নির্মম হত্যাকা- ঘটানো হয় প্রকাশ্যে দিনের বেলায়। ওই ঘটনায় তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও ওই নির্মমতার শিকার হয়ে প্রাণ দিয়েছেন ২৪ জন। আহত হয়েছেন ৩০০ মানুষ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংস সহিংসতার ঘটনা ২১ অগাস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট আসামী ছিলেন ৪৯ জন। রায়ে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৯ জনকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন সাবেক স্বরাস্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও আব্দুস সালাম পিন্টুসহ মোট ৩১ জন। পলাতক দেখানো হয়েছে সাবেকর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপির রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন।
গত ১০ বছর যাবত লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হয়েছে তাকে। আর অভিযোগপত্রে তাকে 'পলাতক' হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিএনপি সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে ক্ষমতাসীন হবার পর আটক করা হয় বাবরকে। এরপর থেকে কারাগারে আছেন তিনি। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। বিএনপি সরকারের আমলে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আব্দুস সালাম পিন্টু। এ ছাড়াও সে সময় টাঙ্গাইল জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদ- দিয়েছে আদালত।
একই সঙ্গে গ্রেনেড হামলা মামলার মূল আসামী এবং উগ্র ইসলামপন্থী দল হরকাতুল জিহাদের নেতা ছিলেন মুফতি হান্নান। মূলত তার স্বীকারোক্তিতেই গ্রেনেড হামলা মামলায় মোর ঘুরে যায় বলে জানান রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীরা। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির পর তারেক রহমান এবং লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেককেই এ মামলার আসামী করা হয়। মাওলানা তাজউদ্দীন হিসেবেই বেশি পরিচিত তাজুল ইসলাম। বিএনপি সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু তার ভাই। গ্রেনেড হামলার পর ভুয়া পাসপোর্টের মাধ্যমে তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন বলে জানা যায়। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। বিএনপি সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাকে। এছাড়াও বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
আমরা চাই স্বাধীন বাংলাদেশে যেন আর কোন নির্মম আগস্ট না আসে। আমরা ১৫ কিংবা ২১ কোন আগস্ট দেখতে চাই না। আগস্টের কুশিলবরা যেন বাংলাদেশকে আর পেছনে নিয়ে যেতে না পারে। স্বাধীন বাংলাদেশ যেন স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে সামনে চলতে পারে। বাংলাদেশে যেন সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ বিজার করে। যেখানে হিংসা, দ্বেষ এবং হত্যার রাজনীতি থাকবে না।