রিফাত হত্যার নির্মমতার দায় নিতেই হবে

রিফাত হত্যার নির্মমতার দায় নিতেই হবে
২০১০ সালে বরিশাল পলিটেকনিক কলেজে ছাত্রলীগ কর্মীরা কুপিয়ে হত্যা করে ইমরানকে। একই প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর পর হত্যার শিকার হয় রেজাউল। এরপর ঢাকায় নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিশ^জিৎ নামে এক যুবককে। এই সব হত্যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সব শেষ বরগুনা জেলায় দিনের বেলা কুপিয়ে হত্যা হয় রিফাত শরীফ নামে এক যুবক। বরিশাল পলিটেকনিক এবং বগুনার ঘটনা একই রকম। দিনের আলোয় অনেক মানুষের সামনে দুটি হত্যাকা- ঘটায় ছাত্রলীগ নামধারীরা। গত ২৬ জুন বরগুনায় একটি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে রিফাত শরীফ (২৫) কে। অতিরিক্ত রক্তক্ষণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রিফাত। রিফাত হত্যার নির্মম ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে যে কোন বিবেকবান মানুষ আঁতকে উঠবে। হয়েছেও তাই। গত তিন দিন সারা দেশে আলোচনার বিষয় ছিল এই নির্মম হত্যাকা-। কি কারণে রিফাত হত্যা হয়েছে সেটা বড় কথা নয়। একজন মানুষকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। রিফাতের স্ত্রীর আর্তনাদ ছাড়া আর কোন সহযোগীকে দেখা যায়নি সেখানে। যদিও কোন একজন ওই নির্মম দৃশ্য ধারণ করেছে। ওই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়েছে গোটা দুনিয়া। এই নির্মম হত্যার দায় কোনভাবেই এড়ানো যাবে না। এই দায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সরকাকেই নিতে হবে। রিফাত হত্যার পর গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ঝড় উঠেছে। আবারও সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত হত্যার প্রধান আসামী নয়নকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এই হত্যাকারী নয়ন একদিনে বেপরোয়া হয়নি। দীর্ঘদিন বরগুনায় পুলিশ প্রশাসনের সামনেই নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল নয়ন। কেবল সরকারি দলের সদস্য হওয়ায় বেশিরভাগ সময় রেহাই পেয়ে গেছে। হত্যার সঙ্গে যুক্ত নয়নসহ অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে মাদকসহ অনেক অপকর্মের নজির রয়েছে। এমনও অভিযোগ উঠেছে হত্যার মূল হোতা নয়ন বরগুনায় পুলিশের সঙ্গে যোগসাজসে মাদক ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করতো। সরকারি দলের পরিচয় থাকায় তার বেপরোয়া হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। সরকারি দলের পরিচয় বহনকারী নয়নদের ঠেকাবে কে? কে এদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে? খোদ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী-ই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। অনেক সময় তাদের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় তারা কাউকে পরোয়া করে না। দলের পরিচয় বহনকারী এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। এসব সন্ত্রাসীরা কেবল রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার কারণে ধারাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এখন দরকার রাজনৈতিক শুদ্ধাচার। যাচাই-বাছাই করে দলের ছাত্র সংগঠন এবং সহযোগী সংগঠনে সদস্য পদ দেওয়া দরকার। আর দলের পরিচয় নিয়ে অপকর্ম করলে তাদের বিরুদ্ধে, আইনী এবং দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলে সন্ত্রাসী কর্মকা- যেমন কমবে, তেমনি দলের দুর্নামও বন্ধ হবে। রিফাত হত্যার নির্মমতার দায় কোনভাবেই এড়ানো যাবে না। এই দায় সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমাজের প্রত্যেক নাগরিককে নিতে হবে। আমরা মনে করি নয়নদের অপকর্ম ঠেকাতে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী-ই যথেষ্ট। আামাদের পুলিশ প্রশাসন ইচ্ছে করলে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো দৃঢ় করতে পারেন। সেই উদ্যোগ নিক পুলিশ প্রশাসন। একই সঙ্গে পুলিশের কোন সদস্য যাতে এইসব সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় না দেয় সেব্যাপারে পুলিশের কর্তা ব্যক্তিদের নজরদারী বাড়াতে হবে। আমরা চাই আর যেন কোন রিফাতকে এইভাবে নির্মম হত্যার শিকার হতে না হয়। সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেই নিরাপত্ত ব্যবস্থা দিতে আরো উদ্যোগী হোক।