শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া সুযোগ দিন

শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া সুযোগ দিন

 

ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ল্যাব প্রতিষ্ঠা, প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম। মূলত শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারদর্শী করতেই এমন উদ্যোগ। 

সরকারের এই যুগান্তকারী উদ্যোগের সিংগভাগ কাজে আসছে না। শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ব্যবহারের সুযযোগ পাচ্ছে না। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাল্টিমিডিয়া এবং কম্পিউটার সম্পর্কে একধরণের ভীতি সৃষ্টি করে রাখছে। শিক্ষার্থীরা যদি আধুনিক এই সুবিধার সঙ্গে পরিচিত হতে না পারে তাহলে তারা কিভাবে স্মার্ট শিক্ষার্থী কিংবা স্মার্ট নাগরিক হয়ে উঠবে। সব ব্যবস্থা থাকার পরও শিক্ষার্থীরা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। এই নির্বুদ্ধিতা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের মাল্টিমিডিয়া ও কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।
খোঁজ নিলে দেখা যাবে, অনেক প্রতিষ্ঠানের মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ল্যাব ব্যবহার হচ্ছে না। কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারের দায়িত্বে থাকা একজন শিক্ষক মাঝে মধ্যে ওই কক্ষ খোলেন। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা কম্পিউটারগুলো ধুলোয় আটকে আছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা সহসাই প্রবেশ করতে পারে না।

শ্রেণিকক্ষে যেন মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের পাঠদান করা হয়। মাল্টিমিডিয়া চালানোর জন্য যেন বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তা না হলে সরকারের কোটি কোটি টাকার মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এক সময় বোঝা হয়ে যাবে। কেজি দরে বিক্রি করতে হবে। আমরা কোন অবস্থাতেই সেই দৃশ্য দেখতে চাই না।

বরিশাল শহরের নামি-দামি কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সেখানে শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে ঢুকতে পারছে না। দুই-একটি প্রতিষ্ঠান কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের ল্যাবে নিয়ে যান। ওই ল্যাবে তাদের কেবল কম্পিউটারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ তারা পায় না। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকার কম্পিউটারে ধুলাবালি পড়ে আছে। ওইসব কক্ষ ব্যবহারই হয় না।

সরকার অর্থ ব্যয় করে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম, কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ আাইসিটি শিক্ষক দেওয়া হয়নি। ফলে গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি, বাংলা কিংবা সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের ল্যাবের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তারা কম্পিউটারকে অতি আশ্চর্য বিষয়বস্তু হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেন। এটা এভাবে ব্যবহার করা যাবে না ওভাবে ব্যবহার করলে নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ওই কক্ষে যেতে অনাগ্রহী করে তুলছেন। এই ধারার পরিবর্তন করতে হলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক দেওয়া এবং সকল শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

আমরা চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারের সঙ্গে পরিচিত হোক। মাধ্যমিক পর্যায়ে তারা কম্পিউটার ব্যবহারে পাদর্শী হোক। আমাদের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ল্যাবে প্রবেশ করতে দিতে হবে। তারা যেন সহজে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে সেদিকে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নজর দিতে হবে। তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা সত্যিকার অর্থে কম্পিউটারে পারদর্শী হয়ে উঠবে। সেই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও তদরকি বাড়াতে হবে।