শ্মশান রক্ষা কমিটির নেতা তমাল মালাকারের কাণ্ড

শ্মশান রক্ষা কমিটির নেতা তমাল মালাকারের কাণ্ড

নাম তার তমাল মালাকার। বরিশাল শহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। মহা শশ্মানের রক্ষার নামে মৃতদেহ শ্মশান এলাকায় ঢুকতে না দিয়ে নতুন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে মৃতদেহসহ স্বজনদের শ্মশানের বাইরে রেখেছেন। প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শ্মশানে প্রবেশের অনুমতি মেলে। একই সঙ্গে তমাল মালাকারের এই ধররণের কর্মকাণ্ডে প্রশাসন থেকে হুঁশিয়ারীও করা হয়।

গত শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মহাশ্মশানে নেওয়া হলেও সাড়ে ৪ ঘন্টা পর রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রশাসনের সহযোগিতায় শ্মশানে প্রবেশ করেন জস্বনরা।

বরিশাল নরসুন্দর কল্যাণ ইউনিয়নের সভাপতি নির্মল চন্দ্র ভোরের আলোকে বলেন, নিতাই চন্দ্র শীল নরসুন্দর কল্যাণ ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। তিনি বুকে ব্যথা ও শ্বাস কষ্ট জনিত কারণে নিতাই চন্দ্র শীল (৫৪) মৃত্যু পর ধর্মীয় নীতি সেরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল মহাশ্মশানে সৎকারের জন্য নিয়ে যান। স্বজনরা বৃষ্টির মধ্যে শ্মশানের পকেট গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। কিন্তু প্রবেশ করার পর তাদের বাঁধা দেন শ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার। তার সঙ্গে অন্যরাও ছিল অনুরোধ করলেও তাদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। মৃতদেহসহ স্বজনদের শ্মশান এলাকা থেকে বের করে দেন শ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার। প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা বষ্টিতে ভেজজার পর প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতায় শ্মশানে প্রবেশ করে।

মৃত নিতাই চন্দ্র শীল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিয়ে মারা যান। কিন্তু তিনি করোনা পজেটিভ হননি। তারপরও তার নমুনা সংগ্রহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ল্যাবে পাঠিয়েছে। সেই পতিবেদন পাওয়া যায়নি। কিন্তু করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়ে মারা যাওয়ার দোহাই দিয়ে তমাল মালাকার শ্মশানে ওই লাশের দাহ করতে বাধা দেন এমন অভিযোগ মৃত নিতাই চন্দ্র শীলের স্বজনদের।

মৃত নিতাই চন্দ্র শীলের ছেলে নিখিল চন্দ্র শীল অভিযোগ করেন, শ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার তার বাবাকে নিয়ে সৎকারের জন্য গেলে তাতে বাধা দেন। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে শ্মশান থেকে মরদেহসহ তাদের বাইরে বের করে দেন তমাল মালাকার ও তার অনুসারীরা। এসময় তাদের গালাগালও করা হয়।

জানা যায়, নগরীর চাঁদমারি খেয়াঘাট এলাকায় নিখিল হেয়ার ড্রেসারের মালিক নিতাই চন্দ্র শীল (৫৪) বুকে ব্যাথা ও শ্বাস কষ্ট নিয়ে শনিবার সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে বরিশাল মহাশ্মশানে শেষ কৃত্যের জন্য নেওয়া হলে তার স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে শ্মশান এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয়। প্রথমে বলা হয় বরিশাল নগরীর ভোটারদের বাইরে কাউকে দাহ করা হবে না। পরে করোরনার আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে দুর্বব্যহার করে সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার। বিকেল সারে তিনটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টির মধ্যে মৃতদেহসহ স্বজনদের শ্মশানের বাইরে অমানবিক ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখেন তমাল মালাকার। এমনটাই অভিযোগ করেন মৃতের স্বজনরা।

বরিশাল শ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী কুডু গতকাল রাতে ভোরের আলোকে বলেন, করোনা নিয়ে মৃত্যু হওয়া এক রোগীকে নিয়ে শ্মশানে নিয়ে যায় স্বজনরা। সেখানে একটু সমস্যা হলেও তাদের শেষ কৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার শ্মশানে ঢুকতে না দেওয়ায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা বাইরে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মানিক মুখার্জী বলেন, এমন অভিযোগ আমি শুনিনি। তবে শ্মশানে ওই মুহূর্তে আরো একটি লাশ দাহ হচ্ছিল। বিকল্প জায়গা না থাকার কারণে তাদের ভিজতে হয়েছে।

সনাতন ধর্মের একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, বরিশাল মহাশ্মশানে দাহ করার জন্য তিনটি দাহ ঘর রয়েছে। এর মধ্যে দুটি পাকা শ্মশান। সেখানে মৃত দেহ রাখা এবং স্বজনদের বসারও স্থান রয়েছে। শ্মশান এলাকায় কোন মৃত ব্যক্তি ও স্বজনদের নিয়ে গেলে ভেজার কোন কারণ নেই। এটা তমাল মালাকারের স্বচ্ছাচারিতার কারণেই হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বরিশালে কেবল সনাতন ধর্ম নয়, সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশরা তমাল মালাকারের নানা অপকর্মের কথাও তুলে ধরেন। তারা অভিযোগ করেন, মৃত ব্যক্তিদের মঠ তৈরীতে স্বজনদের কাছ থেকে নিয়মের দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন তমাল মালাকার।

এব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, গত শনিবার এক সনাতন ধর্মের ম্যক্তিকে শ্মশানে সৎকারের জন্য নেওয়া হলে তাদের শেষ কৃত্যে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে ওই ব্যক্তির শেষ কৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন শ্মশান রাষ্ট্রীয় সম্পদ। সেখানে অমানবিক আচরণ করা কোনভাবেই কাম্য নয়। গতকাল শ্মশান রক্ষা কমিটিকে ডেকে এব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এধরণের ঘটনা না ঘটে সেব্যাপারেও তাদের হুুঁশিয়ারী করা হয়েছে।

এব্যাপারে বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। করোনা আক্রান্ত মৃত দেহ নিয়ে শ্মশানের পকেট গেট দিয়ে জোর করে ঢুকেছিল। সেখানে তার হট্টগোল করছিল। স্বজনদের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে রেখে প্রশাসনিক জটিলতা নিরসের জন্য বলা হয়েছিল। তারা সেটা শুনছিল না। তাছাড়া শ্মশানে তখনও মৃত দেহ দাহ চলছিল। অতিরিক্ত জায়গা না থাকায় ভেতরে মৃত দেহ ভেতরে রাখা সম্ভব হয়নি। তাই তাদেরকের বাইরে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। পরে অবশ্য সৎকার করা হয়েছে।