হতাশ আসপিয়া ও বরিশাল গণমাধ্যম

ভূমিহীন হওয়ায় পুলিশের কনেষ্টবল পদে সরকারী চাকরি না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পরেছিলেন বরিশাল হিজলা উপজেলার স্থায়ী ভাড়াটিয়া আসপিয়া ইসলাম। তবে তার পূর্ব পুরুষের বাড়ি ভোলা জেলায়। কিন্তু আসপিয়ার জন্মই হয় বরিশালের হিজলা উপজেলায় এবং জন্মের পর থেকে এখানে বসবাস করে আসছেন। তাই তাকে স্থায়ী ভাড়াটিয়াই বলে আখ্যা দিয়েছেন অনেকেই।
হতাশ হয়ে পরা আসপিয়াকে চাকুরি পেতে সর্বপ্রথম সহযোগীতা করে বরিশালের গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দরা। আসপিয়াকে নিয়ে প্রথম সংবাদ প্রচার হয় দিপ্ত টিভিতে, নিউজ২৪ টিভি চ্যানেলে, বাংলাদেশ প্রতিদিনে এবং বরিশালের আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক ‘বরিশাল ভোরের আলো’ পত্রিকায়। এর পরপরই আসপিয়াকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষের মতামত দেখা যায়। মূহুর্তের মধ্যে আসপিয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, টেলিভিশনে আসপিয়াকে নিয়ে সংবাদ প্রচার হতে থাকে। এর এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি ঘর এবং তার যোগত্যা অনুযায়ী পুলিশের কনেষ্টবল পদে চাকরিটি ফিরিয়ে দেয়া নির্দেশ দেন কতৃপক্ষকে।
আসপিয়ার চাকরি ফিরে পাওয়া এবং আসপিয়াকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করে বিভিন্ন মহলে পৌঁছে দেয়ার মানুষ গুলো সারাজীবন নিরবে থাকে। এ রকম হাজারও আসপিয়াদের সহযোগীতার গল্প কোন ডাইরিতে উঠে না, কোন কবিতা-গল্পের বই অথবা পত্রিকায় ছাপা হয় না। পর্দার আড়ালে থাকা মানুষ গুলোকে কখনো কেউ চিনে না এবং যানে না। কিন্তু এই মানুষ গুলো রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছুটে চলে প্রান্ত থেকে প্রান্তর।
আসপিয়াকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন নিউজ২৪ চ্যানেলের বরিশালের ক্যামেরা পার্সন শাহিন সুমন। তার ফেসবুক টাইমলাইনের স্ট্যাটাস হুবাহু তুলে ধরা হলো: ‘মানবিকতা এখনো বেঁচে আছে। নিউজটা করতে গিয়ে রেঞ্জ ডিআইজি মহদয়ের কথা শুনে হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েটির দারিদ্রতার কথা ভেবে বসে থাকতে পারিনি। আজ বিষয়টি দেশবাসীর সামনে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বমহলে আলোচিত।
৮ডিসেম্বর দুপুর ৩টার সময় বরিশাল পুলিশ লাইন্সের সামনে বসে থাকা বরিশালের সদ্য পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ভূমিহীন আসপিয়াকে নিয়ে কাজটি শুরু করি। ৭স্তরে পরিক্ষা দিয়ে পাশ করেও তার একখ- জমি নেই তাই বলে তার চাকরি হবে না। ভাবতে বিষয়টি খারাপ লাগছে।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশনের বরিশাল ব্যুরো প্রধান রাহাত ভাইর নির্দেশনায় চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের বরিশাল ব্যুরো প্রধান রানা ভাই, দিপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন আবুল বাশার, এস এ টিভির ক্যামেরা পারসন নারায়ন সাহা এবং আমি তাদের নিয়ে কাজটি প্রথম শুরুটা করেছিলাম মেয়েটির হতাশা দিয়ে। শেষ হলো সফলতা দিয়ে। সাংবাদিকতার এটাই বড় পাওয়া। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।’
দিপ্তটিভির বরিশাল প্রতিনিধি মর্তুজা জুয়েল ভোরের আলোকে বলেন, ‘আমরা মানুষ ও রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে থাকি। তারই একটি উদাহরণ আসপিয়া।’
নিউজ২৪ চ্যানেলের বরিশালের ক্যামেরা পার্সন শাহিন সুমন ভোরের আলোকে বলেন, ‘একটি মানুষের জমি নেই তাই চাকরি হচ্ছে না জেনে আমিও হতাশ হয়ে যাই। কিন্তু আসপিয়া এদেশের নাগরীক তাহলে চাকরি পেতে বাঁধা কোথায় সেই প্রশ্ন নিয়েই সংবাদ প্রচার করি। শুরুটা করেছি হাতাশা দিয়ে এবং শেষ করেছি সফলতা দিয়ে। এটাই সাংবাদিকতা। ধন্যবাদ সকল সাংবাদিক বন্ধুদের’
এমন সফলতার পেছনের গল্প প্রতেক মানুষ ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আরো একটি উদাহরণ হিসেবে রয়ে গেলো আসপিয়া।