২৪ বছর নির্বাচনহীন বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থা

২৪ বছর নির্বাচনহীন বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থা

বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন হচ্ছে না গত ২৪ বছর। প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন না হওয়ায় যোগ্য সংগঠকরা আসতে পাড়ছে না ক্রীড়াঙ্গনের নেতৃত্বে।

গত ২৪ বছরে ক্ষমতাসীন দলের পোষ্যদের দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বরিশালের ক্রীড়াঙ্গন। রাজনৈতিক বিবেচনায় অযোগ্যদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে বরিশালের ক্রীড়াঙ্গন। কোভিড পরিস্থিতি সহনীয় হলে নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গন সরব করার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও  জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।

নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতৃত্ব তুলে দেয়ার মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গন সরব করার দাবীতে গত ১৮ অক্টোবর বরিশাল নগরীর সদর রোডে মানববন্ধন করেন জেলার বিভিন্ন স্তরের সাবেক ও বর্তমান খেলেয়াড় এবং সংগঠকরা। 

অভিযোগ উঠেছে, ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতি ঢুকে যাওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক কোন লীগ বা টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত চ্ছে না দেশের অন্যতম বৃহত্তম বরিশাল স্টেডিয়ামে। ক্রীড়াঙ্গন সরব করতে অবিলম্বে নির্বাচিতদের কাঁধে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় দায়িত্ব তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড় এবং সংগঠকরা।

বরিশাল ক্রীড়াঙ্গনের স্থবিরতার কারণে বরিশালে আজ পর্যন্ত ফুটবল প্রিমিয়ার লীগ হয়নি। সবশেষ ২০১৩ সালে দ্বিতীয় ও ১৫ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট এবং ২০১৮ সালে প্রথম বিভাগ ও প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ১৩ ইভেন্টের অন্য ১১টি ইভেন্টের খবর নেই বরিশালে।

বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতৃত্ব গঠনে সব শেষ প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৯২ সালে। ৪ বছর মেয়াদের ওই কমিটির মেয়াদ শেষ ১৯৯৬ সালে। এরপর থেকে আর কোন নির্বাচন হয়নি জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। যখন যে দল ক্ষমতায় আসছে তাদের মনোনীতদের কাঁধে তুলে দেয়া হচ্ছে জেলার ক্রীড়াঙ্গনের দায়িত্ব। ক্রীড়াপ্রেমীদের হাতে দায়িত্ব না থাকায় খেলাধুলা নেই স্টেডিয়াম পাড়ায়।

পদাধীকার বলে জেলা ক্রীড়ার সভাপতি জেলা প্রশাসক। সংস্থার সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদে ৪ বছর পর পর  বিভিন্ন স্পোর্টস ক্লাব কর্মকর্তা-কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিতদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়ার কথা। কিন্তু গত ২৪ বছর ধরে নির্বাচন হয় না এখানে। রাজনৈতিক বিবেচনায় চাপিয়ে দেয়া হয় নেতৃত্ব। সব শেষ এডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম নুরুর মৃত্যুর পর ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)। যোগ্যদের হাতে নেতৃত্ব না থাকায় প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা নেই বরিশাল স্টেডিয়ামে। 

সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ এজাজ আল মাহমুদ সুজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক পন্থায় নেতৃত্ব নির্বাচন না হওয়ায় যোগ্যরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতৃত্বে আসতে পারছেন না। এ কারণে জেলার ক্রীড়াঙ্গন ঝিমিয়ে পড়েছে। 

ক্রীড়া সংগঠক জহিরুল ইসলাম জাফর ও মাহবুব মোর্শেদ শামীম জানান, জেলা ক্রীড়া সংস্থা কোন ক্রীড়া সংগঠন বা ক্লাবকে রেজিস্ট্রেশন দেয় না। তবে আর্থিক অনুদান দেয়। বিভিন্ন সময় ক্রিকেট-ফুটবল বা অন্য ইভেন্টে আয়োজিত লীগ বা টুর্নামেন্টে অংশ নিত ৬০ থেকে ৭০টি ক্লাব। এসব ক্লাব পরিচালনাকারী সাবেক খেলোয়াড় ও সংগঠকদের মধ্য থেকে সরাসরি ভোটে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতৃত্ব তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খসরু বলেন, দির্ঘদিন ধরে সরকারী কর্মকর্তারা ক্রীড়াঙ্গনের নেতৃত্বে। স্থানীয় ক্রীড়ার উন্নয়নে সরকারি কর্মকর্তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। নির্বাচিতদের হাতে ক্রীড়াঙ্গনের দায়িত্ব তুলে দেয়া হলে আবার বরিশাল স্টেডিয়াম প্রাণবন্ত হবে বলে।

জেলা ক্রীড়া সংস্থায় অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া উচিৎ মনে করেন বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন খান আলো। নির্বাচিত সাবেক খেলোয়াড় ও সংগঠকদের হাতে জেলার ক্রীড়াঙ্গনের দায়িত্ব তুলে দেয়ার দাবিও জানান তিনি। 

নিয়মিত কমিটি না থাকায় ক্রীড়াঙ্গন ঝিমিয়ে পড়েছে বলে স্বীকার করেন বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি এসএম অজিয়র রহমান। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি হালনাগাদ করার মাধ্যমে স্টেডিয়াম সরব করার কথা বলেন তিনি।