৩৭০ লিটার তরল কোকেন মাটিচাপা

৩৭০ লিটার তরল কোকেন মাটিচাপা

মাদক ধ্বংস ও মাদকবিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবে র‌্যাব-৭ সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জব্দ হওয়া ৩৭০ লিটার কোকেন মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পতেঙ্গায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে এই কোকেন মাটিচাপা দেওয়া হয়।

তবে চট্টগ্রামে আসা এই কোকেনের আসল গন্তব্য কোথায় ছিল, তা দীর্ঘ অনুসন্ধানেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আটক হওয়া কোকেনের চালানটির চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় ছিল, ঘটনার পাঁচ বছর পরেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোকেন মামলা পরিচালনায় আমাদের নানামুখী চাপ সইতে হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হয়েছে। সব চাপ উপেক্ষা করে মামলাটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কোকেনের এই চালানটির চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় ছিল তা আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে এর সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্রের সন্ধান আমরা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইন্টারপোলকে জানানো হয়েছে।’

 এসময় মাদকের মরণ ছোবল থেকে যুব সমাজকে নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক একটি ভয়ঙ্কর নেশা। যিনি একবার এ নেশায় আসক্ত হবেন, তিনি আর বের হতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশে মাদক নির্মূলে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাদকের তৎপরতা বন্ধে তিন ভাগে কাজ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে মাদক ও জঙ্গিবাদে না জড়ায়, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি।

অনুষ্ঠানে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সংসদ সদস্য মো. হাবিবুর রহমান, মো. ফরিদুল হক খান, পীর ফজলুর রহমান, এম আবদুল লতিফ, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. বেনজীর আহমেদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ২০১৫ সালে আটক হওয়া কোকেন এসেছিল দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ থেকে। চালানটি বাংলাদেশ হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অপর একটি দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, আমরা তা থামিয়ে দিয়েছি। এর সঙ্গে জড়িতদের র‌্যাব গ্রেফতার করেছে। এ মামলা থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, তবে সরকারের আন্তরিকতার কারণে তা হয়নি। মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৬ জুন রাতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তরল কোকেন সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার সিলগালা করেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ৮ জুন এটি খুলে ১০৭টি ড্রামের প্রতিটিতে ১৮৫ লিটার করে সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। তেলের নমুনার প্রাথমিক পরীক্ষায় কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলে উন্নত ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

ওই বছরের ২৭ জুন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর জানায়, কেমিক্যাল পরীক্ষায় দুটি ড্রামে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে মাদকের ধারায় ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর খানজাহান আলী গ্রুপের মালিক নূর মোহাম্মদকে বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ। ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত ডিবি পুলিশের দেওয়া চার্জশিট ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে মামলাটি র‌্যাবকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। র‌্যাব-৭ মামলাটিতে নূর মোহাম্মদকে অভিযুক্ত করে চলতি বছর ৪ এপ্রিল মহানগর হাকিম আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী বিচারিক আদালত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে।