অশ্বিনী, বসন্ত, জীবনানন্দ, আলতাফ মাহমুদ এবং মুজিববর্ষ
গত কয়েকদিন ধরে পর্যায়ক্রমে এই কবিতার শহর, সংস্কৃতির শহর বরিশাল, বেশ ব্যস্ত ছিল একের পর এক জনসম্পৃক্ত সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে। যার শুরুটা ছিলো দক্ষিণ জনপদের শিক্ষার বাতিঘর অশ্বিনী কুমার দত্তর বাসভবন চত্ত্বর। একজন রাজনিতিক, সমাজসেবক, আইনজ্ঞ, শিক্ষক এবং সর্বপরি তিনি যে খেতাবে সব থেকে পরিচিত সেই মহান মানুষ মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের ১৬৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনকে কেন্দ্র করে। আয়োজন করেছিল অশ্বিনী কুমার স্মৃতি সংসদের। স্থান মহাত্মার বাড়ি বর্তমান সরকারি বরিশাল কলেজ চত্ত্বর। তিন দিনের অনুষ্ঠানমালা পূর্ণ ছিল নৃত্য, গীত, আবৃত্তি এবং কথামালায়। অজস্র মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়েছিলো অশ্বিনী মেলা প্রাঙ্গন।
অনেক কথা ছিলো আলোচকদের মুখে। তার প্রায় সবই ছিলো অতি প্রাসঙ্গিক। কেন এই কলেজের নামটি অশ্মিনী কুমারের নামে নয়, কেন সরাল দত্তের নাম খ্যাত পুকুরটি সুকৌশলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে, কেন এই চত্ত্বরে মহাত্মার নাম অংকিত আবক্ষ একটি ভাষ্কর্য স্থাপন করা যাচ্ছে না? এরকম অজস্র প্রশ্ন। যা ছিলো, আছে এবং থাকবে। আর থাকবে বলেই একদিন ঠিকই এর উত্তর তৈরি হয়ে যাবে।
হয়তো সেদিন এই স্মৃতি সংসদের স্মেহাংশু কুমার কিংবা রোকন ব্যাপারির নাম নিতে ভুলে গিয়ে আমরা আমাদেরই নাম উচ্চারণ করব। বলবো, না না কি বলো আমরা না থাকলে ওরা কি পারতো করতে? পারতো, পারছে, পারবে? তাই তো ওদের মুখে দ্রোহের উচ্চারণে শুনেছি যা বলতে শুনিনি কারো মুখে এর আগে। ওরা বলেছে স্যার সলিমুল্লাহর কথা। বলেছে কেন বাংলাদেশের আনাচে কানাচের মানুষ পাচ্ছে না উন্নয়নের ছোঁয়ার সাথে এই সকল নাম, কেন এমন মহাত্মার নাম নেই কোথাও? যার বিশাল বিত্ত বৈভব জুড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেলসহ আরো অজস্র প্রতিষ্ঠান। কেন শের-ই-বাংলার নাম, জেল অভ্যন্তরে যে চার নেতাকে হত্যা করা হলো নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, তাজউদ্দিন আহাম্মেদের নামের প্রচার নেই দেশজুড়ে? কেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেনানি আতাউল গনি ওসমানিকে নিয়ে দেশ ব্যাস্ত হয় না?
বাংলাদেশ নামক বাড়িটি যদি হয় বঙ্গবন্ধু তবে তার খুঁটিগুলো কি এরা নন? সেই খুঁটির যদি যথার্থ তালাপি না হয়, তবে ঘর নির্বিঘ্ন থাকে কেমন করে? স্বজন, চাটুকার আর শিখানো বক্তৃতায়। এই শেখানো বক্তৃতা দিয়ে কি শেষ রক্ষা হয়েছিলো পঁচাত্তরে, ভেঙে কি যায়নি ঘর, জাতি কি পিতাকে হারায়নি? এখন সময় বাংলাদেশ নামের স্থির অবিচল আস্থার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকী উদ্যাপনের। সবাই ব্যস্ত। পরিকল্পনা হচ্ছে অনেক, ততোধিক হচ্ছে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বাজেট। জানি না সেখানে কোন নীতি নৈতিকতার ভাবনারা যায়গা পেয়েছে কি না। কেউ বলেছে কি না এই মুজিব বর্ষের সিদ্ধান্ত হোক দেশ ভেজালমুক্ত হবে। আমরা স্বাস্থ্য এবং শিক্ষায় কঠোর নৈতিক অনুশিলনে মত্ত হবো। সড়ক হবে নিরাপদ চাঁদাবাজ মুক্ত। মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে এমন কিছু সিদ্ধান্তে উপনিত হোক দেশ, যার মাইলফলকে আরো একশত বর্ষ দূরে লেখা হবে এই শুদ্ধতা শুরু হয়েছিলো মুজিব বর্ষে শতবর্ষ আগে।
আমরা কথা বলছিলাম আশ্বিনী মেলা নিয়ে, যে মেলা শেষ হতেই আমরা বরিশাল কলেজ ছেড়ে হাজির হলাম স্বারস্বত বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। যেখানে শুরু হয়েগেছে প্রকৃতির রঙ অভিযাত্রার মহামিলন, বসন্ত উৎসব। আয়োজক বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদ এবং বরিশাল নাটক। আবারো মানুষের ঢল রঙে, ফুলে, রূপে, বাসন্তে বিকেলে। যেখানে সকলে মিলে গাইছে গান ‘আজ সবার রঙে রঙ মিশাতে হবে’। দীর্ঘ আঠাশ বছর যাবত মানুষের মনের প্রাণের প্রকৃতিতে মানবিক গুনাবলীর উন্মেষ ঘটানোর প্রত্যাশায় এই সংগঠন দুটি প্রতি বছর নিরন্তর ডেকে চলেছে ‘বাসন্তি বিকেলে এসো, স্নাত হব আনন্দ ধারায়’। মানুষ এসেছে রঙিন সাজে, ভরে গিয়েছে প্রাঙ্গন।
যদিও একদিন এই আয়োজন এমন রঙিন, এতটা বৃহৎ পরিসরে ছিলো না। ছিলো না এতটা প্রাঞ্জল এতো মানুষের উপস্থিতিতে এতটাই জৌলুসপূর্ণ। বনা উদীচীর এই বসন্ত উৎসব এখন আর শুধু তাদের কাছেই সীমাবদ্ধ নয়, এই উৎসব এখন ছড়িয়ে পরেছে সমস্ত নগরময়। এবারে তাদের আয়োজনে দুটি বিশেষ ব্যতিক্রম ছিলো। তিন দিনের আয়োজন তারা উৎসর্গ করেছে তাদের প্রয়াত অগ্রজ নারায়ন সাহা, সাবের আহাম্মেদ এবং একুশের পদকপ্রাপ্ত গুণিজন শ্রী নিখিল সেনের নামে। এমন আনন্দের দিনেও প্রায়তদের এভাবে স্মরণ করা সত্যিই অনন্য, অসাধারণ একই সঙ্গে ব্যাতিক্রমও।
আর এক ব্যাতিক্রম ছিলো উৎসবের শেষ দিনের আলোচনার প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক এস. এম. অজিউর রহমান। তিনি মঞ্চে বসে শুনছিলেন আয়োজকদের কথা। সেখানে একটি কথা ছিলো ‘একদিন আমরা এই বসন্ত উৎসবে আগত দর্শক-শ্রোতাসহ উপস্থিত সবার জন্য মুড়ি মোয়ার ব্যবস্থা করতাম। আজ আর তেমনটা পারছি না, নানাবিধ কারণে’। মুহূর্তে মাননীয় জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্ত নিলেন এবং ব্যবস্থা করলেন মোয়ার। তার এমন আন্তরিক উদ্যোগ বিপুল করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানালো উপস্থিত সকলে। এভাবেই হয়তো কোন মানুষ ক্ষণিকের কোন সিদ্ধান্তে মনের কোথাও যায়গা করে নেন। যেভাবে আমাদের অনেকরই এখনো মনে গেঁথে আছেন সাবেক এক জেলা প্রশাসক জনাব শহিদুল আলম। রয়ে গেছেন তার অতি দক্ষ সাংস্কৃতিক কর্ম উদ্যোগের জন্য, রয়ে গেছেন বনা, উদীচী বরিশালের স্থায়ী ঠিকানার ব্যবস্থা করে দিয়ে।
এভাবে রঙ বিদায়ের পালা ছেড়ে, ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই চির রঙের বিস্ময় কবি জীবনানন্দ দাশের ১২১তম জন্মদিনের আয়োজন শুরু হয়ে গেল। এ যেন সেই কথা ‘পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন। তখন জোনাকির রঙে ঝিলমিল’। ঠিক তেমনি জ্বলে উঠলো আলো সত্য, প্রেম, পবিত্রতার আধার ব্রজমোহন কলেজে জীবনানন্দ মেলায়। আয়োজক উত্তরণ সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ মেলাটিও তিন দিনের। গত চার বছর যাবত এ মেলার আয়োজন করছে তারা। উত্তরণ সম্ভবত এক বিশেষ ব্যাতক্রম। বাংলাদেশে আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে কি, যার বয়স ৩০ বছর অতিক্রম করেছে? একেবারেই সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের নেতৃত্বে যার পথ চলা। তাদেরও পথের দিশারী সত্য, প্রেম, পবিত্রতা। মহাত্বা অশ্বিনী কুমার দত্তের হাতে গড়া দক্ষিণ জনপদের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ এই ব্রজমোহন কলেজ। যাকে প্রকারন্তরে বলা হত বা হয় অক্সফোর্ড অব বেঙ্গল। সেই মহান বিদ্যাপিঠে জীবনানন্দ মেলায় এসে মেলাকে মহিমান্বিত করেছেন শহরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ক্ষেত্রের অজস্র গুণী মানুষ। সহযোগিতা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন এবং কলেজ প্রশাসন।
তিন দিনের এমন একটি সফল মেলার আয়োজন উত্তরণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য নিঃসন্দেহে একটি মহৎ বড় কাজ। যে কলেজের ছাত্র এবং শিক্ষক জীবনানন্দ দাশ, যার পথে পথে ছায়া রয়েছে মিশে প্রকৃতির, নির্জনতার, ধূসর, জোনাকির রঙে রঙিন বাংলা সাহিত্যের শুদ্ধতম এই কবির। সেই কলেজ ক্যম্পাসের অজস্র শিক্ষকের এমন একটি মহতি দায়িত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পারার ব্যর্থতার কথা মঞ্চে আলোচিত হয়েছে বারবার।
অস্বীকার করার কোন জো-নেই, এই বরিশাল যে মাটিতে জন্ম নিয়েছে অবিভক্ত বাংলার অন্যতম প্রধান রাজনীতিবীদ শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, অহিংস আন্দোলনের ধারক শিক্ষাব্রতী বিপ্লবী মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্ত, চারণ কবি মুকুন্দ দাশ, কামিনি রায়, জীবনানন্দ দাশ, বাঙালির অহংকার ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত কাজী গোলাম মাহাবুব, আমার ভাইয়ে রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানের রচয়িতা আব্দুল গফফার চৌধুরী, সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদ, আব্দুল লতিফ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, দার্শনিক আরজ আলি মাতব্বর সহ অজস্র গুণীর এই শহর।
সেই শহর সাংস্কৃতিতে শিক্ষক সমাজের কোন দায়িত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ থাকবে না তা কেমন করে হয়? শুধু ক্লাশ করা, স্টাফ কাউন্সিলে বসা আর বাড়ি যাওয়া, আর কিছু নয়? হয়, এমনটাই হয়, এভাবেই চলেন তারা। শুধু খেয়াল রাখেন প্রত্যক্ষ রাজনীতির বাইরে যারা সাহিত্য সংস্কৃতিতে নিজেদের প্রসারিত করতে চায় তাদের কি করে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ ব্যপারে তারা একেবারেই স্বতঃসিদ্ধ, অকৃত্রিম। তার পরেও এই জীবনানন্দ মেলায়ও কিছু ব্যতিক্রম ছিলো, ছিলো বেশ কয়েকজন শিক্ষকের মেধাভিত্তিক অংশগ্রহণ মূলক উপস্থিতি। মুক্তমনা ছাত্র ছাত্রীদের তা ভালো লেগেছে। কোন শিক্ষক এসেছিলেন তাঁর উপস্থিতিকে আঙুল উঁচিয়ে প্রকাশ ও প্রচার করাতে। তার পরেও একটি বিশেষ ব্যাতিক্রম ছিলেন এক শিক্ষক যিনি তার কাব্যগ্রন্থ জীবন এক জ্যামিতি এই অসাধারণ নামের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন উত্তরণ আয়োজিত জীবনানন্দ মেলার মঞ্চে। যা ভালো তাকে ভালো বলবার দায় আছে আমাদের সকলের। আর সেইটুকু সফলভাবে করতে পারলেই সফলতা পাবে জীবনানন্দ দাশের এই লেখা ‘তোমরা স্বপ্নের ঘরে চলে এসো, এখানে মুছিয়া যাবে হৃদয়ের ব্যাথা’।
যায় কি, পারি কি মুছিয়া ফেলিতে হৃদয়ের ব্যাথা? কে পারে, কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে? কবি জানতেন আমাদের চারপাশে এখন অদ্ভুদ আঁধারের জঞ্জাল। কবি জানতেন যে হৃদয়গুলিতে প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই তাদের পরামর্শ ছাড়া পৃথিবীটা বড়ই অচল। এ সত্য আর কত জানাবো জনে জনে? কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে এ সত্যই এখন সর্বত্রগামী। সব চুপ, কোন কথা নেই। কেউ বলে না, কেউ চলে না, কেউ টলে না। যেন অন্ধ, চোখ বন্ধ, হাত বান্ধা। ভালোবাসাহীন, বুক ঘৃণাহীন। শুধু হাপানো, শুধু ফাপানো, কথা কপচায়। এ সত্য আর কতবার জানাবো জনে জনে?
ব্রজমোহন কলেজে মেলার আয়োজন শেষ হওয়ার পূর্বেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পাঁচদিনব্যপি একুশের অনুষ্ঠানমালা। বাঙালির অহংকার একুশ। বাঙালির অস্তিত্ব নির্মাণের সুতিকাগার একুশ। যে শব্দ, যে ভাষা, যে গান আজ বিশ্বময়। এ বিষ্ময় বাঙালির, এ বিষ্ময় পৃথিবীর। সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউল একগুচ্ছ নাম, যাদের রক্তাক্ষরে রাজপথে লেখা হয়েছিলো বাংলা ভাষার নাম। আমরা চিরদিন অবনত থাকবো তোমাদের কাছে। একই সঙ্গে হয়তো থাকবো অপরাধীও বাংলা ভাষাকে সর্বত্রগামী করতে না পারার অপরাধে।
জানি না একুশ না এলে কেন আর ফিরে আসি না তেমন এই বেদীমুলে। ২০ তারিখেও দেখেছি শহীদ বেদীতে চলছে একের পর এক অনুষ্ঠান। চলছে গান, আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক। তবু চেয়ারগুলো যেন খালিই পরে আছে? আর একুশের সন্ধ্যায় দেখলাম জায়গা নেই দাঁড়াবার। যেমন ছিলো না গত রাত্রে ঠিক ১২টা থেকে তার আগে ও পরে। যেন প্রতিযোগিতা শ্রদ্ধার নয়, আগে যাওয়ার। কার থেকে কে কত বড় সেটা মেপে দেখবার! অসহায় শহীদ মিনার, অসহায় ঘোষণার মাইক, অসহায় সালাম, রফিক, সফিক, জব্বার। অসহায় রোভার স্কাউট, অসহায় শৃঙ্খলায় বাঁধা বাঁশের বেড়া। অসহায় ফুল, ফুলের চাক। অসহায় সমন্বয় পরিষদের ব্যানার টানাটানির দুর্নিবার দুর্বিপাক। এ সকল মিলায়ে গেল একুশের ভোরে নগ্ন পায়ের প্রভাত ফেরিতে শহীদ বেদীর পথে। তার পরেও সম্ভব নয় বোঝানো একুশের শ্রদ্ধা তার সার্থকতা প্রভাত ফেরিতে আল্পনা আঁকা পথে, একুশের প্রথম প্রহরে নয়।
তেমনি কোন শ্রদ্ধারই লেশমাত্র উচ্চারণে এলো না শহীদ আলতাফ মাহামুদ স্মৃতি পদক অনুষ্ঠানে। মঞ্চের আসন শুধুই ঠাসা ছিলো পদ আর পদবির ভারে। কি অসাধারণ ছক বেঁধে মঞ্চে যাওয়া। কি অসাধারণ কুটচালে বর্ষিয়ান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সমন্বয় পরিষদের উৎসের মানুষ সাবেক সভাপতি, বিজ্ঞ আইনজীবী, সাংবাদিক মানবেন্দ্র বটব্যালকে সমগ্র একুশের অনুষ্ঠানমালার বাইরে রাখা। তাও দেখলাম এবারের একুশের মঞ্চে। এ নিয়ে নানান প্রশ্ন শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক কর্মীদের মুখে। উত্তর বড় অদ্ভুদ। সাংস্কৃতির নেতারা আড়ালে আবডালে কখনো প্রায় প্রকাশ্যে ইঙ্গিত করে বলেছেন এ নির্দেশ মেয়রের। সাধারণ কর্মীরা বলছে, না। এ অযোগ্যতা নৈতিকতার কাছে পরাজিত সাংস্কৃতিক নেতাদের। জানি না আসল সত্যটা কি? সংস্কৃতিহীনতার এ দায় কার?
তবু তাকিয়ে আছি শহীদ মিনারের স্মৃতি পদক অনুষ্ঠানমালায়। একে একে কথা বললেন সবাই। দেখলাম অসাধারণ অদ্ভুতভাবে মূল বিষয়বস্তু আলতাফ মাহামুদের নাম মুখে না এনে শুধুই অতিথি স্তুতির মালা গেঁথে চললেন সবাই। কোথায় শহীদ আলতাফ মাহমুদ? কোথায় গফফার চৌধুরী? কোথায় গান? কোথায় তার সুর? অথচ এরা সবাই এই মাটিরই সন্তান। এ যেন নিশ্চিন্ত নিরবে পথ অতিক্রম করা এক অন্ধত্বের মিছিল!
সমন্বয় পরিষদ এবারের শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পদকের জন্য যাকে নির্বাচিত করেছেন তিনি বর্ষিয়ান সাংবাদিক, আইনজীবী, সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি অ্যাড. এসএম ইকবাল। নিঃসন্দেহে তিনি একজন গুণী মানুষ। তবে তার একটি সবিশেষ গুণ হলো নিরন্তর অন্যের গুণগান করা। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় চেয়ার এবং রাজনৈতিক চেয়ারের। যা শুনে এবারেও উপস্থিত কেউ বুঝতে পরেনি তাকে সংবর্ধিত করছেন কে? সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র, না কি সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ? যার একটিই দর্শন তা হলো ঝকঝকে যেকোন বর্তমান।
এবারের এই সংবর্ধিত আয়োজনে অনেকেই হোচট খেয়েছেন, শুনে তারা বলেছেন কি করে সম্ভব এটা? যখন শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংঙ্গীত বিদ্যালয়ের গল্পটি শহরে এখনো চালু আছে? যদিও সময়ের ব্যবধানে একটু ঘুরে গেছে আলোচনার লাইন। এখন কেউ কেউ বলছেন, না ক্রেতা না বিক্রেতা কেউই মূলত দোষী নয়। একজনের টাকা আছে কিনবেন একজনের টাকার প্রয়োজন সে বিক্রি করবেন। এদের কি দোষ? আসল দোষ মাঝখানে যারা বিষয়টি সম্পাদনে সহযোগিতা দিয়ে পয়সা কামিয়েছেন। আমি বলব, কি লাভ ওনাদের দোষী করে? মানুষের মধ্যেই তো সাদা কালো থাকে। আসলে মূলত দোষি হচ্ছি আমরা, যারা ক্রেতা, বিক্রেতা, আর মধ্যসত্বভোগীদের আর্থিক লাভের খাতার অংকটা বুঝতে পেরেছি। যাদের কারণে শহীদ আলতাফ মাহামুদ সংঙ্গীত বিদ্যালয়টি হজমগল্পের খবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে এই বিষয়টি চিরদিনের জন্য হয়তো হ্যাং হয়ে গেছে।