অশ্বিনী কুমারের নামে নামকরণের পক্ষের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হঠাৎ বিপক্ষে, কারণ অজ্ঞাত

অশ্বিনী কুমারের নামে নামকরণের পক্ষের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হঠাৎ বিপক্ষে, কারণ অজ্ঞাত

বেশিদিন আগের কথা নয়। ২০১২ সাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের নামে বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তনের দাবি তুলেছিলেন বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ। আওয়মী লীগ, বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন। দাবি আদায়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি বর্তমানে নামকরণের বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন দেখে হতবাক হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম ও সাধারণ নাগরিকরা। একই সঙ্গে বিভ্রান্তও হচ্ছেন। এই বিভ্রান্তি দূর হওয়া দরকার।

২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই স্মারকলিপিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ‘বরিশাল নগরীতে অবস্থিত সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত কলেজ রাখার দাবি’। বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদসহ ওই দাবিনামায় যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হঠাৎ করে রূপ পরিবর্তন করে গত বুধবার অশ্বিনী কুমার হলের সামনে মানববন্ধন করে এর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, সমন্বয় পরিষদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সরাসরি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা নাম অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ২০১২ সালে দাবির পক্ষে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখেযোগ্য তখনকার বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বরিশাল জেলা কমান্ডের কমান্ডার শেখ কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম বরিশাল বিভাগের সম্পাদক প্রদীপ কুমার ঘোষ, মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুসহ কয়েকজন সরাসরি উপস্থিত হয়ে বিরোধীতা করেছেন। উপস্থিত না থাকলেও বর্তমান সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ এবং সাবেক সভাপতি সৈয়দ দুলাল দুজনই আগের দাবির পক্ষে স্বাক্ষরকারী হয়েও বিস্ময়করভাবে বর্তমান নামকরণ বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষে অবস্থান নেননি। এটি বিভ্রান্তি ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোদ বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সদস্য সংগঠনের ভেতরেও। তাদের এমন আচরণে শহরের অনেকই এখন বিষয়টি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

২০১২ সালে সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে নেওয়া ‘বরিশাল সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত কলেজ রাখার দাবির পক্ষে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, একুশে পদক পাওয়া সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিখিল সেন, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মো. হানিফ, তখনকার বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. মানবেন্দ্র বটব্যাল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুরল হাসান খান, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অ্যাড. নজরুল ইসলাম চুন্নু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস হোসেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. গিয়াসউদ্দিন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি জেলা সভাপতি অ্যাড. একে আজাদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পদক কাজল ঘোষ, দৈনিক পরিবর্তন সম্পাদক ও সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি সৈয়দ দুলাল, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাড. লষ্কর নূরুল হক, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মহসিন মন্টু, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাড. আনিছ উদ্দিন আহম্মেদ শহীদ, সরকারী কৌশলী অ্যাড. কেবিএস আহমেদ কবীর, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা তরুন চন্দ, জাতীয় পার্টি সভাপতি ও শিক্ষক নেতা মহসিন উল ইসলাম হাবুল, গণফোরামের জেলা আহ্বায়ক অ্যাড. হিরণ কুমার দাস মিঠু, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এএইচএম সালেহ, খেলাঘর জেলা সভাপতি জীবন কৃষ্ণ দে, মতবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাংবাদিক মুরাদ আহম্মেদ, উন্নয়ন সংগঠক আনোয়ার জাহিদ, চ্যানেল আই প্রতিনিধি শাহিনা আজমীন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি মিসেস রাবেয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক নূরজাহান বেগম, অধ্যাপক শাহ শাজেদা, মানবাধিকার জোট সভাপতি ডা. সৈয়দ হাবিবুর রহমান, ব্লাস্টের সমন্বয়কারী অ্যাড. মো. খলিলুর রহমান, শিক্ষক সমিতি বরিশাল আঞ্চলিক শাখার সভাপতি দাসগুপ্ত আশীষ কুমার, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের নেতা ও গণশিল্পী সংস্থার সভাপতি শান্তি দাস, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. বিশ^নাথ দাস মুনশী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাড. গোলাম মাসউদ বাবলু, বরিশাল নাগরিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু বসু, অধ্যক্ষ তপংকর চক্রবর্তী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক অ্যাড. এসএম ইকবাল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান মিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আনিচুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক (বীরপ্রতীক), মুক্তিযোদ্ধা নূরুল আলম ফরিদ, অধ্যক্ষ সচীন কুমার রায়, বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বরিশাল সদর উপজেলা কমান্ডার মো. মোকলেছুর রহমান, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মামীমা মাসউদ মুন্নী, বানারীপাড়া আওয়ামী লীগ নোতা অ্যাড. সুভাষ চন্দ্র শীল, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশান্ত ঘোষ,সহ অনেকে।

উল্লেখ্য, পাকিস্তান সরকারের আমলে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনটি সরকার রিকিউজিশন করে এবং তিনি সর্বদা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন বলে তার বাসভবনে ব্রজমোহন কলেজের কসমোপলিটান ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৩ সালে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হওয়া বরিশাল নৈশ মহাবিদ্যালয়টি ১৯৬৬ সনে অশ্বিনী কুমার দত্তের বাস ভবনে স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নৈশ কলেজটিকে প্রথমে বরিশাল দিবা ও নৈশ কলেজে রূপান্তর করা হয়। পরে এটির নামাকরণ করা হয় ‘বরিশাল কলেজ’। কলেজটিকে ১৯৮৬ সনে জাতীয়করণ করা হলে কলেজটির নামাকরণ করা হয় ‘সরকারি বরিশাল কলেজ’। ১৯৯০ সনে অশ্বিনী কুমারের বাসভবনটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়। গত জানুয়ারিতে পুনরায় অশ্বিনী কুমার দত্তের নাম যুক্ত করার দাবিতে জেলা প্রশাসনের মাধ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট একই দাবি করা হলে বিষয়টি তদন্ত করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এরপরই মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তকে নিয়ে একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবন ও বাড়ি কারো কাছে বিক্রি হয়নি। ওই বসতবাড়ি সরকার একোয়ার করেছে। পরে ১৯৭০ সালে ১৯ আগস্ট বরিশাল নাইট কলেজের কাছে ৪০ হাজার ২৯৫ টাকা ২৪ পয়সার বিনিয়ম দেওয়া হয়। বর্তমানে তাঁর বাড়িতে থাকা সরকারি বরিশাল কলেজের নামের সঙ্গে অশ্বিনী কুমার দত্তের নাম যুক্ত করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এই দাবির বিপক্ষে একটি চক্র নামকরণের বিরোধিতা করে বিভ্রান্তি ছাড়াচ্ছে এবং বিষয়টি সাম্প্রদায়িকতার রূপ দিতে মরিয়া হচ্ছে।