আ.লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারি আমির হোসেন আমুর ৮০তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। সেদিনের আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় যাঁদের ভূমিকা সেসব ইতিহাস অনেকেরই জানা। মওলানা ভাসানীকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক এবং যৌথভাবে যুগ্মসম্পাদক নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও খন্দকার মোশতাক। আবার এই মোশতাকের নেতৃত্বেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। সে ইতিহাসের কথাও সবার জানা। আজকের আর সেই ইতিহাসের দিকে যাব না। আজ আওয়ামী লীগের অনেক অর্জনের কারিগরদের একজন আমির হোসেন আমুর জন্মদিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চাই।
১৯৫০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবং অন্যান্য প্রগতিকামী রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণে আমাদের মুক্তি সংগ্রাম। সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশকে পাকিস্তানীদের হাত থেকে মুক্ত করেছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালিকে মুক্তি সংগ্রামে উজ্জীবীত করেছে। এরপর ৯ মাস শসস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের বিজয়। পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগকে ৭১-এর মুক্তির পথে আনার প্রেরণা ছিল মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহাম্মেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, আ.হ.ম. কামরুজ্জামান। মাওলানা ভাসানী পরবর্তী সময় আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাপ গঠন করলেও অন্যরা আজন্ম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ নিবেদিতপ্রাণ এই রাজনীতিকদের আজো আমরা শ্রদ্ধা-মর্যাদার আসনে দেখতে পাই।
৫০-এর দশক থেকে আওয়ামী লীগের সহযাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ষাটের দশকে নতুন নতুন উদ্দমী ছাত্র-যুবকরা আওয়ামী রাজনীতির পতাকাতলে আসতে থাকে। যারা প্রকারন্তরে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে কাজ করেন। তারা সারা দেশের কলেজগুলোতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্র সংগঠন গড়া এবং কলেজ সংসদের নেতৃত্ব দিয়ে নিজেদের সাধারণ ছাত্রদের একজন হিসেবে উপস্থাপন করতে থাকেন। এসব উদ্দমী ছাত্রদের মধ্যে বরিশালের উল্লেখযোগ্য যারা তাঁদের একজন হচ্ছেন আমির হোসেন আমু। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুদিন-দুুর্দিনের অনন্য একজন মানুষ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক খাদ্য এবং শিল্পমন্ত্রী আলহাজ¦ আমির হোসেন আমু আজ ৮০ বছরে পদার্পণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ৭৫-এর নির্মম হত্যাকা-ের পর আওয়ামী যুবলীগকে পুনরুজ্জীবীত করা, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিকসহ নানা উপাধীতে ভূষিত করা যায় তাঁকে। বর্ষিয়ান এই নেতার জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকলো।
আমির হোসেন আমু ১৯৪১ সালের ১৫ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম ঝালকাঠিতে হলেও তাঁর ছাত্রজীবন এবং রাজনীতির উৎকর্ষের স্থান হচ্ছে বরিশাল। বরিশাল নগরের ভুতের বাড়ি (বর্তমান বগুরা রোড অপসো স্যালাইন) থাকতেন তিনি। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়ে নিজেকে ছাত্র সমাজের মাঝে পরিচিত করে তোলেন। এরপর আর পেছন ফেরেননি। ছাত্র রজনীতির মাঠ চষে চষে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। আঞ্চলিক রাজনীতি এবং পরে জাতীয় রাজনীতির কান্ডারি হিসেবে সমহিমায় উদ্ভাসিত হন আমির হোসেন আমু।
এক সময় বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের ছাত্র সংসদে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত। ১৯৬৩-৬৪ সালের সেই ধারা ভেঙে ছাত্রলীগের বিজয়কে সুনিশ্চত করেন আমির হোসেন আমু। ওই বছর কলেজ ছাত্র সংসদে আমির হোসেন আমু ভিপিসহ অধিকাংশ পদ লাভ করে ছাত্রলীগ। এরপর থেকে ব্রজমোহন কলেজে ছাত্রলীগের জয়জয়কার অবস্থা সৃষ্টি হয়। ছাত্র রাজনীতির মাঠে থাকা অবস্থায় ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সক্রিয় প্রচারণা চালন আমির হোসেন আমু। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৬৬-এর ৬ দফা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া, ৬৮’র আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬৯-এর গনঅভ্যুত্থান এবং ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখেন আমির হোসেন আমু।
১৯৭০ সালে নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে আমির হোসেন আমু এমপিএ নির্বাচিত হন। এরপরই জাতীয় রাজনীতির একজন হয়ে ওঠেন আমির হোসেন আমু। জাতীয় রাজনীতির নানা চরাই-উৎরাই দেখেছেন তিনি। দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের কান্ডারিদের একজন হয়ে ছিলেন এবং আছেন। দুঃসময়ে আওয়ামী লীগকে সঠিক পথে চলতে যে কজন নেতা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তামের মধ্যেও আমির হোসেন আমু অনন্য।
৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যতার পর আমির হোসেন আমুকে কারাভোগসহ নানা নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। ওই পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনেও তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এমনকি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তাঁর ভূমিকা অনন্য। অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী এই বর্ষিয়ান নেতা। সব ইতিহাস স্বল্পপরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয়।
তবে সব শেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউএ আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা থেকে তখনকার বিরোধী দলের নেতা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ সহাসিনাকে রক্ষা করতে যেকজন মানবপ্রাচীর গড়েছিলেন, আমির হোসেন আমু তাদের একজন। ৮০ বছর বয়সের একদিনও আওয়ামী লীগের বাইরে ছিলেন না এবং এখনও নাই। বর্ষিয়ান এই নেতার দীর্ঘজীবন ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। জন্মদিনে আবারো শ্রদ্ধা।