রাজনীতির শিকড়

মাথার উপরে নীল আকাশ। চোখের সামনে ধূসর ধোয়াচ্ছন্ন শীষাযুক্ত পৃথিবী। সেই বিষাক্ত পৃথিবী এখন অগ্রসরমান বিশাল বিত্ত বৈভবে মত্ত মানবকুলকে ঘিরে ফেলেছে। না, কোথাও কারো কোন বিকার নাই। ঘর, দেশ, পৃথিবীর সবাই নির্লিপ্ত, অন্ধ এবং বধির। এক অনাগত আগামী স্বচ্ছ, চকচকে এবং একই সঙ্গে বিষাক্তও বটে। সেই স্বচ্ছ একঘেয়েমি আগামীর অপেক্ষায় মানব কল্যাণের মৌলিকত্বে টলটলমান বিশ্ব থেকে পরিপূর্ণ মৌলিক অধিকারহীন মানুষ। পৃথিবীর মানচিত্রে জীবন্ত এবং সচল। একটি হোবারক্রাপ্টের দাম লাজ ভেগাস আমিরিকায় তিন লক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ ইউএস ডলার। ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশ বরিশালের দোয়ারিকার পারাপারে যে নৌকাটি ব্যবহৃত হচ্ছে আকারভেদে তার দামও তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এটি অতি ক্ষুদ্র একটি উদাহরণ। এরকম অজস্র বৈষম্যপূর্ণ উদাহরণ ধারণ করেই পৃথিবীটা কিন্তু চলছে। কেন, কিভাবে, কার হাত ধরে?
এখনো এই পৃথিবীর কোথাও, কোন না কোন দেশে মানুষ না খেয়েও মারা যাচ্ছে। এখনো নিজ কর্তৃত্ব বজায় রাখতে অতি উৎপাদিত ফসল প্রয়োজনে নষ্ট করছে কোন কোন দেশ। তবু ক্ষুধার্তের প্রয়োজনে কোথাও তা পাঠাতে উদ্যোগী হচ্ছে না। প্রশ্ন আছে পৃথিবী জুড়েই। কে, কিভাবে, কার হাত ধরে, এমন হচ্ছে-কেন? উত্তর এর খুবই সহজ, উত্তরও আছে জানা সকলের। যার নাম ‘রাজনীতি’। এর আছে নানান ধারা। যেমন, অর্থনৈতিক রাজনীতি, ভৌগলিক রাজনীতি, এবং সাংস্কৃতিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। এমন কাজ, এমন জঘন্য কাজ রাজনীতি করে? তারও উত্তর হ্যাঁ, অবশ্যই করে! এমন কথা মানতে কষ্ট হয় তাদের, যারা রাজনীতি করেন না এবং রাজনীতি বোঝেন না। পৃথিবীর সকল শ্রেষ্ঠ, অনিষ্ট, এবং নিকৃষ্টতম সকল কাজের প্রবক্তা, উদ্যোক্তা, সৃষ্টিকারী এবং প্রয়োগকারীর নাম রাজনীতি। আর এই জড় রাজনীতি শব্দের চাকা সচল থাকে যাদের হাত ধরে তারাই রাজনীতিক বা রাজনীতিবীদ। এ হচ্ছে সকল নীতির রাজসিক নীতি অর্থাৎ রাজনীতি।
এক কথায় বিষয়টাকে এভাবে বলা যায় পৃথিবীর বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সমাজনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো রাজনীতিবীদদের মহান কার্যাবলী, অর্থাৎ রাজনীতি। আজকে আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সাংস্কৃতি, সভ্যতা সকলই রাজনীতির দান। এই স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ সেও মূলত এক সফল রাজনীতিরই ফসল। যে রাজনীতির সফল শ্রেষ্ঠ নেতৃত্ব বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান আজন্ম স্বাধীকার সংগ্রামী বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিষ্ঠুর রহমান। যার স্বাধীকার সংগ্রামের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সফল সঙ্গী ছিলেন চার জাতীয় নেতা। জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জনাব তাজ উদ্দিন আহাম্মেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, আ.হ.ম. কামরুজ্জামান। রাজনীতি নামক বিষয়ের চরম উৎকর্ষ সাধনে দিনাতিপাত করেছেন তারা। অভিশপ্ত ১৫ আগস্ট জাতির জনকসহ তার পরিবারের হত্যাযজ্ঞের অব্যহতি পরেই এক অসভ্য কালো রাজনীতি ৩ নভেম্বর ৭৫-এ জেল অভ্যান্তরে হত্যা করে এই চার নেতাকে। বঙ্গবন্ধুর এই চার অকৃত্রিম সহচরসহ রাজনীতিক পৃথিবীব্যাপি জাগিয়ে তুলেছিলো বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্নিস্ফূর্লিঙ্গ। মূলত যাদের হাত ধরেই লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা উড়েছে তদানিন্তত পূর্ব পাকিস্তানের নীল আকাশে। যারা মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে গড়ে তুলেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকার। না, তেমন করে এই দেশে তাদের অবস্থান সমুজ্জ্বল উচ্চারিত হয়নি কখনো, কোনখানে। বাঙালি জাতির জয়গাঁথার পর্যায়ক্রমিক কাহিনী বিন্যাসের এই ভুল সযতনে লালন করছে ইতিহাস। ইতিহাস লিখবে একদিন এই সত্য। এই অযোগ্য রাজনীতির কথা। কারো অনুরোধ কিংবা ক্রোধ, ইতিহাস সেদিন মানবে না। ৪৭, ৫২, ৬২, ৬৪, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১ এই যে ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এবং নৌকার। সেখানে বঙ্গবন্ধুসহ তার যোগ্য মাল্লাদেরও খুঁজে পেতে হবে। তবেই তো শক্ত হবে আওয়ামী লীগ ও তার অগ্রগামী চলার গতিপথ। স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্যাপনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের স্বাধীন স্বার্বভৌম সীমান্তে সকল আওয়ামী প্রহরীরা দেশপ্রেমিকরা যেন যথার্থই সম্মানিত থাকে। অর্থে-বিত্তে নয়, মনের জৌলুসে। কোন নেতার কোপানলে নয়, তাদের উদার আলিঙ্গনে। এই সম্মান যেন বিশেষায়িত করে সকল অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধাদের। আর স্বাধীন বাংলাদেশর অনুসারী প্রতিটি নাগরিককে।
এ কথা অনস্বীকার্য স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকল্প থেকে আজকের উন্নয়নের এই যে বাংলাদেশ, তার সর্বত্রই রাজনৈতিক উৎকর্ষতার সিঁড়ির সকল ধাপ মূলত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তাদের আছে কর্ম সমালচনা, আছে বিষোদগার, আছে খিস্তি খেউর, আছে স্বজনপ্রীতি, আছে পারিবারিক বলয়, এ সকল কিছুরই সত্যতা আছে। আর এ সমস্ত কিছুর সকল সত্যতা ছাপিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেখানে নির্ধারিতভাবেই সত্য, শ্রেষ্ঠ, তা হলো তাদের স্বাধীন সূর্য প্রিয়তা, লাল সবুজের পতাকাপ্রিয়তা, আর আমার সোনার বাংলা প্রিয়তায় ভরা দেশাত্মবোধ।
এই অগ্রোযাত্রার সীমা পেরিয়ে, অজস্র ঘাত-প্রতিঘাত, জেল জুলুম অতিক্রম করে যারা আজকের আওয়ামী লীগের এই সোপান রচিত করেছে, তারা আজ অনেকেই এই পৃথিবীতে নেই। এই পৃথিবীর আলো বাতাসের মায়া কাটিয়ে আওয়ামী লীগকে পথ দেখিয়ে দিয়ে তারা চলে গেছেন অনন্তের পাথে। সময়, বয়স, রোগ, বার্ধক্য, গুলি, বোমা ধীরে ধীরে তা নিশ্চিত করেছে। যাদেরকে একদিন আওয়ামী লীগের ব্রান্ড বলা হতো। জনাব কোরবান আলী, জনাব আব্দুল মালেক উকিল, জনাব আব্দুস সামাদ আজাদ, জনাব জিল্লুর রহমান, এস.এম. কিবরিয়া, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল জলীল, মেয়র হানীফ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। এই সম্মনিত ব্রান্ডের কাতারে হয়তো আছেন আরো অনেক অজস্র নাম। আমার না জানার অযোগ্যতা এই সম্মানিত নামের তালিকার পূর্ণতা দিতে পারলাম না। আমি দুঃখিত, ক্ষমা প্রার্থী। যদি আপনাদের মনে কোন নাম স্মরণে আসে তাকে উচ্চারণ করে নিশ্চই এই তালিকার পূর্ণতা দেবেন।
আমাদের দরোজায় এসে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের ৪৯তম বিজয় দিবস। আর মাত্র এক বছর পরেই বাঙালির বিজয় অর্জনের ৫০ বছর, সূবর্ণ জয়ন্তি। একই সঙ্গে এই বিজয়ের কামাল পাশা, আয়োজক, নির্দেশক, উপস্থাপক বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০ তম জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশ উদ্যাপন করছে তার ১০০ তম জন্মদিন, দেখছে পৃথিবী।
সেই মাহেন্দ্রক্ষণের পূবেই আমাদের খুঁজে দেখা দরকার, দায়িত্ব। তার সঙ্গের সঙ্গী সাথীরা কে কোথায়? তার আদর্শের সেই সকল রাজনৈতিক সৈনিকেরা যারা প্রায় সকলেই এখন স্পর্শ করেছে অন্তত ৮০তম জন্মদিন। কতজন আছেন তারা, এই বাংলাদেশের ব্যাপক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা এই দেশে? যারা জীবনের ৮০ স্পর্শ করেছে জেল-জুলুম, হুলিয়া, গুলি, বোমা, গ্রেনেড ইপ্লিন্টারের আঘাত সয়েও। কতজন তারা, যারা তাদের রাজনৈতিক জীবনে একটি বারের জন্যও নৌকার হাল ছাড়েননি, শত লোভ লালসা ক্ষমতার হাতছানির পরেও!
আমরা যারা পদ্মা অতিক্রান্ত দক্ষিণ জনপদের মানুষ। তারা অন্তত দুই অবিস্মরণীয় রাজনীতিকের নাম অত্যন্ত গর্বভরে উচ্চারণ করতে পারি। সে পারি স্বাধীন বাংলাদেশে এবং অবিভক্ত বাংলায়। এই দক্ষিণ জনপদের এই দুই নাম চীরদিন ভাস্বর হয়ে থাকবে দেশের রাজনীতির ইতিহাসে। তার অন্যতম একজন শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক, অন্যজন মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্ত। আজকের এই বাংলাদেশ তার যে রাজনৈতিক পরম্পরা তার পূর্বসূরিও কি তারা নয়? তাদের সেই রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭-এর পর দেশ বিভাগ পরবর্তী ৫২, ৬৯, ৭০, ৭১ যে বাংলাদেশ, তার অভ্যুদয়ের সেই অমিত সংগ্রামের অনন্য দিক নির্দেশক নিরন্তর সংগ্রামী এই দক্ষিণ জনপদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথ চলার কান্ডারী। বিস্ময়কর রাজনীতিক যাদেরকে এখনো বলা চলে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কম্পাস। সেই দুই অনন্য অসাধারণ রাজনৈতিক, দেশপ্যাপী যাদের পরিচিতি। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জ¦লজলে উজ¦ল দুই ব্রান্ড রাজনৈতিক জ্যোতিষ্ক। সর্বজনাব বর্ষিয়ান রাজনৈতিক জনাব আলহাজ¦ আমীর হোসেন আমু এবং জনাব তোফায়েল আহাম্মেদ।
আজ বাংলাদেশে ৪৯তম বিজয় দিবসে কেনই যেন মনে হলো, সারা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এখনো এমন অনুকরণীয় বিস্ময়কর রাজনীতিবীদ যারা রয়েছেন, তাদের জীবন বৃত্তান্ত দেশব্যাপী উপস্থাপিত হোক। রাষ্ট্র তার রাজনৈতিক স্বকীয়তার বিরল যোগ্যতর এই মানুষদের দেশাত্ববোধের কর্মধারা তুলে ধরুক। প্রমাণিত হোক প্রতিদিন বাংলাদেশ নামক বাড়িটা অনেকগুলো খুঁটির উপরে দাঁড়ানো। সারা দেশব্যাপী এই কঠিন, কঠোর নৈতিক রাজনৈতিক খুঁটিগুলোর কর্মগুণের উপরই মূলত দাঁড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং বাংলাদেশ।
আজ বড় সাহস করে কিংবা বলা চলে দায় অনুভব করে এমন একজন অনন্য অসাধারণ রাজনীতিকের কর্মজীবন উপস্থাপনের চেষ্টা করতে বড় ইচ্ছে হয়। আমি যাকে নিয়ে লিখবার চেষ্টা করছি তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্ধারিত মানুষ, নির্ধারিত রাজনীতিবীদ জনাব আলহাজ¦ আমীর হোসেন আমু। আমি বিশ্বাস করি প্রজন্মের রাজনীতি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জনে এমনটা হওয়া খুবই দরকার। আজ আমি একজনকে নিয়ে লিখবার চেষ্টা করছি। আগামীকাল নিশ্চয়ই অন্য কোথাও অন্য কোন নেতাকে নিয়ে লিখবেন অন্য কেউ। এমন বিষয়টি দেশের সকল ক্ষেত্রেই উন্মোচিত হওয়া উচিত। তা না হলে হারিযে যাবে বাস্তবতা। হারিয়ে যাবে সত্য, হারিয়ে যাবে যোগ্যতা, পরিশুদ্ধতা, হারিয়ে যাবে সকল কর্মের উৎকর্ষতা। সকল সময় শুধু চন্দ্র সূর্যের বন্দনায় অন্ধকারেই থেকে যাবো। জানা হবে না পূর্ণ জ্যোতিষ্কমন্ডলের খবর।
আমার খুবই ইচ্ছে ছিলো এই রাজনৈতিক নেতার মুখোমুখি হয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া। আমার ভিতরে তাগিদ ছিলো, কিন্তু বাইরে এই ইচ্ছে প্রকাশের কোন সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সে অযোগ্যতা আমার এবং আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের বৃত্ত ঘিরে রাখেন যারা তাদের! তাকে অতিক্রম করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। যদি তেমনটা হতো তাহলে অবশ্যই আমার এই লেখার শুরুতে আমি লিখতে পারতাম এমন কিছু প্রশ্ন, এবং সেই প্রশ্নের উত্তর ‘আপনি কখন, কেন, কিভাবে, কার হাত ধরে অথবা কার প্রেরণায় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন? আপনার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে ৭৯ তম জন্মদিন পর্যন্ত, রাজনীতির যে চলমান পথ অতিক্রম করেছেন তার গুণগত কোন অবনতির বিষয়টি আপনাকে চিন্তিত করে? অথবা রাজনীতি আজ আর দেশাত্ববোধে উদ্বুদ্ধ ত্যাগের কোন অনুশীলন নয়- দ্বিমত পোষণ করবেন? অথবা রাজনীতি এখন ঠিকাদারীর অপর নাম কি বলবেন? অথবা রাজনীতি এখন একটি অবসরহীন জ¦লজ¦লে উপার্যনক্ষম পেশা- বিষয়টিকে আপনি কেমন করে দেখেন’?
না, বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির ক্ষেত্রে এমন প্রবীণ রাজনীতিবীদদের কী পর্যবেক্ষণ, সেটা জানবার মত পথ, পরিস্থিতি, উপলক্ষ তৈরি করতে আমি পারিনি। তারপরেও যখন যেখান থেকে যতটুকু সংগ্রহ করতে পেরেছি তার জীবন, বেড়ে ওঠা, রাজনৈতিক কর্ম প্রবাহ, সেও তো অনেক, বিস্ময়কর, ঈর্ষণীয় এবং অবশ্যই অনুকণীয়ও বটে।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী, সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর ৮০তম জন্মদিন আজ। ১৯৪১ সালের ১৫ নভেম্বর ঝালকাঠির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের জন্মদিনে কোন আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও হয়ত রাজধানীর ইস্কাটনের বাসভবনে ফুলের শুভেচ্ছা জানাবেন তার অসংখ্য ভক্ত-অনুসারী ও দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। প্রিয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানাবেন জন্মদিনের কেক কেটে। নিশ্চয়ই বিষয়টি করোনাকালীন সময় বিবেচনায় রেখে সংক্ষিপ্তই হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহসান্নিধ্য লাভ করা এই নেতা ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর কেবল দীর্ঘ কারা নির্যাতনই ভোগ করেননি, আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে স্বদেশে ফিরিয়ে আনতে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনে তিনি অগ্রভাগে ছিলেন। ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যুবলীগ পুর্নগঠনেও তার ভূমিকা অনেক। আমীর হোসেন আমু ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ, ভাষা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মনোনীত হন। তিনি ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালের সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হন তিনি। ১৯৬৫ সালে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৬৮ সালে বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। আমির হোসেন আমু ১৯৬৫ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৬সালে ৬ দফা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের অন্যতম রূপকার হিসেবে প্রচারের দায়িত্ব পালন করেন।
আমির হোসেন আমু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাঠ শেষ করে আইন পেশার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে সম্পৃক্ত হন। তিনি ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালী, যশোর ও ফরিদপুরসহ পাঁচ জেলায় মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে ঝালকাঠি ও রাজাপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আমির হোসেন আমু আওয়ামী যুব লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার পর তিনি যুবলীগকে পুনরুজ্জীবীত করতে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৮ থোকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব প্রলন করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল পথচলা এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনার প্রথম শাসন আমলে (১৯৯৬) খাদ্যমন্ত্রী ও বিগত শাসন আমলে (২০১৪) শিল্পমন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ১৪ দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন এই বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা। তাঁর জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।