আওয়ামী লীগ ও বিজেপি এশিয়ার আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জঙ্গিবাদ দমনে একসঙ্গে কাজ করবে

বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জঙ্গিবাদ দমনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লক্ষ্য অভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার দুই ঐতিহ্যবাহী দল এ বিষয়ে একযোগে কাজ করবে। দুই দেশের স্বার্থ রক্ষায় বিজেপি ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে কাজ করবে। ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখন এক নতুন উচ্চতায়।’
বিজেপির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। আজ সোমবার সকালে বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতির নয়াদিল্লির নিজ বাসভবনে এই বৈঠক হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে গত প্রায় ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নের ভূঁয়সী প্রশংসা করেন জে পি নাড্ডা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সংসদ সদস্য এরোমা দত্ত ও মেরিনা জামান।
ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি ও প্রবীণ রাজনীতিবীদ জে পে নাড্ডার সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে এই বৈঠকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু স্থান পায়।
শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের ভূঁয়সী প্রশংসা করে জে পি নাড্ডা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন সব উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় দৃষ্টান্ত, যা দেখে আমরাও খুশি। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাংলাদেশেই নয় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বর্তমান সরকারের আমলে দই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর সমাধান হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে, যা দুই দেশের বন্ধুত্বের মাত্রাকে আরও শক্তিশালী করেছে। আমরা এ সম্পর্ক ধরে রাখতে দুই দেশের মধ্যকার সরকারের চলমান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই।’
বিজিপি সভাপতির এই আশাবাদকে বাস্তবে রূপ দিতে সফররত আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দও একই সুরে কথা বলেন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জঙ্গি দমন এবং উন্নয়নে আগামী নির্বাচনের ফলাফল প্রভাব ফেলবে।’
বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের কাছে প্রতিবেশী প্রথম। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেকটা আবেগ ও বন্ধুত্বের। আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা ঐতিহাসিক। আমরা চাইব, আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলে প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে।’
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এই সফর ভারতের রাজনীতি পর্যবেক্ষক মহলে বেশ গুরুত্ব বহন করছে।
বিজেপির সভাপতির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকের আগে দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের আলাদা বৈঠক হয়। সেখানেও অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনায় দুই দেশ ও দুই রাজনৈতিক দলের বন্ধুত্বের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
বৈঠকে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিনোদ তড়ে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যেকোনো সময়ের চেয়ে অন্য মাত্রায়, যা এক সোনালি অধ্যায়। দুই বন্ধুপ্রতীম দল সবসময় এ সম্পর্ক অটুট রাখতে কাজ করে যাব।’
পরে দেশটির জাতীয় সংসদ ভবনে ভারত সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও সফররত আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সরকারের আমলে দুই দেশের মধুর সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আলাদা।’