আগে প্রয়োজন শের-ই-বাংলা মেডিকেলের জরুরী চিকিৎসা

আগে প্রয়োজন শের-ই-বাংলা মেডিকেলের জরুরী চিকিৎসা

নানা সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেচাচিম)। প্রয়োজনের এক চতুর্থাংশ জনবল দিয়ে ধুকে ধুকে চলছে দক্ষিণের উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকটের কারনে পুরো হাসপাতাল পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগারে। এমন অবস্থায় আগে প্রয়োজন সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা প্রয়োজন।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব ধরণের রোগ পরীক্ষার উন্নত মানের যন্ত্রপাতি থাকলেও সেগুলোকে বিকল করা রাখা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির একটি অংশ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় সিন্ডিকেট করে সচল মেশিনগুলো অচল করে রাখছে তারা। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম থাকলেও তাদের জন্য ডাক্তার ভিজিটের সময় বেঁধে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

করোনা প্রদুর্ভাব দেখা দেয়ার আগে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকতো ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ পর্যন্ত। করোনার কারণে রোগী কিছুটা কমেছে। গতকাল শুক্রবার ভর্তি ছিলো ১ হাজার ৬৬৮ জন রোগী। ২০১০ সালে প্রধনমন্ত্রী শেষ হাসিনা এই হাসপাতালটিকে ৫০০ শয্যা থেকে ১ হাজার শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা দিলেও সে অনুযায়ী জনবল কাঠামো পাশ কিংবা নিয়োগ হয়নি এখনও।

৫০০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালে ২৩৮জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৯৮জন। এক হাজার শয্যা হাসপাতালে প্রয়োজন ৪৭৬জন চিকিৎসক। ৫০০ শয্যার হিসেবে সেবিকা কর্মরত আছেন ১ হাজার ২০০ জন। ১ হাজার শয্যায় প্রয়োজন ২ হাজার নার্স। ৫০০ শয্যা হাসপাতালে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির ৩৬৫ পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ২৪০জন। অথচ প্রয়োজন ৭৩০জন কর্মচারী। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির বেশীরভাগ কর্মচারী বয়োবৃদ্ধ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম। এ কারণে হাসপাতালের ২৭টি ওয়ার্ড, বাথরুম-টয়লেট, অপারেশন থিয়েটার, ডাক্তার কক্ষ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হচ্ছে না ঠিকভাবে। ওয়ার্ডগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরা এবং দুর্গন্ধময়। প্রয়োজনের তুলনায় এক চতুর্থাংশ ডাক্তার থাকায় রোগীদের অভাব-অভিযোগ নিত্যদিনের। 

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত রোগ পরীক্ষার ভারী যন্ত্রপাতিগুলো বিকল রয়েছে বছরের পর বছর ধরে। করোনাকালের শুরু থেকে হাসপাতালে রোগ পরীক্ষার যন্ত্রপাতিগুলো সচল করার জোড়ালো দাবী উঠলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। ক্যান্সার চিকিৎসার কোবাল্ট ৬০ মেশিন, এমআরআই, ২টি সিটি স্ক্যান মেশিন এবং এনজিওগ্রাম মেশিন দির্ঘ দেড় বছরের বেশী সময় ধরে বিকল। ৪টি এক্সরে মেশিনের ২টি সচল থাকলেও রোগীর চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত আল্টাসনোগ্রাম পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। একটি মেশিনে প্রতিদিন ১০টি আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা হলেও চাহিদা থাকে ৫০ থেকে ৬০টি। মেশিনের সক্ষমতা কম থাকায় অন্য রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া উপযুক্ত মেশিন না থাকায় প্যাথলজি বিভাগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয় না মেডিকেলে। হাসপাতালের এক শ্রেণির ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ কারণে তারা সচল মেশিন অচল করে রোগীদের নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ব রয়েছে মেডিকেলে। তবে তাদের জন্য দুপুর ১টার পর ডাক্তার ভিজিটের নির্দেশনা রয়েছে। এর আগে মেডিকেলে প্রবেশ করলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে রয়েছে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা। 

মেডিকেলের নানা সমস্যা ও সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, সকল সংকট এবং সমস্যার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিকল যন্ত্রপাতি সচল করার প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞান সম্পন জনবল নেই মেডিকেলে। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে বিকল মেশিন সচল করতে হবে। অথবা নতুন মেশিন দেয়া ছাড়া রোগ পরীক্ষা করার কোন উপায় নেই বলে তিনি জানান।