আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকে কাতর বরিশাল

একুশের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি’ এর স্রস্টা ভাষা সংগ্রামী সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকে কাতর তার গ্রামের বাড়ি মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া সহ গোটা এলাকার মানুষ। তার অমর সৃষ্টিই চিরকাল তাকে মানুষের হৃদয়ে বাঁচিয়ে রাখবে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। এদিকে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা।
বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আফজালুল করিম বলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরী শুধু মেহেন্দিগঞ্জের নয়, সারা বাংলাদেশের একজন কৃতি সন্তান। তার মৃত্যু সংবাদে সমগ্র মেহেন্দিগঞ্জ তথা বরিশালের মানুষ ভারাক্রান্ত এবং ব্যথিত। তিনি মুক্ত চিন্তার মানুষ ছিলেন। তার লেখনীতে বঙ্গবন্ধু এবং স্বাধীনতার কথা বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নজমুল হোসেন আকাশ বলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে সারা বরিশালের মানুষ শোকহত। তার মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। যা কোনদিন পূরণ হবার নয়। তিনি ছিলেন সৃষ্টিশীল মানুষ। ভাষা আন্দোলনে তার রচিত গানটি বাংলাদেশের মানুষের শ্রেষ্ঠ উপহার। এই গানটি তাকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বরিশাল সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে বাঙালী জাতি একটি নক্ষত্র হারিয়েছে। বাঙ্গালী সংস্কৃতি বা বাঙ্গালী জাতীয়াতাবাদে বিশ্বাসী মানুষগুলো তাদের পরম আত্মিয় হারিয়েছে। তিনি বাঙ্গালী সাংস্কৃতির মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
এদিকে ভাষা সৈনিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী মর্যদা) আবুল হাসানাত আবদুল্রাহ এমপি, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সদর আসনের এমপি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক, সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা।
প্রখ্যাত কলামিষ্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বেরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া জমিদার বাড়িতে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মিডলসেক্সের এজোয়ারের মেথুইন রোডের ৫৬ নম্বর বাসায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন।
১৯৭৪ সালে তার স্ত্রী বিয়োগ হয়। দাম্প্রত্য জীবনে ৪ মেয়ে এবং ১ ছেলের জনক ছিলেন তিনি। গেল করোনা প্রকোপের সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার এক মেয়ের মৃত্যু হয়। সব শেষ তিনি গ্রামের বাড়ি উলানিয়া এসেছিলেন ২০১৮ সালে উলানিয়া করোনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতে তাকে দেয়া স্থানীয় সংসদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। উলানিয়া জমিদার বাড়ি তার পৈত্রিক বাড়ি। ব্যক্তিগতভাবে তার ভিটি আছে তবে সেখানে কোন ঘর নেই। বাড়িতে তার পরিবারের কেউ থাকে না। চাচাতো ভাইদের পরিবার থাকে গ্রামে। ঢাকার মীরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে প্রয়াত স্ত্রীর কবরের পাশে আবদুল গাফফার চৌধুরীর কবরের জায়গা নির্ধারিত (তার অসিয়ত অনুযায়ী) আছে বলে জানিয়েছেন তার চাচাতো ভাই মিল্টন চৌধুরী।