দ্বিতীয়বারের মতো ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে। ধর্মভিত্তিক দল হলেও বিজেপি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিবিড়। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা ধাক্কা লাগে। তখনকার বিএনপির ধারণা হয়েছিল বিজেপি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও একটা পরিবর্তন আসবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। মোদি সরকার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সহযোগী হয়ে কাজ করার আহ্বান জানায়।
মোদি সরকার এবং আওয়ামী লীগ সরকার একজোট হয়ে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট গঠনেও সমান ভূমিকা রেখে চলে দুই দেশ। দুইদেশের মধ্যে অমীমাংসিত বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরও হয় বিগত পাঁচ বছরে। তিস্তা ও ফারাক্কার পানি ন্যায্য হিস্যা নিয়েও কথা হয়। তিস্তা চুক্তি হতে হতেও হয়নি। বলা হয় তখন তিস্তা চুক্তিতে বাধসাধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। তবে এবার মোদি সরকার ক্ষমতায় আসায় আবারো তিস্তা চুক্তি আশা জাগাচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও মোদি সরকারকে আগাম স্বাগত জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার মনে করছে দ্বিতীয় মেয়াদে বিজেপি ক্ষমতায় আসায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু অমীমাংসিত বিষয়ে সুরাহা হবে। গত ৫ বছরে বিজেপি ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ভালোই ছিল। এবারও সেই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের জনগণের ভারতের কাছে বর্তমানে অন্যতম দাবি হচ্ছে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন।
বিজেপি মৌলবাদী চিন্তা-চেতনার দল হলেও বাংলাদেশ সরকার ভারতের জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ। কেবল ভারত নয়, যে কোন দেশের জনগণ যাকেই ভোট দিয়ে জয়ী করবে, আওয়ামী লীগ তাকে স্বাগত জানাবে। গত পাঁচ বছর বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের জায়গাটি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তবে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় আছে এবং তা বজায় থাকবে।
বাংলদেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত চুক্তি সম্পাদনে যে সরকার উদ্যোগ নেবে তাদের প্রতি সমর্থন থাকবে বাংলাদেশের জনগণের। আমরা আমদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাস করি। আমরা চাই, ব্যবসা, বন্দরসহ সকল ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নরেন্দ্রো মদির সরকার আবারো ক্ষমতায় আসায় তিস্তা চুক্তির জট খুলবে। মোদি সরকার বাংলাদেশের প্রতি দেওয়া পতিশ্রুতি এবার বাস্তবায়ন হবে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মতে, বিজেপি এখন রাজনীতির চেয়ে রাজনৈতিক অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেয় বেশি। নরেন্দ্র মোদিও ব্যবসা-বান্ধব বলেই সবাই জানেন। গত ৫ বছরে বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও ভারতের বিজেপির রাজনীতিকদের সঙ্গে বোঝাপড়ার সম্পর্ক রয়েছে। ফলে বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন যে সম্পর্ক তাতে টানাপোড়েনের সম্ভাবনা নেই। তাই অমীমাংসিত চুক্তি সম্পাদন হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
আমরা চাই, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো নিবিড় হোক। ভারত সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানেও আমাদের পাশে দাঁড়াক। একই সঙ্গে তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন করে সম্পর্কে ভীত আরো দৃঢ় করবেন। আমরা ফারাকা ও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা যাতে পেতে পারি তার পথ সুগম করবেন বিজেপি সরকার।