আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মুখে ১৫ আগস্টের নির্মম স্মৃতি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের নির্মম ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখে শুনে আবেগতড়িত হয়ে পড়েন শ্রোতারা। সেদিনের সেই ঘটনা বর্ণনা করেন তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে (প্রত্যক্ষদর্শী) বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি (মন্ত্রী পদমর্যদা) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, তার স্ত্রী সাহান আরা বেগম, ক্রিডেন্স ব্যান্ড দলের সদস্য খ ম জিল্লুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন।
গতকাল শনিবার বরিশাল দুপুরে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ১৫ আগস্ট কালরাতের স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভায় সেদিনের নির্মম ঘটনা বর্ণনা করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
দুপুর ১২টা থেকে দুইটা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে সরকারি দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে ওই আয়োজন করে বরিশাল জেলা প্রশাসন। যার সহযাগিতা দয় সিটি করপোরেশন।
স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই, যেখানে আইন করে হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৫ আগস্ট পরবর্তী সরকার ইনডেমিনিটি করে ওই হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলো। জিয়াউর রহমান সরকার আত্মস্বীকৃত খুনীদের পুরস্কৃত করেছিলো বিভিন্ন দূতাবাসে চাকুরী দিয়ে। বেগম জিয়া ওই খুনী চক্র ও তাদের দোসরদের সংসদে বসিয়েছিলো, মন্ত্রী বানিয়েছিলো। জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডে জড়িত। ওই হত্যাকান্ড তদন্তে প্রথমবারের মতো কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। একই সঙ্গে এর সাথে যারা জড়িত তাদের প্রকাশ্য বিচার দাবি করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের সভাপতিত্বে সভায় দুঃসহ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ওই রাতে মিন্টো রোডের বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়েও প্রাণে বেঁচে যাওয়া আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পুত্রবধূ ও অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক শাহান আরা বেগম বলেন, ঘাতকরা যখন মিন্টোরোডের বাসায় আক্রমন করে, তখন তার বড় ছেলে শিশু সুকান্ত আবদুল্লাহ কোলে উঠতে চেয়েছিলো। কিন্তু তখনকার ছোট ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ (বর্তমান সিটি মেয়র) কোলে থাকায় শেষবারের মতো সুকান্তকে কোলে নিতে পারেননি তিনি। এ সময় ঘাতকরা ব্রাশ ফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্বশুড়, ভাসুর, ননদ এবং বড় ছেলেসহ পরিবারের অনেককে হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঘাতকরা স্বাধীনতা বিরোধী ছিলো। তাদের মধ্যে বরিশালের লোকও ছিলো। তারা এখনও সক্রিয় আছে। এই খুনী ও তাদের দোসরদের সামাজিকভাবে বয়কটসহ তাদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান শাহান আরা বেগম। ১৫ আগস্টের ঘটনায় ওই সময় তিনি বাদি হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করলেও সেই মামলার বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের এমপি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে সবাইকে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় বিপথগামী সেনাদের গুলিতে রক্তাক্ত হয়ে প্রাণে বেঁচে যাওয়া বরিশালের ক্রিডেন্স ব্যান্ডের সদস্য খ ম জিল্লুর রহমান স্মৃতিচারনমূলক সভায় বলেন, ওই ঘটনার পর ৪৪ বছরেও কেউ তার খোঁজ নেয়নি। জেলা প্রশাসন ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারনমূলক অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি ধন্য। জিল্লুর বলেন, ১৫ আগস্ট তার শরীরে একাধিক গুলিবিদ্ধ হয়।
সভায় মূখ্য আলোচক ছিলেন ওইদিন মায়ের কোলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বর্তমান সিটি মেয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
এ ছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বরিশাল-৩ ও ৬ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি যথাক্রমে গোলাম কিবরিয়া টিপু ও নাসরিন জাহান রতœা আমীন, সংরক্ষিত এমপি সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা, বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। বক্তব্য রাখেন, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল ও সাধারন সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর এবং জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত এবং এক মিনিটের নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।