আম রপ্তানিতে ঢাকায় প্ল্যান্ট

আম রপ্তানিতে ঢাকায় প্ল্যান্ট

দেশের সব অঞ্চলেই আম উৎপাদিত হয়। উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ও পরিচর্যার মাধ্যমে রপ্তানিযোগ্য আমের উৎপাদন বৃদ্ধি করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

এতে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ না হওয়ায় প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার আম নষ্ট হচ্ছে। বছরে ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঢাকার প্রবেশদ্বার গাবতলীতে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ একর জমিতে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন।  

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সূত্র জানায়, প্রতি বছর ৫ হাজার টন আমের বিভিন্ন ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, পোকার ডিম এবং শূককীট মুক্তকরণ ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময় সাড়ে ১২ হাজার টন সবজি এবং সতেজ কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে বাষ্পীয় তাপ প্রয়োগের সুবিধা সৃষ্টি করা জরুরি। টন প্রতি তিন হাজার টাকা হিসেবে প্রতি বছর ১৭ হাজার ৫০০ টনে সরকার ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করতে পারবে।  

“আম ও অন্যান্য সতেজ কৃষি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে বাষ্প তাপ প্রয়োগ প্ল্যান্ট’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় গাবতলীতে ২০২২ সালের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ বর্গ মিটার আয়তনের ১টি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও ৬০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন ১টি বাষ্প তাপ প্রয়োগ প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে আম ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধার উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধিকরণ, গুণগত মানসম্পন্ন ১০ হাজার মেট্রিক টন আমের বিভিন্ন ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও পোকার ডিম এবং শূককীট মুক্তকরণ কাজ করা হবে। গুণগত মানসম্পন্ন ২৫ হাজার মেট্রিক টন সবজি এবং সতেজ কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। একটি অটো কনভেয়ার প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।

বিএডিসি সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আম থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব। কিন্তু সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজতকরণের অভাবে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত। বিদেশে দেশি আমের চাহিদাও অনেক। গাবতলীতে প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে বিদেশ আম রপ্তানি সুবিধা হবে। এখান থেকে বিমান বন্দর নিকটে।

বিএডিসি জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সীমিত পরিমাণে আম বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিদেশিদের কাছে আমাদের আমের গ্রহণযোগ্যতা কম। এর অন্যতম কারণ রপ্তানিযোগ্য আমের কিছু শর্ত ও বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। যেমন- প্রতিটি আম রোগ জীবাণু, পোকামাকড়, হেভি মেটাল ও দাগমুক্ত হওয়া জরুরি। তাছাড়া আমের ওজন ২০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম, চামড়া রঙিন, শাঁস দৃঢ় ও অল্প মিষ্টতা থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু দেশীয় আমে এসব বৈশিষ্ট্যর অভাব রয়েছে বিধায় রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট বা বাম্প তাপ প্রয়োগ প্রযুক্তি সুবিধা না থাকার ফলে আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করা হয়।

প্রকল্পের প্রস্তাবিত মূল কার্যক্রম হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র স্থাপন আড়াই হাজার বর্গমিটার আয়তনের  একটি, বাষ্প তাপ প্রয়োগ প্রযুক্তি সুবিধা স্থাপন এক সেট, বাষ্প তাপ প্রয়োগে প্রযুক্তি পাওয়ার সাপ্লাই স্থাপন এক সেট, অটো কনভেয়ার প্যাকেজিং লাইন স্থাপন এক সেট, একটি অটো সিলিং মেশিন ক্রয়। এ কাজে ১৯০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

দেড় লাখ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পানিশোধনাগার স্থাপন করা হবে। ৫ একর মাটি ভরাট এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা হবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ফলের মধ্যে আমই সবচেয়ে জনপ্রিয় সুস্বাদু ফল। আম ফলের রাজা হিসাবে পরিচিত। এখন আম উৎপাদন প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বের প্রধান ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আম উৎপাদনে অষ্টম স্থানে। তবে আম রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে তেমন কোন অবস্থানে নেই। আান্তর্জাতিক বাজারে আমের স্থায়ী রপ্তানির বাজার রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সীমিত পরিমাণে আম বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আম আমদানিকারক দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমান।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য থেকে জানা যায়, গত ২০১৮ সালে আমের রপ্তানি ছিল মোট ৭৬০ টন, যা আবার কমতে শুরু করেছে। বিদেশিদের কাছে আমাদের আমের গ্রহণযোগ্যতা কম। বাষ্প তাপ প্রয়াগে প্রযুক্তি সুবিধার মাধ্যমে আমের বিভিন্ন ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও পোকার ডিম এবং শূককীট মুক্ত করা যায়। এসব মুক্ত করার ফলে আম উজ্জ্বল হয় ও বেশি দিন তাজা থাকে, যা আমদানিকারক দেশগুলোর শর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।