আমতলীতে ‘আম্পানের’ তান্ডবে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত,ভেরীবাধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে

আমতলীতে ‘আম্পানের’ তান্ডবে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত,ভেরীবাধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে

ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পানের’ তন্ডবে বরগুনার আমতলীতে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বেশ কয়েকটি স্থানে ভেরীবাধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে দুটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম। পানিতে মাছের ঘের ভেসে গেছে। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছপালা।

গতকাল বুধবার (২০ মে) বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানলে পৌরসভাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরমধ্যে গুলিশাখালী ইউনিয়নের নাইয়াপাড়া ও হিন্দুপাড়ার শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক ঘরের টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। বাতাসে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। পানির তোরে ৪৩/২-এফ পোল্ডারের কালীবাড়ী এলাকায় ভেরীবাঁধ ভেঙ্গে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে দুটি মাছের ঘের। সম্পর্ন বিধ্বস্থ হয়েছে গোজখালী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি টিনসেট ভবন। আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের ৪৩/১এ শাখারিয়া, গোডাঙ্গা স্লুইজের সংন্নিকটে ও ৫৪/বি পশ্চিম গাজীপুর এলাকায় পানির চাপে ভেরীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে ৭টি গ্রাম। উপড়ে পড়েছে গাছপালা ও আংশিক বিধ্বস্থ হয়েছে বেশ কিছু ঘরবাড়ী। কুকুয়া ইউনিয়নে একটি বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে গেছে, বেশ কিছু ঘরবাড়ীর ক্ষতি সাধিত হয়েছে ও গাছপালা উপড়ে পড়েছে। সদর ইউনিয়নে গাছপালাসহ শতাধিক ঘরবাড়ী, ২৫টি মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে ও উত্তর পশ্চিম কালামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ভবটির টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। চাওড়া ইউনিয়নের বৈঠাকাটাসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। শতাধিক ঘরবাড়ীর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরতদের বসতঘর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ী ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ও গাছপালা উপড়ে পড়েছে। আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া ও পৌরসভার ৫টি ওয়ার্ডের ভেরীবাঁধের বাহিরে পায়রা নদীর তীরে বসবাসরত পরিবারগুলোর বসতঘর পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এ্যাড. মোঃ নুরুল ইসলাম মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত নাইয়াপাড়া ও হিন্দু পাড়ার বাসিন্ধাদের। তাদের প্রায় দুইশতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ী পানিতে তলিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। একটি স্কুল ভবন ও ভেরীবাঁধ ভেঙ্গে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, আমার ইউনিয়নের পানির চাপে তিনটি স্পটে ভেরীবাঁধ ভেঙ্গে ৭টি গ্রামের লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে।

সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, আমার ইউনিয়নের ২৫টি মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে। একটি মাদ্রাসার টিনের চালা সম্পূর্ণ উড়ে গেছে ও বেশ কিছু বাড়ীঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, পৌরসভার ১, ৪, ৫, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ওয়াবদা ভেরীবাঁধের বাহিরে পায়রা নদীর তীরে বসবাসরত পরিবারগুলো বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাদের ঘরবাড়ী পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন মুঠোফোনে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পানের’ তন্ডবে বরগুনার আমতলীতে তীব্র বাতাসে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উড়িয়ে নিয়ে গেছে ঘরের টিনের চালা। হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। বেশ কয়েক স্থানে ভেরীবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢোকার সংবাদ পেয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা হয়েছে তিনি দ্রুত বাঁধগুলো মেরামত করে দিবেন। আর ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সহায়তা প্রদান করা হবে।