ঢাকায় একটি প্রাইভেট প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে চাকরি করতেন আজাহার ব্যাপারি। একদিন কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে ট্রেনে দু টুকরো হয়ে নিহত হন তিনি। এর পর থেকে তার বিধবা স্ত্রী তিন সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে কোনও ভাবে বেঁচে আছেন তিনি। তার ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় মানারাত খাতুন ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো। নিজে পড়াশুনা করে আবার দুই ভাইকেও পড়াশুনা করাতো। মানারাত এ বছর বরিশালের আগৈলঝাড়ার সেরাল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।
‘মানারাতের ইচ্ছে চিকিৎসক হওয়া। কিন্তু এখন কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তারপরও বিভিন্ন স্বজনদের সহযোগিতায় ভর্তি করা হলেও সেখানে যে খরচ হবে তা কীভাবে মেটাবো।’ কথাগুলো বলছিলেন মানারাতের বিধবা মা রোকসানা বেগম। আর মেয়ের ভালো লেখাপড়ার জন্য আফসোস করছিলেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘ভালো ফলাফল না করলেই ভালো হতো। তাহলে আর এতো চিন্তা করতে হতো না।
মানারাত জানায়, ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল তার বাবার মৃত্যুর পর তারা উপজেলার সেরাল গ্রামে তারা একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছে। তাদের সহায়তার একমাত্র অবলম্বন নিকট আত্মীয়স্বজন। তার চার মামা তাদের বেশি সহযোগিতা করে আসছে। মামাদের আর্থিক সহায়তায় চলছে তাদের সংসার। এর মধ্যে এক মামা বোরহানউদ্দিন মারা গেলে সহায়তার একটি হাত কমে যায়। এছাড়া সে মানারাত প্রাইভেট পড়িয়ে যা পায় তাও সংসারে দেয়।
তার ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে জুবায়ের হোসেন সেরাল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এবং জুনায়েদ হোসেন কালকিনি মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ছে। জুবায়েরকে লেখাপড়ায় সে সহযোগিতা করে।
মানারাত আরও জানায়, স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায় সে এতো ভালো ফলাফল করতে পেরেছে। কারণ প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য তার ছিল না। আর্থিক দৈন্যের কারণে তার কলেজে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে লেখাপড়ার সুযোগ পেলে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানায় মানারাত।
সেরাল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহামুদ হাসান লিটন বলেন, ‘দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনও রকম প্রাইভেট শিক্ষক ছাড়াই বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে মানারাত। তার এখন কলেজে ভর্তি হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’ এ জন্য শিক্ষক লিটন বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন। বিত্তবানদের সহযোগিতাই পারে মানারাতের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে।