আহা, এ বড় কষ্ট

আহা, এ বড় কষ্ট

ইদানিং সময় হঠাৎ হঠাৎ প্রশ্ন করে, 
কি খবর সব কিছু ঠিক ঠাক মনে আছে তো? 
মনেরও জিজ্ঞাসা থাকে, থেকে থেকেই
কি হলো, কি এতো ভাবছো, কিছু ভুলে গেছো কি? 

প্রতি সকাল দুপুর রাতে-
আমার ঔষধের খালি স্ট্রিপগুলি তাকিয়ে থাকে চোখে। 
হয়তো বলি না কিছুই
তবু তার প্রশ্ন- খেয়েছো কি?
অতএব আজকাল বেশ ভালোই বুঝতে পারছি, 
আমার মোনটার অনেক কিছুই আর 
মনে থাকছে না আগের মতো। 

কি কারণ, কেন এমন হয়?
সবাই এক বাক্যে বলে আমায়- এর নাম সময়। 
জীবনের অতিক্রান্ত অর্ধেক সময় 
বোধ বুদ্ধিগুলি ধীরে ধীরে অভিমানি, পরিনত, পোক্ত হয়। 
এভাবে ভালো লাগে না সকল সময় 
দেশ-বারান্দা বেডরুমের নিত্য অবক্ষয়। 
শহীদের রক্ত স্পর্শে যে মাটি পবিত্র হলো 
সে কেমন করে জন্ম দেয়- 
এতো অহংকারী দাম্ভিক পাপি?

যারা বারবার
রক্তাক্ত করে, ক্ষতবিক্ষত করে আমার ক্যালেন্ডার। 
আগস্ট- ১৫
৩রা নভেম্বর- ৭৫।
ভুলে কি গেল এ বাঙালি, সেই রক্ত সমুদ্দুর? 
ভুলে গেল ফুল, কতো দ্রুত গলা বদলে নিলো,
কতো শতো জন হাওয়া পাল্টে বেঁচে বর্তে গেল,
কতো চোখ, চোখ রাঙালো? 
একদিন তাদের সবার গায়েইতো মুজিব কোট ছিলো।

এ- দেশ কি ভুলে গেছে 
সেই বেঈমানের অধিক বেঈমান
পশুর অধিক পশু 
কিট জঘন্য কিট
ঘৃণার অধিক ঘৃন্য- মিরজাফরের অধিক মিরজাফর
বরাহনন্দন খুনি মোস্তাকের কথা? 
যার রক্তাক্ত হাত প্রলম্বিত করেছিলো এক অদ্ভুত আঁধার
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে। 
তাজউদ্দিনের বাংলাদেশে 
মনসুর আলীর বাংলাদেশে 
কামারুজ্জামান এর বাংলাদেশে 
সৈয়দ নজরুল ইসলামের বাংলাদেশে।
বীর বাঙালিদের এই বাংলাদেশে।

তবু থামলো না তারা
সেই প্রেতাত্মারা, ফিরে এলো পুণর্বার 
২১শে আগস্ট ২০০৪। 
গ্রেনেডের বিষাক্ত স্পিলিন্টার
ছোরা হলো গণতন্ত্র কন্যার উপর।
হলো না, এবার মানব বর্ম রুখে দিলো
এমন নীল নকশা হত্যার।
তবু ৩২ নম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া,
রক্তাক্ত হলো আবার। গুমড়ে কেঁদে উঠলো বাঙালি পুনঃবার।
সেই অমিত রক্ত স্রোতের ধারা ধারণ করে বুকে 
খরস্রোতা পদ্মা বলছে-
ধরলা বলছে, বলছে মধুমতি সাথে বলছে আগুনমুখা 
বলছে আমার রূপসী বাংলার ধানসিঁড়ি- 
আজ চেয়ে দেখ্ তোরা
আমাদের দেহের তীব্র জলধারা,
বিশ্বা মিত্রের ক্ষ্যাপা শীষ্যের মত অভিশাপ দিচ্ছে তোদের।
যারা নির্লিপ্ত রক্তের ধারা বয়ে দিয়েছিলো এই বাংলায় 
যারা লোভের আগুনে পোড়াতে চেয়েছিলো বাঙালির অস্তিত্ব। 
সেই অর্বাচিন অসভ্য বেঈমানের দল
অনাদিকাল পুড়বে, ওদেরই লোভের আগুনে।
নিরন্তর পুড়ে পুড়ে তীব্র ভস্ম হবে বারবার
তবু নিভবে না সে আগুন কোনদিন।
এ আজ আমাদেরও অভিশাপ। 
বারবার এভাবে মৃত্যুর পাহাড়ের নিচে 
দম বন্ধ পরে থাকা- আহা, এ বড় কষ্ট।
এ বড় কষ্টের বেঁচে থাকা