ইলিশ রক্ষায় নতুন সম্ভাবনা

ইলিশ রক্ষায় নতুন সম্ভাবনা

গত ২১ দিন দেশের ইলিশ অভায়াশ্রমখ্যাত নদী ও সমুদ্রে ইলিশ মাছ ধারা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। একই সঙ্গে এই সময় ইলিশ মাছ আহরণ, সংরক্ষণ, কেনা বেচাও নিষিদ্ধ ছিল। যার কারণে মা ইলিশ রক্ষা পেয়েছে। এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। আগামী মৌসুমে ইলিশ উৎপাদন বাড়বে কয়েক গুন। ধারণা করা হচ্ছে আগামী মৌসুমে ৪ লক্ষ মেট্রিকটন ইলিশ পাওয়া সম্ভব হবে। এটা আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার হাতছানি। আমরা চাই আমাদের ইলিশ সম্পদ রক্ষা হোক। 

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রজনন মৌসুমের সঙ্গে সমন্বয় করে এবার ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত  ইলিশ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, বিপনন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ। প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাত ১২টার পর। মা ইলিশ রক্ষায় গত ২১দিন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, জরিমানা, কারাদ- ও কারেন্ট জাল জব্দসহ নানা পদক্ষেপের কারণে এই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে পুরো নিষেদাজ্ঞার সময যদি সবাই ইলিশ শিকার বন্ধ রাখতো তাহলে মাছে পানিতে সমান সমান হতে পারতো। আমাদের ক্ষুদ্র চিন্তা বড় সম্ভাবনাকে কিছুটা হলেও ম্লান করেছে। আগামীতে অবশ্যই এই সম্ভাবনার পথে থাকবে জেলেসহ সাধারণ মানুষ। 

মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২১ দিনের অভিযানে বরিশাল বিভাগে ৯৮৭টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়েছে। অবৈধভাবে মাছ শিকারের দায়ে ১ হাজার ১৭৪ টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ১ হাজার ৫৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারা ও অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। ৭৮ লাখ মিটার কারেন্ট জাল এবং ৯ হাজার ৫০০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে।

আমরা জানতে পেরেছি, প্রজনন মৌসুমে প্রতিটি মা ইলিশ ২ লাখ থেকে ২০ লাখ ডিম ছাড়তে সক্ষম। এই সংখ্যক ডিমের মধ্যে ১০ ভাগ পূর্ণ ইলিশে রূপ নেয়। হিসেব অনুযায়ী ৬০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ ১০০ গ্রামের বেশি ডিম ধারণ করে। তাহলে জব্দ করা ৯ হাজার ৫০০ কেজি ইলিশে কত কেজি বেশি ডিম অবমুক্ত হতো। এই হিসেব জব্দ করা তালিকা অনুযায়ী। কিন্ত জব্দ করা যায়নি এমন হিসেব এর কয়েকগুন বেশি হবে। সব মা ইলিশ রক্ষা করা যায়নি কেবল আমাদের সংকীর্ণ চিন্তার কারণে।

বাংলাদেশে উৎপাদিত ইলিশের ৭০ ভাগ ইলিশ পাওয়া যায় মেঘনা নদীর ভোলার শাহবাজপুর, বরিশালের তেতুলিয়া ও পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীর ৩৫০ কিলোমিটার এলাকার ৫টি অভয়াশ্রম থেকে। এ সকল অভায়শ্রমে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১০০ গ্রামের বেশি ডিম ধারণ করে। প্রতিটি ডিমে ২ লাখ থেকে ২০ লাখ ডিম্বানু রয়েছে। এই সময় শতভাগ মা ইলিশ রক্ষা করতে পারলে ৪ লাখ মেট্রিক টন নয়, আরো বেশি ইলিশ পাওয়া যেত।

আমরা চাই, আমাদের সম্ভাবনাময় রূপালী ইলিশ রক্ষায় ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতেই হবে। একই সঙ্গে ছোট ছোট উদ্যোগ নিতে হবে। আজকের নেওয়া ছোট উদ্যোগ আগামীর সম্ভাবনা। ইলিশ রক্ষায় নতুন সম্ভাবনা আশা জাগানোর গল্প হয়ে থাকবে।