ঈদে যাত্রীর চাপ সামলাতে পারেনি বাস ও লঞ্চ

বরিশাল থেকে কোরবানির ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার যাত্রায় লঞ্চে-বাসে স্পেশাল ট্রিপ ও ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করলেও যাত্রীদের চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে পরিবহন ও নৌযান। একদিকে সড়কপথে বাসের আধাঘন্টা/এক ঘন্টা পর পর ট্রিপ, অন্যদিকে ১৪ টি লঞ্চ দিয়ে স্পেশাল সার্বিস দেওয়ার পরেও যাত্রীর চাপ কমছে না বলে জানান বাস ও লঞ্চের সংশ্লিষ্টরা। তবে পদ্মা সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় দক্ষিণের রাজধানীমুখি বাসসহ অন্যান্য যানবাহনগুলোতে দীর্ঘ যানযটের কারণে র্দূভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। বরিশাল নথুল্লাবাদ থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস ঢাকা পৌঁছাতে ৫ ঘন্টাও লাগিয়েছে বলে জানান যাত্রীরা।
লঞ্চ ও বাসের সূত্রে জানা যায়, নৌপথের লঞ্চ মালিকরা রাজধানীমুখি যাত্রীদের চাপের জন্য স্পেশাল সার্ভিস চালু করলেও লঞ্চে জায়গা না পেয়ে ফিরতে হয়েছে অনেক যাত্রীদের। ঈদের তৃতীয় দিন থেকে চার দিন ধরে চলছে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ। নৌবন্দরের নোঙর করা লঞ্চগুলোতে পরিদর্শন করে দেখা যায়, সকল কেবিন আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রেখেছেন যাত্রীরা। এছাড়া লঞ্চের ডেক, কেবিনের পাশের স্থান, লঞ্চের বারান্দা, সামনে ও ছাদে সামান্য জায়গা করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ঝুঁকি নিয়েই পাড়ি দিয়েছেন যাত্রীরা।
বাস যাত্রীদের অভিযোগ, বাসের টিকিট সংকট, বাসে অতিরিক্ত যাত্রীবহনসহ বেশি দামে বাসের টিকিট কিনতে হয়েছে। তবে যাত্রীদের শুধুমাত্র ভোগান্তী পোহাতে হয় তা নয়, এর সাথে অতিরিক্ত যাত্রীবহনে যাতায়তে এবং যাত্রাপথে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন যাত্রীরা।
বিভিন্ন বাস কোম্পানীর ম্যানেজার ও সুপারভাইজাদের দাবী, টার্মিনালে অতিরিক্ত যাত্রী আসায় টিকিট বিক্রি ও ব্যবস্থাপনায় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। যাত্রী পরিমাণ বেশি হওয়া বাসের সংকট দেখা যায়। ঢাকা গিয়ে বাসগুলোর বরিশালে ফিরতে অনেক সময় লেগে যায় সড়কে যানযটের কারণে। এ জন্য যাত্রীদের ভালো সার্ভিস দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান তারা। তবে টার্মিনালে বিভিন্ন ধরনের দালাল থাকায় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে ভালো বাস কোম্পানীগুলো দুর্নাম ছড়ায় বলে জানান তারা।
ঈদের সপ্তম দিন শনিবার (১৬ জুলাই) দিনব্যাপী বরিশাল নৌবন্দর এবং কেন্দ্রীয় বাস র্টামিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, ১৪ টি বড় লঞ্চ নোঙর করা রয়েছে ঘাটে। যাত্রীরা ভীড় ঠেলে এসব লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বরিশাল বাস কাউন্টার নথুল্লাবদ থেকে অধাঘন্টা পর পর যাত্রী বোঝাই করে ছাড়ছে। তবে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের যাওয়ার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ ভীড় জমিয়েও বাস কিংবা লঞ্চ কোনোটিতেই জায়গা না পাওয়ায় বহু যাত্রীকে বেছে নিতে হয়েছে অন্য যানবাহন। কেউ কেউ ফিরছে ভাঙা ভাঙা পথে।
এদিকে গত ১১ জুলাই ঈদের ছুটি শেষ হয়। কিন্তু ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের চাপ বাড়ে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) থেকে।
ঢাকাগামী লঞ্চ যাত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি কুয়াকাটা থেকে বরিশাল লঞ্চ ঘাট পৌঁছাতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লেগেছে। তাও পরিবহন পরিবর্তন করতে করতে আসতে হয়েছে। কুয়াকাটার বাস নেই বললেই চলে। এছাড়া বরিশাল নৌ বন্দরে এসে লঞ্চে প্রবেশ করতেই কষ্ট হয়েছে। ঈদের এতদিন পরেও যাত্রীদের প্রচন্ড চাপ যা লঞ্চ বা বাস কোনোটিই সামাল দিতে পারছে না। তবে হয়তো মানুষ এবার পদ্মা সেতু পাওয়ায় নিজ বাড়িতে সকলেই ঈদ করতে এসেছেন, এটাই তার চিত্র।'
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় লঞ্চে যাত্রী কিছুটা কমেছিলো। তবে ঈদের পর ঢাকাগামী লঞ্চ যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। এজন্য বর্তমানে ১৪টি লঞ্চ দিয়ে স্পেশাল সার্ভিস চলছে। লঞ্চ বোঝাই হলেই ঘাট ত্যাগ করে লঞ্চগুলো।’
সাকুরা পরিবহনের কাউন্টারে অবস্থানরত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর বলেন, ‘এবছর ঈদে করোনার কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাছাড়া পদ্মা সেতু হওয়ায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি। এই যাত্রীদের সামাল দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। যতটা পারছি, ততটা চেষ্টা করছি। আগামী ১৭ তারিখ পর্যন্ত অনেক টিকিট অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। আমরা কোনো যাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেই না। নন এসি ৪’শ থেকে সাড়ে ৪’শ চলে এবং এসি ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা। দুপুর ২ টা পর্যন্ত আমরা ৪৫ টি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছি।