মঠবাড়িয়ায় দুই নদীর সংযোগ খালে বাঁধ

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামে ‘দোগনা’ ও ‘ভূতার’ খালে বাঁধের কারনে সেখানকার শতশত একর কৃষি জমি অনাবাদি এবং মৎসে্যর চারণ ক্ষেত্র ধ্বংসের মুখে।
জানা গেছে, বিশখালী-বলেশ্বর দুই নদীর সংযোগ ‘দোগনা’ ও ‘ভূতার’ খালে সংগবদ্ধ ভূমি দস্যুদের দেওয়া বাঁধের কারনে খাল দু’টিকে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক মানুষের নীরব আর্তনাদ যেন বিষবাষ্পে পরিনত হয়েছে । প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর ভূমিকায় দায়িত্ব এড়িয়ে যায় বলেও জানিয়েছেন সেখানকার স্থানীয় জনগণ।
মঠবাড়িয়ার পূর্বে বিশখালী ও পশ্চিমে বলেশ্বর নদী। দুই নদীর সংযোগ খালটি বিশখালী নদী থেকে উঠে ঝালকাঠীদ’র কাঠালিয়া ও বরগুনা’র বামনা উপজেলার মধ্যস্থান আমুয়া লঞ্চঘাট থেকে দুই পাশে ৪টি উপজেলা রেখে সোজা প্রায় ২৫ কি.মি পশ্চিমে তুষখালী লঞ্চঘাট হয়ে বলেশ্বর নদীতে মিলেছে। এই ২৫ কি.মি খালের দুই পাশে ৪টি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রাম পাশাপাশি অবস্থিত। যা খাল দু’টিকে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক মানুষের দৈনন্দিন জীবন জীবিকা, অর্থনৈতিক নির্ভরতা, মৎস্য শিকার, নৌ- যাতায়াতসহ বহুমূখী সুবিধা ২০০ বছর থেকে ভোগ করে আসছে। কিন্তু এই সংযোগ খালটির মধ্যবর্তী স্থান মিরুখালী ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামের ‘দোগনা’ খাল ও দোগনা খাল এর শাখা ‘ভূতার’ খালে সংগবদ্ধ ভূমি দস্যুরা সুবিধামত প্রায় এক কি.মি জুড়ে একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে খালটি খানিকটা ভরাট করেছে , কেউ মাছের চাষ করছে, কেউ দখল করেছে আবার কেউ খালের পার্শ ভরাট করে প্রশস্ততা কমিয়েছে।
প্রায় ৮০ ফুট প্রস্থের খাল দু’টি জনস্বার্থে ব্যবহার্য ১নং খাস খতিয়ান ভূক্ত। ক্রস বাঁধ নির্মান ও ভরাট করায় মিরুখালী-ধানীসাফা ইউনিয়ন ও প্রভাবিত এলাকা গুলোর প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশখালী-বলেশ্বর নদীর সংযোগ খালটির স্বাভাবিক জলস্রোতসহ ছোট ও মাঝারী আকারের নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবৈধ এ বাঁধের কারনে কৃষি নির্ভর এলাকার কৃষকরা কর্মহীন রয়েছে, শত-শত একর ফসলী জমি অনাবাদী পড়ে আছে, জলাবদ্ধতায় ফসল হানী হচ্ছে, তিন ফসলী জমি এক ফসলে পরিনত হয়েছে, বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ভুগছে মানুষ। অন্যদিকে শুকনো মৌসুমে তীব্র পানি সংকটে নানা রকম কৃষি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। দেশীয় মৎস ও ফলের উৎপাদন প্রচন্ডভাবে হ্রাস পেয়েছে। পেশাদার ও অপেশাদার শত-শত মৎসজীবী বেকার দিন কাটাচ্ছে।
অথচো কোন একসময় দুই নদীর জোয়ারের পানিতে ‘দোগনা’ ও ‘ভূতা’ খালসহ এর আশপাশের শাখা খাল গুলোতে পানির সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেনু পোনা প্রবেশ করে নানা রকম জলশয়, পুকুর, খাল, ধানের ক্ষেতে প্রচুর মাছ বৃদ্ধি পেত। এক সময় এই এলাকা থেকে শত-শত মন শুটকি ও গলদা চিংড়ীসহ হরেক প্রজাতির মাছ দেশ ও দেশের বাইরে রপ্তানী হত। কিন্তু সংযোগ খালে বাঁধের কারনে সব কিছু থেমে গিয়ে দূর্ভোগের পাল্লা ভারী হয়েছে।
এলাকার একাধিক মৎসজীবীরা জানিয়েছে , বাঁধগুলো খুলে দিলে বিশখালী ও বলেশ্বর নদীর জোয়ারের পানির সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেনু পোনা খাল, ডোবা, পুকুরসহ অন্যান্য জলাশয়ে ডুকে এলাকাটি পূর্বের অবস্থানে ফিওে আসবে ও প্রচুর পরিমান বিভিন্ন প্রজাতির মাছে এলাকাটি ভরে যাবে।
মিরুখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান , প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুস সোবহান শরীফ জানান, অবৈধ বাধের কারনে লক্ষাধিক মানুষ একযুগের বেশী সময় ধরে দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়েছে। বাঁধ কেটে খাল দু’টি মূক্ত করা এখন সময়ের দাবীতে পরিনত হয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড পিরোজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবে মাওলা মোঃ মেহেদী হাসান মুঠোফোনে বলেন, ‘সংযোগ খালে বাঁধের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তারা বাঁধ অপসারন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন’।
খাল দু‘টি নিয়ে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় রিপোর্ট হলেও অদৃশ্য কারনে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এলাকাবাসী সরকারের কাছে বাঁধগুলো অপসারন করার দাবি জানান।