উজিরপুর থানার ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তা প্রত্যাহার,৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বরিশালের উজিরপুর থানায় রিমান্ডে নিয়ে এক নারী আসামীকে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ওই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জিয়াউল আহসান এবং পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাইনুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে বিভাগীয় মামলা।
অপরদিকে এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার নারী বাদি হয়ে প্রত্যাহার হওয়া দুই কর্মকর্তাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। নারীর দায়ের করা মামলার অপর ৩ আসামী শনাক্ত করতে গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. আক্তারুজ্জামান জানান, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গতকাল সোমবার নির্যাতনের শিকার নারী বাদি হয়ে ওই থানার ওসি মো. জিয়াউল আহসান এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাইনুল ইসলামসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এর আগেই থানায় নারী নির্যাতনের অভিযোগে উজিরপুর থানার ওসি মো. জিয়াউল আহসান এবং পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাইনুল ইসলামকে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ওই নারীর আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, থানায় রিমান্ডে নিয়ে তার মোয়াক্কেলকে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন করেছে পুলিশ। আবার আদালতের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তও করছে পুলিশ। পুলিশের তদন্তে পুলিশের অপরাধ প্রমাণিত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। এ কারণে এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান আইনজীবী মজিবর রহমান।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পুষ্প রানী চক্রবর্তী বলেন, থানায় রিমান্ডে নিয়ে আসামী নির্যাতন গর্হিত অপরাধ। ওই নারী যদি কোন অপরাধে অভিযুক্ত হয় তবে তার বিচার হবে। রিমান্ডে নিয়ে একজন নারী আসামীকে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি। এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে গতকাল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়েছে মহিলা পরিষদ। এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সকল নাগরিককে স্বোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
গত ২৬ জুন বরিশালের উজিরপুরের জামবাড়ি এলাকায় এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মৃতের ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় ওই নারীকে আসামী করা হয়। ওই দিনই ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ব্যক্তির মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে গ্রেপ্তার ওই নারীকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে গত ৩০ জুন ও ১ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদ করে উজিরপুর থানা পুলিশ। রিমান্ড শেষে ২ জুলাই তাকে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে এ সময় ওই নারী পুলিশের বিরুদ্ধে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। আদালত ওই নারীর শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে। একই সঙ্গে আদালত নির্যাতনের শিকার নারীকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুযোগ দেয়ার জন্য বরিশালের পুলিশ সুপার এবং রেঞ্জ ডিআইজিকে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় কারান্তরীণ অবস্থায় গতকাল সোমবার দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ওই নারী। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয় উজিরপুর থানার ওসি এবং পুলিশ পরিদর্শককে (তদন্ত)।