উজিরপুরে চিকিৎসকের বাসায় শিশু গৃহকর্মীর উপর অমানসিক নির্যাতন

বরিশালে এক চিকিৎসকের স্ত্রীর হাতে নির্মম নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত শিশু গৃহকর্মীকে (১১) তাঁর গ্রামের বাড়ির কাছে ফেলে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর অবস্থায় শিশু গৃহকর্মীকে লোক মারফত গ্রামের বাড়িতে পাঠায় চিকিৎসক দম্পতি। সেখান থেকে উদ্ধার করে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। শিশু নির্যাতনের ঘটনায় যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে বাসিন্দা ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের রেজিস্টার ডা. সিএইচ রবিনের ঢাকার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত ওই শিশু।
শিশুটি শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও মানসিকভাবে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন নির্যাতনের শিকার শিশু ও তার স্বজনরা।
শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈ (১১) উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকার ননী বাড়ৈর মেয়ে। তার বাবা একজন মানসিক প্রতিবন্ধি। তার মা ২ বছর আগে অন্যত্র বিয়ে করেছে। ২ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নিপা মেজো।
গতকাল বৃহষ্পতিবার রাতে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কপ্লেক্সের গিয়ে শিশুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৬ নম্বর বিছানায় শরীরের নানা ক্ষত নিয়ে কাতরাচ্ছিলো ১১ বছর বয়সের শিশু নিপা বাড়ৈ। তার মাথায় বড় ধরণের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।
নিপা বাড়ৈর অভিযোগ, গৃহকর্তী রাখি দাস নানা অজুহাতে তার উপর শারীরিক নির্যাতন করতো। কখনও গরম খুতির ছ্যাকা, কখনও ছুরির খোঁচা, আবার কখনও দেয়ালে ঠোকা হতো তার মাথা। রাগের মধ্যে কখনও তার গলা চেপে শ^াস রোধ করার চেষ্টা করতো গৃহকর্তার স্ত্রী। অব্যাহত নির্যাতনে সে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে নির্যাতনকারী লোক মারফত গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা থেকে উজিরপুরের জামবাড়ি তার গ্রামের বাড়ির কাছে একটি দোকানের সামনে ফেলে যায়।
শিশুটির চাচি মুক্তি বাড়ৈ জানান, গত ৬ মাস আগে ঢাকার জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইএস রবিনের শ্যামলীর বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করে নিপা। কখনও শিশুটির খোঁজ খবর জানতে চাইলে সে ভালো আছে বলে জানানো হতো তাদের। গত বুধবার শিশুটিকে বাড়ির কাছে ফেলে যাওয়ার পর তার শরীরে ভয়াবহ নির্যাতনের ছাপ দেখেন তারা। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন নিপা ও তার স্বজনরা।
উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ডা. শামসুদ্দোহা তৌহিদ জানান, চিকিৎসায় শিশুটির শরীরের ক্ষত একদিন সেরে যাবে। কিন্তু শিশুটির ওপর যে মানসিক চাপ গেছে তাতে সে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। মানসিকভাবে তাকে সুস্থ্য হতে সময় লাগবে।
উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল আহসান জানান, নির্যাতনের শিকার শিশু ফেলে যাওয়ার খবর পেয়ে তারা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।