উজিরপুরে টুনু হত্যার নেপথ্যে পরকীয়ার অভিযোগ , গ্রেপ্তার ১

উজিরপুরে টুনু হত্যার নেপথ্যে পরকীয়ার অভিযোগ , গ্রেপ্তার ১

বরিশালের উজিরপুরে টুনুর হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল হারতা এলাকা। সোমবার (২৮ জুন) সকালে এজাহারের ১নং আসামী মিতুকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হারতা বাজারে নিহত টুনুর পরিবার ও এলাকাবাসী মাথায় কালো কাপড় পরিধান করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ী এলাকায় শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে বিষক্রিয়ায় বাসুদেব চক্রবর্তী টুনু (৪২) নিহত হয়। পরদিন শনিবার সকালে উজিরপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল হাসানের নেতৃত্বে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরে বাংলা মেডিকেলে প্রেরণ করেন। নিহতের ছোট ভাই বরুন চক্রবর্তী বাদি হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

উজিরপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মাইনুল ইসলাম বলেন, মামলার প্রধান আসামী মিনতী বিশ্বাস মিতুকে (৩০) গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং মামলার তদন্ত চলছে।


ঘটনার বর্ননায় জানা যায়, নিহত টুনুর সাথে মিতু ভাংড়ার ৩বছর ধরে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। নিহত টুনু হারতা ইউনিয়নের হারতা গ্রাম ৭নং ওয়ার্ডের মৃত নারায়ণ চক্রবর্তীর ছেলে। ৭ ভাইবোনের মধ্যে ৪র্থ টুনু। অপরদিকে জামবাড়ী গ্রামের শিবনাথ ভাংড়ার মেয়ে মিতু ভাংড়ার প্রথমে বিয়ে হয় মনোরঞ্জন বৈরাগীর সাথে। পরে হিরোলাল মল্লিকের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হলেও পরবর্তীতে বিচ্ছেদ হয়। মিতু ৩মাস ধরে জামবাড়ী বল্লভ বাড়ী রাস্তা ঢুকতে পূূর্ব-উত্তর পাশে কামাল সরদারের বাড়ী ভাড়ায় থাকে। এর আগে দ্বিতীয় স্বামী হিরোলালের সংসারে হারতা বাজারের পশ্চিম পাশে থাকতেন। 


৪নং ওয়ার্ডের চৌকিদার গৌতম বল্লভ বলেন, রাত আনুমানিক ১টার দিকে আমার পাশের বাড়ির বিজয় আমার ঘরের সামনে গিয়ে আমাকে ডাক দিয়ে ঘুম থেকে উঠায়। আমি ঘরের দরজা খুলে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে। বিজয় বলে, এদিকে আয় একটা ঘটনা ঘটছে। তারপর আমাকে নিয়ে মিতু ভাংড়ার বাসার কাছে নিয়ে দেখায় দ্যাখ কি হইছে। আমি দেখি টুনু রাস্তায় পড়ে রয়েছে এবং মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হইছে। আমি বাড়ি ফিরে গিয়ে আমার বাবা ও আরেক প্রতিবেশীকে ডেকে আনি। মিতু ভাংড়া ঐ সময় তার ঘরের বাহিরে টুনুর কাছাকাছি ছিল। 

হারতা বাজারের মা মেডিকেল হলের পল্লী চিকিৎসক নগেন্দ্র নাথ হালদার বলেন, আমি বিষ খাওয়া রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। ওই দিন রাত আনুমানিক ১টার দিকে একটি অচেনা নম্বর থেকে এক মেয়ে আমার মোবাইলে কল দিয়ে বলে, কাকা আপনি একটু জামবাড়ি আসেন এখানে একজন বিষ খেয়েছে। আমি তাকে ফোনে বলি রোগী নিয়ে আমার ফার্মেসী আসতে হবে। তারপর আনুমানিক রাত ৩টার দিকে নিহতের ভাই নিখিল আমাকে ফোন দিয়ে বলে বেয়াই জামবাড়ি আসতে হবে রোগী আছে। নিখিলকে বলি রোগীর অবস্থা সিরিয়াস হলে ফার্মেসীতে নিয়ে আসতে হবে। তারপর সাড়ে ৪টার দিকে রোগী নিয়ে আসলে আমি তাকে মৃত অবস্থায় পাই। 
নিহতের ভাই ও হারতা ৭নং ইউপি সদস্য নিখিল চক্রবর্তী বলেন, টুনুর সাথে মিতু ভাংড়ার দীর্ঘ ৩বছর ধরে পরোকিয়ার সম্পর্ক ছিল। গত শুক্রবার (২৫ জুন) রাত আনুমানিক ১২টার দিকে মিতু ভাংড়া টুনুকে ডেকে নিয়ে যায় এবং ঐ রাতেই পরিকল্পিতভাবে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার সাথে মিতুর ২ভাই, ১জন দুলাভাই, ১জন ভাইর ছেলে জড়িত আছে।

হারতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হরেন রায় বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মিতুকে আমরা পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে সক্ষম হয়েছি। পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট আসলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। ওই মেয়েকে আমরা ধরিয়ে দিতে পেরে আমরা নির্ভার হয়েছি। কারন, এই মেয়ে (মিতু ভাংড়া) হারতার যুবকদের খারাপ পথে নিয়ে যাচ্ছিল। হারতার অনেক ছেলে এই মেয়ের কারনে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক ছেলেদের হয়রানি করেছে এবং তাদের কাছ থেকে অনেক টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। এই মেয়েকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করায় হারতাবাসি খুশি। আমরা হারতাবাসি এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।


সাবেক হারতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও হারতা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, টুনু একজন ব্যবসায়ী ও সৎ মানুষ ছিলেন। তিনি গণমানুষের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মিতুর দু’বার বিয়ে হয়েছে কিন্তু সংসার টেকেনি। এছাড়া ওই মেয়ে কল গার্ল হিসেবে কাজ করতো যা অত্র এলাকার অনেকেই জানে। আমরা এহেন হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তের সাপেক্ষে সঠিক বিচারের দাবি জানাই।
নিহতের টুনুর পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, টুনু হত্যার সঠিক বিচার হলে হারতায় ভবিষ্যতে এমন হত্যাকান্ড ঘটানোর কেউ সাহস পাবে না।


হারতা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কৃষ্ণকান্ত বাড়ৈ বলেন, এই জামবাড়িতে এর আগেও বেশ কয়েকবার হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদি সেই হত্যাকান্ডের বিচার সঠিকভাবে হতো তবে টুনুকে নির্মমভাবে হত্যা করার সাহস পেত না। টুনু হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, আইন-শৃংখলা বাহিনী সুষ্ঠু তদন্ত করে অবশ্য প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনবেন।

উজিরপুর মডেল থানার তদন্ত ওসি মোঃ মাইনুল ইসলাম বলেন, এজাহারের ১নং আসামী মিতুকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং তাকে ৫দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড শেষে এবং তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পরে এ ঘটনার সাথে কে বা কাহারা জড়িত তা উদঘাটন করা যাবে। সুষ্ঠু তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হবে।