উদীচী-বনার বসন্ত উৎসবে করোনা জয়ের আহ্বান

সোমবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল ফালগুনের প্রথম দিন। একই সঙ্গে ভালোবাসা দিবসও। প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানানো, বাসন্তি সাজে নিজেকে রাঙিয়ে তুলতে ব্যস্ত শিশু, নারী-পুরুষসহ সব বয়সের মানুষ। করোনাকে পাত্তা না দিয়ে মানুষের ঢল নামে উদীচ ও বরিশাল নাটকের বসন্ত উৎসবে। উৎসবপ্রিয় বাঙালি মিলিত হয় এক সমোহনায়। সবার কণ্ঠে উচ্চারিত হয় করোনামুক্ত রঙিন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় শুরু হয় বসন্তবরণ উৎসব। মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তের বাসভবন বর্তমান সরকারি বরিশাল কলেজ চত্ত্বরে তমাল তলায় আয়োজিত বস্ত উৎসব প্রাণের মিলনমেলায় রূপ নেয়। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদ ও বরিশাল নাটক স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করলেও সেষ পর্যন্ত আর সংক্ষিপ্ত থাকেনি। বাসন্তি বিকেলে এসো স্নাত হবো আনন্দধারায় শিরোনামে অনুষ্ঠিত বসন্ত উৎসবে মানুষের ঢল নামে। শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা মাতিয়ে রাখে সবাইকে। করোনার মধ্যেও বদ্ধ জীবনে এমন আয়োজনে খুশি তারা। আগামীতে করোনামুক্ত বিশ্ব কামনা করেন তারা।
বাঙালি যে উৎসবপ্রিয় তার প্রমাণ মিলেছে উদীচী ও বরিশাল নাটকের বসন্ত উৎসবে। করোনা ও অমিক্রণ থেকে সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, করোনাকে জয় করে রঙিন বাংলাদেশ গড়তে হবে। আমরা অবশ্যই করোনাকে জয় করার পথে হাঁটছি। সবাই মিলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে।
‘আজ সবার রঙে রঙ মিশাতে হবে, ওগো আমার প্রিয় তোমার রঙিন উত্তরীয়...’ রবীন্দ্রনাথের এই গান। সঙ্গে সঙ্গে উদীচী এবং বরিশাল নাটকের কর্মীরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় আগত অতিথি, দর্শক-শ্রোতাদের। করোনার কারণে আয়োজন সীমিত করা হয়।
বসন্ত উৎসব উপলক্ষে সরকারি বরিশাল কলেজের শতবর্ষী তমালগাছসহ নান্দনিক সাজে মঞ্চ সাজানো হয়। মানুষের সরব উপস্থিতি বসন্ত উৎসব বর্ণিল ও রঙিন হয়ে ওঠে। একটা সময় পুরো মাঠ জুড়ে কেবল হলুদের ছাড়াছড়ি চোখে পড়ে।
সভাপতি বর্জিত বসন্তের প্রথমদিন নাগরিকদের স্বাগত জানান বরিশাল নাটকের সভাপতি কাজল গোষ। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সরকারি বরিশাল কলেজেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্বাস উদ্দিন খান। শুভেচ্ছা জনিয়ে কথা বলেন, শিশু সংগঠক জীবন কৃষ্ণ দে, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যালণ, মুকুল দাস, বরিশাল বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নজমুল হোসেন আকাশ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট বিশ্বনাথ দাস মুনশী, উদীচীর সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য আজমল হোসেন লাবু, সরকরি বরিশাল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. নাছিরউদ্দিন, কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক আবুদ সামাদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের বিভাগীয সাংগঠনিক সম্পাদক বাসুদেব ঘোষ, বরিশাল নাটক সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী, উদীচী বরিশালের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু বিশ্বাস।
উদীচী শিল্পীকর্মীদের শুচনা সঙ্গীতের পর বরিশাল নাটক পরিচালিত আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিশুরা আবৃত্তি পরিবেশন করে। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে মিঠুন রায়, কমল ঘোষ, বাঁধন বিশ্বাস, মুক্তা সিকদার, পিংকি সাহা, মুনিয়ার রহমান রচি, চন্দ্রিমা ব্যানার্জী।
একক আবৃত্তি পরিবেশন করে কাজী সেলিনা, সুজয় সেন গুপ্ত, আশরাফুর রহমান সাগর, সামসুন নাহার নিপা, রাখি সায়ন্তনী, কমল ঘোষ।
উদীচী বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ বলেন, অন্যান্য বছর জগদীশ সারস্বত স্কুল মাঠে বসন্ত উৎসবের আয়োজন হতো। করোনার কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে আরও বড় পরিসর নিয়ে অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবন বর্তমান সরকারি বরিশাল কলেজ প্রাঙ্গনের তমাল তলায় বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়।