উদীচী বৈশাখী মেলার সঙ্গে যুক্ত ঢাকী, মাইক, লাইট ও ডেকরোটর কর্মীরা পেল খাদ্য সহায়তা

করোনা থমকে দিয়েছে জীবনযাত্রা। কর্মব্যস্ত সাধারণ মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন। প্রতি বছর এই সময় উদীচী ও বরিশাল নাটকের কর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করতো উদীচী বৈশাখী মেলা এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার উপকরণ তৈরিতে। বৈশাখী মেলা ও মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে ঢাক বাদক, মাইক, লাইট ও ডেকরোটর অর্ধশতাধিক বিশেষ কর্মীপরিবার। করোনার কারণে এরাও কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
বুধবার বেলা ১১টায় উত্তর মল্লিক রোড উদীচী ভবনে উদীচী বৈশাখী মেলা ও মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে যুক্ত কর্মহীন এই কর্মীপরিবারের হাতে খাদ্য সামগ্রি দিয়ে পাশে দাঁড়ায় উদীচী ও বরিশাল নাটক।
উদীচী ভবনে উপস্থিত থেকে বিশেষ শ্রমে নিযুক্ত কর্মীদের হাতে খাদ্য সহায়তা তুলে দেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
উদীচীর নিজস্ব অর্থায়নে ৫০জন বিশেষ এই শ্রমিকের প্রত্যেককে ৫ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, দুই কেজি আলু, এক কেজি পিঁয়াজ, সাবান ও কাপড়কাচার গুড়া দেওয়া হয়। এর মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাবান ও গুড়া দেন সোনিয়া আল আকসা এবং সুদীপ কুমার নাথ।
উদীচী জানায়, বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে উদীচী বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে উদীচী বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। একই সঙ্গে প্রভাতী অনুষ্ঠান ও মঙ্গল শোভাযাত্রারও আয়োজন করে। নববর্ষে সর্বস্তরের নাগরিকদের নিয়ে রাখি উৎসব, ঢাক উৎসব ও মঙ্গল শোভা যাত্রা সম্পন্ন করতে উদীচী এবং বরিশাল নাটক কর্মীদের বাইরে ব্যপক ভূমিকা রাখে ডেকরেটর কর্মী, ঢাক বাদক, মাইক (সাউন্ড) কর্মী, আলোকসজ্জা (লাইট) কর্মী এবং ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি শ্রমিকরা। যাদের সহযোগিতা ছাড়া এই আয়োজন অসম্পূর্ণ থাকে। সেইসব কারিগরি শ্রমিকরা এবছর করোনার কারণে কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এই ধরণের শ্রমিকরা সাধারণতা কারো কাছে হাত পাততেও সংকচ বোধ করেন। উদীচী তাঁর সীমিত সামর্থ দিয়ে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছে। কর্মহীন অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে উদীচীর সদস্যরা বিশেষ তহবিল সংগ্রহ করে তাদের পাশে থাকবে।
খাদ্য সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, উদীচী সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে। বৈশাখী মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে যুক্ত ঢাক বাদক, মাইক, লাইট ও ডেকরোটর কর্মীদের হাতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়ে ব্যতিক্রম সৃষ্টি করেছে। এইভাবেই সব পেশার সঙ্গে যুক্তদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রি পৌঁছে দিতে আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, সরকার কর্মহীন শ্রমিকদের পাশে আছে। খাদ্য সহায়তা নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনও। কিন্তু আমাদের সতর্ক থেকে এই সহায়তা দেওয়া দরকার। কোনভাবেই কর্মহীনদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে ঘরের বাইরে এনে ভীড় বাড়ানো সঠিক হবে না। কর্মহীন যারা তাদের খুঁজে বের করে বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সামগ্রি পৌঁছে দিতে পারলে বেশি ভালো হয়। করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় ঘরে থাকাটাই হচ্ছে প্রধান কাজ। একই সঙ্গে করোনা নিয়ে যেন কেউ গুজব সৃষ্টি না করে সেব্যাপারেও সতর্ক থাকতে বলেন তিনি। এই সময় যারা করোনা নিয়ে গুজব ছড়াবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন জেলা প্রশাসক।
খাদ্য সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উদীচীর সাবেক সভাপতি ও শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল নাটকের সভাপতি ও বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ, উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি অ্যাড. বিশ^নাথ দাস মুনশী, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য ও বরিশাল নাটকের সাবেক সভাপতি আজমল হোসেন লাবু, উদীচী বরিশাল নাটকরে সংগঠক সামসুদ্দিন কামাল, উদীচী বরিশালের সাধারণ সম্পাদক ¯েœহাংশু কুমার বিশ^াস, বরিশাল নাটকের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহাসহ উদীচী ও বরিশাল নাটকের কর্মীরা।