একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক

একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক

 শনিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দুই সিটিতে মোট ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন ভোটার তাদের বোটাধিকার প্রয়োগ করে মেয়রসহ কাউন্সিল নির্বাচন করবেন। ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ পর্যবেক্ষণ করবে ঢাকার গুত্বপূর্ণ দুই সিটির নির্বাচন। বাংলাদেশে ভোট মানে উৎসব। সেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এমনটা চায় সারা দেশের মানুষ। সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনেরও নানা উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেছে। ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় আছেন। তারপরও আগের অনেক নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছিল। আমরা চাই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন নিয়ে যেন তেমন কোন প্রশ্ন না ওঠে। সেব্যাপ্যারে সত্যিকার অর্থেই নির্বাচন কমিশন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। 


ঢাকার নির্বাচন ষুষ্ঠু ও সুন্দর করার লক্ষ্যে বহিরাগতরা যাতে ঢাকায় যেতে না পারে সেজন্য লঞ্চ-স্টীমার বন্ধ করা হয়েছে। আমরা জানি না, বাস ট্রেনের ওপরও এমন নিষেধাজ্ঞা আছে কি না। থাকার কথা। আমরা বিশ^াস করি সাধারণ মানুষ ভোটে প্রভাব বিস্তার করে না। তারপরও তাদের ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে। হাজার হাজার যাত্রীকে ঢাকার যাত্রাপথে আটকে দেওয়া হয়োছে। সুন্দর নির্বাচনের পথে ঝুঁকি এড়াতে হয়তো ঢাকায় মানুষ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে সুন্দর নির্বাচনের পথে বাধা হচ্ছে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দল, দলের নেতা-কর্মী এবং সার্বিকভাবে দায়িত্ব পড়ে নির্বাচন কমিশনের ওপর। নির্বাচন কমিশন চাইলে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে সমস্যা হবার কথা নয়।
গ্রামে একটা কথা আছে, ‘দই ভেবে খাইলাম চুন, আমার গালের ছাল গেল’। ঘর পোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখলে তো ভয় পাবেই। আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা এমন কিছু কূটকৌশল দেখেছে, তাই আর নির্বাচন নিয়ে আশ^স্ত হতে পাররেছন না। একাধিক নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল উঠেছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দিন অনেক ক্ষেত্রেই সমানভাবে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি এমন অভিযোগও উঠেছে। ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে যেন এমন কোন অভিযোগ না ওঠে। ভোটাররা যেন তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন। সেব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে থাকতে হবে।


নির্বাচন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে শুক্রবার বিকেল চারটায় বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছদ ৫ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে শুক্রবার (গতকাল) ৩১ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে পহেলা ফেব্রুয়ারী রাত ১২ টা পর্যন্ত রাজধানীমুখী সকল লঞ্চ, ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও স্পিডবোট চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। ওই সিদ্ধান্তের কারণে হাজার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পরে। হয়তো নির্বাচনী আচরনবিধির কারণেই এটুকু দুর্ভোগ আমাদের সহ্য করতে হচ্ছে। তারপরও একটি সুন্দর নির্বাচন যেন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয়মাসের কারাদ- অথবা উভয়দ-ে দ- দেওয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে নির্বাচনের পরেও সেই প্রার্থীর প্রার্থিতাও সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন। আইন অনুযায়ী, এইসব বিধিমালা প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ভোটে তাৎক্ষণিক আদালত বসিয়ে ফৌজদারি অপরাধের বিচার করবেন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা। আবার বড় কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে তার জন্য মামলাসহ নানা উদ্যোগের কথা বলেছেন।


ভোটের মাঠে শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবির প্রায় ৫০ হাজার সদস্য। এর বাইরে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত করা হয়েছে ৪২ হাজার ফোর্স। এর মধ্যে সাধারণ কেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর ১৬ জন করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে ফোর্স মোতায়েন থাকবে।
আমরা চাই, কেবল কেতাবি নিয়ম নয়, বাস্তবে যারাই নির্বাচনের দিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা নেয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন অবশ্যই নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচনটি সম্পন্ন করবেন এটা আমরা বিশ^াস করি।