এটি কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় শনাক্ত যুবক ইকবাল হোসেনকে ‘ভবঘুরে’ আখ্যায়িত করা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
তিনি বলেন, ‘যদি সে রাস্তার লোক হয়, তাহলে কী করে সে পবিত্র কোরআন শরিফ চিনল? নতুন কোরআন শরীফের বই কোথা থেকে আনল, কে দিল? ভিডিওতে দেখা গেছে হনুমানের গদাটা এমনভাবে সরালো যেন হাতের কিছু না হয়। আবার সেখানে পবিত্র কোরআন শরিফ দিয়ে দিল, এটি কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানবাজারে তার বাসায় যান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
তারা এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে একান্তে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এসব বলেন।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, টেলিভিশনে দেখলাম কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার নামের আগে ‘ভবঘুরে’ শব্দ জুড়ে দেয়া হয়েছে। কখনো কখনো এমন যাদের ধরা হয়, কখনো বলে পাগল, না হলে বলে ভবঘুরে। এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। চক্রান্তকারীরা পেছনে আছে। তাদের বের করে আনতে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।
বৈঠক শেষে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, শুধু প্রশাসন দিয়ে শতভাগ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। এটা সারা পৃথিবীর বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তি ও সম্প্রীতির একটা বার্তা দিয়েছেন। শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশ আমরা করছি। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা শান্তিপূর্ণ বোঝাপড়া যদি না থাকে, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা না থাকে, সেখানে দীর্ঘমেয়াদে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন। এটা প্রধানমন্ত্রীর বার্তা। এই বার্তা নিয়েই আমি এসেছি। আমাদের পক্ষ থেকে সম্প্রীতির বার্তা আমরা অবশ্যই দিয়ে যাব।
রানা দাশগুপ্ত কিছু ক্ষোভের কথা বলেছেন উল্লেখ করে নওফেল বলেন, দেশের যেকোনো নাগরিক সংক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ অবশ্যই করতে পারেন। এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি আমরা অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল। পাশাপাশি আহ্বানও জানাই, গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় সংক্ষুব্ধ সবপক্ষকে আমাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য। সংক্ষুব্ধ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। যে ঘটনা ঘটেছে, এতে সংক্ষুব্ধ হবেন সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কি সংক্ষুব্ধ নয়? আমরা সরকারে থাকা অবস্থায় অপরাজনৈতিক শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি যে কাজটি করছে সেটাতে তো আমরাও সংক্ষুব্ধ।
নওফেল আরো বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। তাই বিচলিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। সেটি আমি রানা দাশগুপ্ত মহোদয়কে বলেছি। এটার একটা চ্যালেঞ্জ আছে, সম্পদের সীমাবদ্ধতার বিষয়ও আছে। চট্টগ্রাম শুধু নয়, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং রংপুরসহ আরো বিভিন্ন এলাকায় অনেক ঘটনা ঘটেছে। সরকার সেগুলো নিয়ে শতভাগ তৎপর আছে, এখানে কোনো ধরনের নির্লিপ্ততা নেই। আমরা শতভাগ সচেষ্ট আছি। ইতোমধ্যে অনেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা আছে। তবে দীর্ঘসূত্রিতা থাকলেও বিচারিক প্রক্রিয়ার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। এই বাংলাদেশেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচারও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছিল ২১ বছর পর।