করোনা: পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিরাপদ রাখুন

করোনা: পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিরাপদ রাখুন

করোনা ভাইরাস কিংবা (কোভিড-১৯) নিয়ে নানা ধরণের বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কম শিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিতদের চেয়ে শিক্ষিত মানুষ এই বিভ্রান্তি বেশি ছড়াচ্ছেন। এমন অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, বিত্তবানরা নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী হয়েছেন। কেউ কেউ অবশ্য মাঠে আছেন দাইয়ত্ব নিয়েই। কিন্তু যারা স্বেচ্ছায় অন্তরীণ হয়েছেন তারা একবারও ভাবছেন না তাঁর বাড়িতে যে পরিচ্ছন্নতাকর্মী যাচ্ছে তার মাধ্যমে করোনা জিবানু তাঁর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। কোন ধরণের ভীতি সৃষ্টি করবার জন্য বলছি না। সারা দেশের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। জাতিকে করোনা মুক্ত করতে হলে আমাদের আগে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিরাপদে রাখতে হবে। এরপর চিকিৎসক, গণমাধ্যমকর্মী, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং জনপ্রশাসনকর্মীদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারসহ সকলের প্রতি আহ্বন পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আগে নিরাপদ রাখুন।

গতকাল ঢাকায় খালি হাতে এবং মাস্ক ছাড়া পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজ করতে দেখা গেছে। এব্যাপারে তাদের তেমন কোন অভিযোগও নেই। সারা বছর তারা যেভাবে কাজ করে সেভাবেই কাজ করে চলেছে। এই কাজ করতে করতেই হয়তো একদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। তাঁর সেই মৃত্যু করোনায় না কি অন্য কোন রোগে হয়েছে সেটা হয়তো জানরাও যাবে না। কিন্তু শংকার কথা হচ্ছে যারা দিনে-রাতে আমাদের বাসা-বাড়ি এবং নগরের জঞ্জাল ছাপ করে চলেছে তাদের নিরাপত্তায় কোন ব্যবস্থাই নেই। এব্যাপারে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকেও কোন কথা শোনা যাচ্ছে না।

আমরা লক্ষ করেছি, গত মাসের ২০ তারিখের পর থেকে সারা দেশের চিকিৎসকরা তাদের ব্যক্তিগত রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ষড়ঞ্জাম (পিপিই) না থাকার অজুহাতে এক রকম সেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তারা। পরে অবশ্য পিপিই সরবরাহ করার পর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার চিত্র কিছুটা বদলায়। তবে সেটা স্বাভাবিক হয়নি। করোনা ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে এই চিত্র একদমই ভিন্ন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সারা দেশ থেকে নানান রোগের রোগি তাদের কাছে আসে। তাদের মধ্যে কোন রোগীর শরীরে করোনা আছে সেটা বোঝা দায়। আর একজন রোগি যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে এসেই পড়ে, তাহলে ওই রোগীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনা। এটা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। তাই সরকার এবং দেশের নাগরিকরা আগে চিকিৎসকদের সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার দাবি তোলেন। সেই অনুযায়ী সরকারও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে।

করোনা ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে চিকিৎসকরা সেবা বন্ধ করে দিয়ে যথার্থই করেছেন বলে মনে করেন অনেকে। তাহলে যারা প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের শহর-বন্দর পরিচ্ছন্ন রাখছেন তাদের কি পরিচ্ছন্ন কাজ বন্ধ রাখা উচিত ছিল না? কোন ধরণের ব্যক্তিগত সুরক্ষা ষড়ঞ্জাম ছাড়াই তারা পরিচ্ছন্নতা কাজ অব্যাহত রেখেছেন। বাসা বাড়ি থেকে ময়লা নিয়ে আমাদের বাড়ি-ঘর পরিচ্ছন্ন রাখতে সহযোগিতা দিচ্ছেন। তারা কিন্তু কার করোনা আছে বা কার নেই সেটা ভেবে ময়লা অপসারণ করছেন না। সব বাড়ি, হাসপাতাল এবং রাস্তা-নর্দমার ময়লা পরিচ্ছন্ন করছে। এই ময়লা আনা নেওয়ার মাঝে কিন্তু এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাই আপনার আমার বাড়িতে করোনার জীবানু পৌঁছে দিতে পারে। যদিও আমরা এখনো ঝুঁকির মধ্যে নেই। তারপরও বলতে হচ্ছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পিপিই না দিলে চিকিৎসক, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিদের অজান্তেই বাড়িতে করোনা জীবানু পৌঁছে যাবে।

আমরা করোনা থেকে মুক্ত থাকতে মাস্ক এবং গ্লোভস ব্যবহার করছি। কিন্তু এসব মাক্স ও গ্লভস রাস্তায় যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছি। সেগুলোও পরিষ্কার করছে আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। করোনা ওয়ার্ডের গজ, তুলাসহ চিকিৎসায় ব্যবহৃত অবশিষ্ট অংশও অপসারণ করছে আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। তাই আমাদের মনে হচ্ছে আগে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুরক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের উচিত আগে আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পিপিই দেওয়া। তারপর চিকিৎসক, গণমাধ্যম, পুলিশ, সেনাবাহিনী, জনপ্রশাসনের কর্মীদের পিপিই দেওয়া হোক।