করোনার ঝুঁকি কমাতে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না

করোনার ঝুঁকি কমাতে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না

করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি কথা বেশি প্রচার হচ্ছে। সচেতন থাকুন, সতর্ক থাকুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। করোনা সংক্রমণ এড়াতে বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা এই নির্দেশনা দিয়েছে। বাংলাদেশেও এই নির্দেশনা মেনে চলার জন্য মাঠ প্রশাসনের ব্যাপক প্রচারণা অব্যাহত আছে। যাতে করোনা জীবানু সহজে বিস্তার ঘটাতে না পারে সেজন্যই এই প্রচেষ্টা। শহর-নগর-বন্দরে নির্দিষ্ট দূরত্বে চতুর্ভূজ কিংবা বৃত্ত এঁকে দিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করাও চেষ্টা চলছে। কিন্তু  বাস্তবে মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কি না সেটা বোঝা যাচ্ছে না। শিক্ষা বঞ্চিতরা কিছুটা নির্দেশনা মানলেও শিক্ষিতরা নির্দেশনা মানার ক্ষেত্রে উদাসীন। শিক্ষিত মানুষ সামাজিক দূরত্ব চিহ্ন দেখে তেমন একটা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন না। তারা উল্টো দূরত্ব বজায় না রেখে আরো বেশি কাছাকাছি অবস্থান করছেন।

করোনা ঝুঁকির মধ্যে বরিশাল নগরের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে কয়েকটি কুকুরকে দেখা গেছে কমপক্ষে তিন-চার ফুট দূরে দূরে থেকে শুয়ে আছে। জানি না তারা কি আমাদের সচেতন করতেই এইভাবে শুয়েছিলো কি না? একই অবস্থা দেখা গেছে বরিশালের নদী বন্দরে। সেখানে প্রতিদিন ২০০ ছিন্নমূল শিশু ও অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। সেখানে শিশুরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে দুই সারিতে বসে থাকে। গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিদিন রাতে তাদের রান্না করা খাবার পৌঁছে দেন। এখানে অবশ্য আগে থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দিষ্ট চতুর্ভূজ এঁকে দেওয়া আছে। সেই চতুর্ভূজের মধ্যেই বসে অপেক্ষা করে তারা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে যে কুকুরগুলো শুয়েছিল সেখানে কোন চিহ্ন দেওয়া ছিল না। তারপরও তারা দূরত্ব বজায় রেখেই শুয়েছিল। আমাদের মনে হচ্ছে কুকুরগুলো চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের বোঝাতে চেয়েছে। করোনা থেকে বাঁচতে হলে তোমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলো। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত শিশু ও অসহায় মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করলেও শিক্ষিত মানুষরা ওই নির্দেশনা মানতে চাচ্ছেন না। যে সময় ছিন্নমূল মানুষ নিরাপদ দূরত্বে থাকার চেষ্টা করছে, ঠিক তখন শহরে যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তারা কিন্ত ভীড় বাড়াচ্ছেন। যাদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে এবং যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তাদের মধ্যে কোন ধরণের দূরত্বই থাকছে না। জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব এবং গণমাধ্যমকর্মীরা বারবার অনুরোধ জানাচ্ছেন ত্রাণ বাড়িতে পৌঁছে দিতে কিংবা দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ বিতরণ করতে। কিন্তু ওই নির্দেশনা মান হচ্ছে না। সারা দেশে ত্রাণ বিতরণের পদ্ধতি দেখলে মনে হবে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরজ করছে। মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ আদায় করার অনুরোধ জানালেও মসজিদের ভীড় কমানো যায়নি। এই ভীড় কমাতে কঠোর হলে ধর্মীয় কাজে বাধাদানের অভিযোগ উঠতে পারে। সেই চিন্তায় কঠোর হতে পারছে না প্রশাসন। এসব ক্ষেত্রে মানুষ সচেতন না হলে নির্দেশনা দিয়ে কাজের কাজ হবে না।

একদিকে প্রশাসন দূরত্ব বজায় রাখতে দিন রাত পরিশ্রম করছেন। অন্যদিকে নাগরিকরা সড়কে-বন্দরে জড়ো হয়ে আড্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন। মাঠে-ময়দানে খেলাধূলার নামে ভীড় বাড়াচ্ছেন। বরিশালসহ গোটা দেশের পাড়ায়-মহল্লার চিত্র এখন এমনই। নগরের পোর্টরোডে গেলে মনে হবে কোন জনসভায় যোগ দিতে মানুষ এসেছে। গতকাল নগরের শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেনে ভীড় জমিয়ে খেলতেছিল একদল যুবক। পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। পুলিশ যাওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আবার একই ভীড় জমে সেখানে। একই অবস্থা টিসিবির পন্য ক্রয় থেকে শুরু করে হাট-বাজারের চিত্র। এই চিত্র পাল্টাবে কে? আমরা যদি সচেতন না হই, কেবল প্রশাসন দিয়ে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। 

করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের সহযোগী হয়ে পাশে থাকও একান্ত দরকার। এই দরকারের সুযোগ নিয়ে একদল উৎসুক মানুষ নগরে ভীড় বাড়াচ্ছেন। মনে হবে তারা চিড়িয়াখানায় যন্তু-জানোয়ার দেখার জন্য রাস্তায় নামছেন। যদিও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিয়ে আছে ভিন্ন মত। কেউ বলছেন সামজিক দূরত্ব রাখলে মানুষের সহযাগিতা করবে কিভাবে? এরপর বলা শুরু হয় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সতর্ক ও সচেতন থেকে করোনা মোকাবেলায় কাজ করতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশনা মানছেন ক’জন।

করোনার ঝুঁকি কমাতে হলে অবশ্য অবশ্য সাধারণ মানুষকে ভীড় এড়িয়ে চলতে হবে। একান্ত প্রয়োজন না হলে বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। একই সঙ্গে কোন ধরণের গুজব না ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে সাহস যোগাতে হবে।  প্রশাসন ও গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করতে হবে। সবাই মিলে করোনা নামের দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে।