কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়, সরকারের সদিচ্ছায় কৃষকদের স্বস্তি

কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়, সরকারের সদিচ্ছায় কৃষকদের স্বস্তি
গত ১২ মে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক সিকদার ধানের দাম না পাওয়ায় ধান ক্ষেতে আাগুন দিয়ে পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানায়। ধান উৎপাদনের খরচের পর শ্রমিক না পাওয়া এবং ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মজুরী দিয়ে ধান কেটে ঘরে এনে কৃষককে ৫০০ টাকায় ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে সেদিন কৃষক আব্দুল মালেক ওই প্রতিবাদ জানায়। ঘটনাটি সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ণ সৃষ্টি হয়। এরপর টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষ কৃষকের পাশে দাঁড়ায়। মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূীচ পালন করে তারা। বেশ কয়েকটি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কর্মীরা বিনা পারিশ্রমিকে কৃষকের ধান কেটে দেন। এমন দৃশ্য এখন খবরের কাগজ এবং টেলিভিশনের মূল খবরে পরিণত হয়েছে। আমরা হয়তো একদিন কৃষকের ধান কেটে দিতে পারবো। তাতে কি কৃষকের সমস্যার সমাধান হবে? তাতে কি কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য পাবে? পাবে না। কালকে কৃষককে ওই কম মূল্যেই ধান বিক্রি করতে হবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে। কৃষক ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে ধান পুড়িয়ে দেবে আর ধানের যত কার্বোহাইড্রেট তা চুষে নেবে মধ্যস্বত্বভোগীরা। যারা রোদে পুড়বে না, বৃষ্টিতে ভিজবে না এবং ফসল ফলানোর কোন অংশের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না তারাই হবেন লাভের ভাগিদার। সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে কৃষকদের কষ্ট যেমন দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে, তেমনি সরকারও বিষয়টি দ্রুত অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে। কৃষকদের বাঁচাতে সরকারের বর্তমান সিদ্ধান্ত হচ্ছে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। সরকারের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে কৃষি বিভাগসহ সরকারের সব বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকের কাছ ধান কিনতে উদ্বুদ্ধ করছেন। এমন উদ্যোগকে সাদুবাদ জানাতেই হয়। এটাই হচ্ছে কৃষি এবং কৃষকবান্ধব সরকারের ভূমিকা। কৃষকের মনে স্বস্তি ফেরাতে এটা অনন্য উদ্যোগ। এই উদ্যোগের ফলে কৃষক এখন অন্তত ১ হাজার ৪০ টাকায় ধান বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে। এই উদ্যোগের কারণে কৃষক আবারো ধান চাষে আগ্রহী হবেন। আমরা সব ক্ষেত্রেই সরকারে এমন ইতিবাচক ভূমিকা আশা করি। সরকারের উদ্যোগকে সাদুবাদ জানিয়ে সরকারের কাছে দাবি জানাতে চাই, আগামীতে যেন কোন কারণ দেখিয়ে কৃষককে বঞ্চিত করে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে ধান কেনা না হয়। যারা কৃষকের কাছ থেকে কম মূল্যে ধান কিনে সরকারের কাছে বিক্রি করে লাভের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠেছেন। তারা চাইবেন, খোড়া যুক্তি দেখিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে। কোন যুক্তি দিয়ে যেন সরকারের বর্তমান সিদ্ধান্তকে অন্য দিকে নিয়ে যেতে না পারে। প্রয়োজনে কৃষিতে সরকার যে প্রনোদনা দিচ্ছে, সেই প্রনোদনা দিয়ে ধান সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়ে কৃষকই সরকারের কাছে বিক্রি করবে। আমরা বিশ^াস করি বর্তমান সরকার সেই ভূমিকা রাখতে সক্ষম এবং সচেষ্ট হবেন। সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত বহল রাখতে পারে তাহলে আগামীতে আর ধান এবং চাল আমদানী করতে হবে না। আমাদের দেশের কৃষকরাই আমাদের সেই সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবেন। সরকারের সদিচ্ছায় কৃষকদের স্বস্তি যেন স্থায়ী হয়।