৬৫ দিন পর উত্তল সাগরে মাছ শিকারে বরগুনার জেলেরা

৬৫ দিন পর সাগরে নেমেছেন বরগুনার উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। অন্যদিকে পায়রা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর সর্তকতা সংকেত জারি থাকায় জেলেদের উপকূলের কাছাকাছি থেকে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও উত্তল সাগরে শুক্রবার (২৩ জুলাই) দিনগত রাত থেকে কেউ আবার শনিবার (২৪ জুলাই) ভোর থেকে জাল, ফিশিং বোটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে সাগরে নেমে পড়েছেন।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে জেলার শতাধিক মাছঘাট থেকে বঙ্গোপসাগরে রওনা দেন জেলেরা। এদিকে, মাছ ধরাকে কেন্দ্রে করেই বেকার জেলেরা ফের কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।এতে সরগরম হয়ে উঠবে মাছের আড়তগুলো। অন্যদিকে, বরফকলগুলো আরও সচল হয়ে উঠছে।
আবারও ইলিশ ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা। ট্রলারগুলো মাছ ধরে কয়েকদিন পর ঘাটে ফিরতে শুরু করলেই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে।
গভীর সাগরে ইলিশ পাওয়ার আশায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দলবেধে বেরিয়ে পড়ছে জেলেরা। তাদের প্রত্যাশা নিষেধাজ্ঞার ফলে আগের চেয়ে ইলিশ বেশি ধরা পড়বে সাগরে। এর আগে, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
সমুদ্রগামী একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার প্রাদুর্ভাবে ও ৬৫ দিনের সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কারণে বেকার বসে থেকে ধার-দেনা করে চলতে হয়েছে প্রস্তুতির শেষ দিনে শুক্রবার জেলেরা নতুন করে বিনিয়োগ করে সমুদ্রে রওনা করে জেলেরা। জেলেরা জানিয়েছেন, করোনা প্রকোপে ধারদেনা শেষে সমুদ্রে নামার পূর্বে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সমুদ্রে নামছেন তারা।
মৎস্য বিভাগ বলছে, নিষেধাজ্ঞায় সাগর ও তার মোহনায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় জেলেরাও মাছ ধরা থেকে বিরকদনম অপেক্ষা করলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত রূপালি ইলিশ। ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জেলেদের ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। ৬৫ দিন পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে কষ্ট হলেও আবারও নিজ পেশায় ফিরতে পেরে খুশি জেলেরা।
এ দিকে আড়ৎদাররাও তাদের আড়ৎ নতুন করে সাজিয়ে নিচ্ছেন। নতুন করে আবার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন ইলিশ বিক্রির জন্য।
সাগরে যাত্রাকালে জাকির মাঝি, মোস্তফা মাঝি ও নুরুল ইসলাম মাঝি জানান, ৬৫ দিন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার পর শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন তারা। ইলিশ মাছ ধরা একমাত্র পেশা হওয়ায় এতোদিন অলস সময় পার করতে হয়েছে তাদের। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় ধার-দেনা করে সংসার চালিয়েছেন তারা। এখন সমুদ্রে ইলিশ ধরা পড়লে সামনের দিনগুলো ধার-দেনা পরিশোধ করতে পারবে বলে আশা তাদের।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, অলস সময় কাটিয়ে জেলেদের অনেক আশা নিয়ে সাগরে পাঠানো শুরু করেছি। আশা করছি ভালো মাছ পাবেন জেলেরা। আবারও জেলেদের মুখে হাসি ফুটবে। জেলেসহ আমাদের ধারদেনাও শোধ করতে পারবো।
পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্তু কুমার অপু জানান, সাগরে মাছসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভাণ্ডার সুরায় চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। আজ থেকে ইলিশসহ অন্য সব ধরনের মাছ শিকারে আর কোনো বাধা নেই।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বরগুনা জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৩৬ হাজার ২২ জন। তার মধ্যে সমুদ্রগামী ২৭ হাজার ২শ ৭৭ জেলে। সকলেই ৬৫ দিনের খাদ্য সহায়তা ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা কেবলমাত্র চট্টগ্রামের ২৫৫টি ফিশিং বোডের জন্য বলবৎ ছিলো। পর বছর থেকে সাগরে মাছ আহরণের জন্য ব্যবহৃত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে জেলেরা আন্দোলন করলেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে। এতে চরম বিপাকে পড়েন এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলে পরিবার, ট্রলার মালিক-শ্রমিক, আড়তদার, দাদনদার, বরফকলের সঙ্গে সম্পৃক্তসহ জাল প্রস্তুতকারী, তেল সরবরাহকারি, খাবার সরবরাহকারি লাখ লাখ পরিবার।