ক্ষুধার্ত কুকুর চিড়িয়াখানায় ঢুকে খেলো চারটি হরিণ

করোনার সংক্রমণ রোধ করতে দোকানপাট-হোটেলসহ সবকিছু বন্ধ থাকায় খাবার না পেয়ে রাজশাহী শহরের কুকুরগুলো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এমনি পাঁচ ক্ষুধার্ত কুকুর নগরের শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ঢুকে চারটি হরিণ ছিঁড়ে খেয়েছে।
শুক্রবার সকালে হরিণ চত্বরের ভেতরে এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে। কুকুরগুলো হরিণের কিছু অংশ খেয়ে ফেলেছে এবং বাকি অংশগুলো হরিণ চত্বরেই পড়ে ছিল। পরে চত্বরের ভেতরেই হতভাগ্য হরিণগুলোর দেহাবশেষ মাটি চাপা দেওয়া হয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সচিব এ ব্যাপারে চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়কের কাছে লিখিত প্রতিবেদন চেয়েছেন।
জানা যায়, ভোর রাতের দিকে পাঁচটি কুকুর চিড়িয়াখানায় হরিণের খাঁচায় ঢুকে তিন হরিণ শাবককে ধরে ফেলে। এ সময় মা হরিণ এগিয়ে গেলে কুকুরগুলো তাকেও আক্রমণ করে। চারটি হরিণ মারার পরে কুকুরগুলো আর সেখান থেকে বের হওয়ার পথ পায়নি। কর্মচারীরা সকালে কুকুরগুলোকে বের করে দেন। পরে হরিণগুলোর ছেঁড়া দেহাবশেষ চত্বরের ভেতরেই মাটিতে পুঁতে ফেলেন।
বিকেলে চিড়িয়াখানার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ভয়ার্ত চোখ মেলে তাকিয়ে রয়েছে স্বজন হারানো হরিণেরা। যেখানে মৃত হরিণের কবর দেওয়া হয়েছে সেই জায়গাটি ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা। তাদের চত্বরের ভেতরে ঢুকতেই তারা দূরে সরে যায়।
কর্মচারীরা জানান, চিড়িয়াখানায় গত তিন মাসে হরিণের ১৫টি বাচ্চা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৭৫টি হরিণ ছিল। কুকুরে খাওয়ার পর এখন রয়েছে ৭১টি।
শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। যোগাযোগ করা হলে চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল জানান, রাত ২টা পর্যন্ত তারা চিড়িয়াখানার পুকুরে কাজ করেছেন। লোকজন ছিল। তখন পর্যন্ত কুকুর ঢোকেনি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শহরের হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় কুকুরের খাবার সংকট।
তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ থাকার কারণে কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। শহরের কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে।
সমর কুমার পাল বলেন, তারা ধারণা করছেন কুকুরগুলো প্রথমে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করেছিল। বাচ্চাদের বাঁচাতে এলে মাকেও ধরেছে কুকুর।
কুকুর ভেতরে কীভাবে ঢুকল জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সচিব আবু হায়াত মো. রহমতুল্লাহ বলেন, সকালে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি দেখেছেন এক সময় হরিণ চত্বরের ভেতরে কিছু নির্মাণসামগ্রী ঢোকানোর জন্য একটা রাস্তা করা হয়েছিল। পরে সেটি বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কোনোভাবে এই বাঁশগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। অথবা কুকুরই ঢোকার চেষ্টা করার কারণে ফাঁক হয়ে গেছে। ওই দিক দিয়েই কুকুর ঢুকেছে।
তিনি বলেন, চার-পাঁচটি কুকুর চিড়িয়াখানার ভেতরেই থাকে। দর্শনার্থীদের দেওয়া খাবার খায়। এখন দর্শনার্থী ঢোকা বন্ধ রয়েছে। ওরাও অভুক্ত রয়েছে। তাই ভেতরে ঢুকে হরিণ শাবককে আক্রমণ করেছে। পরে মা ছুটে এসেছে মাকেও মেরেছে।
কুকুরগুলো এখনো রয়েছে, তাদের বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিড়িয়াখানার বিরাট জায়গা। কুকুর বের করে দেওয়ার জন্য ধরাও কঠিন। তবু ওই চেষ্টাই করতে হবে। আদালতের নির্দেশের কারণে কুকুর মারা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ককে একটি লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। প্রতিবেদন পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।