কয়লাভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সনাকের মানববন্ধন

কয়লাভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সনাকের মানববন্ধন

কয়লাভিত্তিক জ্বালানি বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে চাই কার্যক্রর নীতি বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

রোববার বেলা ১১টায় নগরীর অশি^নী কুমার হল চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নিয়ে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের দাবি তোলেন।

যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে ৩১ অক্টোবর ২০২১ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশে^র সবচেয়ে বড় সম্মেলন কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস বা কপ-২৬। এই সম্মেলনকে প্যারিস চুক্তি পরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশালের সভাপতি প্রফেসর শাহ্ সাজেদার সভাপতিত্বে এবং সনাক সদস্য শুভংকর চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অবস্থানপত্র পাঠ করেন ইয়েস সহদলনেতা নাজমুন নাহার সৌমি।

মানবন্ধনে কপ-২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপনযোগ্য দাবীসমূহ হল: জলবায়ু বিষয়ক নীতি নির্ধারণে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করেতে হবে; ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’ লক্ষ্যমাত্র অর্জনে আইএনডিসিসহ প্রশমন বিষয়ক সকল কার্যক্রমে উন্নত দেশগুলোর স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে; ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শতভাগ জ্বালানি উৎপাদনে উন্নত দেশগুলোকে পর্যাপ্ত জলবায়ু তহবিল, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কারিগরি সহায়তা প্রদানে সিভিএফ এর পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে দাবি উত্থাপন করতে হবে; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে উন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল প্রদান করতে হবে; জিসিএফসহ জলবায়ু তহবিলে ঋণ নয়, অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা অনুদান হিসাবে প্রদান করতে হবে; দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায় একটি ক্ষয়-ক্ষতি  বিষয়ক আলাদা তহবিল গঠন করতে হবে; ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন স্বচ্ছতার সাথে প্রস্তুতে একটি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে এবং ঝুঁকি বিনিময়ে বীমার পরিবর্তে অনুদানভিত্তিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে; জিসিএফ এর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিত করে যথাসময়ে ও দ্রুততার সাথে প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ ছাড় করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশে অভিযোজন এবং প্রশমন বিষয়ক ৫০ঃ৫০ অনুপাত মেনে অর্থায়ন করতে হবে।

মানবন্ধনে বাংলাদেশ সরকারের করণীয় বিষয়ে উত্থাপিত দাবীসমূহ হল: ২০২১ সালের পরে নতুন কোনো প্রকার কয়লা জ্বালানি নির্ভর প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থায়ন না করার ঘোষণা দিতে হবে; নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কপ-২৬ সম্মেলনে একটি আইনি সমঝোতা করতে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে; জীবন-জীবিকা, বন ও পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত পরিবেশের প্রভাব নিরুপন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে; একটি সুনির্দিষ্ট রোড়ম্যাপসহ প্রস্তাবিত ইন্ট্রিগ্রেটেড এনার্জি এন্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি)’তে কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে; জ্বালানি খাতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে প্রস্তাবিত ইন্ট্রিগ্রেটেড এনার্জি এন্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) প্রণয়ন করতে হবে; বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ খাতের জন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করে প্রশমন বিষয়ক কার্যক্রম স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে, এ খাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। 

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সনাক উপদেষ্টা আনোয়ার জাহিদ, সনাক সদস্য প্রফেসর টুনু রানী কর্মকার, স্বচ্ছতার জন্য নাগরিক কমিটির সহসমন্বয়ক খন্দকার মনিরুল আলম স্বপন, সদস্য রফিকুল আলম, জাহানারা বেগম স্বপ্না, জীবন কৃষ্ণ দে, প্রফেসর সত্য রঞ্জন রায়। এছাড়াও মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন এসোসিয়েশন ফর ইয়ুথ এন্ড ডেভেলপমেন্টের পক্ষে তামিম ইকবাল, সানজিদা জামান, বেলা বরিশালের সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন, রুপান্তর বরিশালের সমন্বয়কারী রাবেয়া বসরী, বরিশাল সবুজ আন্দোলনের আহবায়ক কাজী মিজানুর রহমান।