খুঁড়িয়ে চলছে বরিশালের সরকারি হাঁস-মুরগির খামার

খুঁড়িয়ে চলছে বরিশালের সরকারি হাঁস-মুরগির খামার
বরিশালের সরকারি হাঁস-মুরগির খামার খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। নিজস্ব দামি হ্যাচারি (ইনকিউবেটর) অচল হয়ে পড়ে আছে। খামারের অনেকগুলো শেড ও যন্ত্র দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুরানো দুটি হ্যাচারি সংস্কার করে কিছু বাচ্চা উৎপাদন করলেও সেটা চাহিদা পুরণ করতে পারছে না। জোড়াতালি দিয়ে কোন মতে চলছে খামারটি। খামারটি অনেকটা বখাটেদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। খামারের জায়গাও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। অনেকটা প্রাণহীন অবস্থায় পড়ে আছে খামারটি। জানা গেছে, ১৯৫৪ বরিশাল নগরের আমানতগঞ্জ এলাকার ১৮ জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল হাঁস-মুরগির এই খামারটি। বর্তমানে এই খামারে হাঁস পালন হচ্ছে না। কেবল কিছু বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আশির দশকের শেষ দিকে এর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। ফলে প্রয়োজনীয় যেসব সরষঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে, তা আর মেরামত করা হয়নি। খামারের বাচ্চা উৎপাদনের জন্য চারটি হ্যাচারি সবকটি অকেজো ছিল। কয়েক বছর আগে দুটি হ্যাচারি মেরামত করে কোনমতে কিছু বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, খামারের বিভিন্ন স্থান আগাছায় ভরা। খামারে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য ১২ টি শেডের মধ্যে বেশিরভাগ খালি পড়ে আছে। খালি শেডগুলোতে ইঁদুরের আস্তানা। আবর্জনায় ছেয়ে আছে। দুটিতে কিছু বাচ্চা রায়েছে। তবে এই খামারে কোন হাঁস কিংবা হাঁসের বাচ্চা নেই। নামেই হাঁস-মুরগির খামার। খামারের চারদিকে সীমানা প্রাচীর নেই। প্রাচীর না থাকায় সেখানে বখাটেদের উৎপাত রয়েছে। দিঘির পাড় ঘেসে অনেক ব্যক্তিগত স্থাপনা উঠেছে। এখানকার কর্মকর্তারা জানান, আগের চেয়ে বাজেট কিছুটা বাড়লেও সেটা বাচ্চা ফুটানো এবং খাবারে খরচ হয়ে যায়। চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত বাজেট না পাওয়া চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া খামারে সীমানা প্রাচীর নেই। ফলে স্থানীয় বখাটেরা খামারের ভেতরে আড্ডা দেয়। খামারের ১৮ একর জায়গার মধ্যে ১২ একর জুড়ে একটি দিঘি। দিঘির আশপাশের বাসিন্দারা যে যেভাবে পারছে , দিঘি ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খামারে এক কর্মী জানান, এখন খামারটি বন্ধই বলা চলে। ৯০-এর দশকে প্রতি বছর খামারের জন্য যে বরাদ্দ আসতো বর্তমানে তার চেয়ে অনেক কম বরাদ্দ আসছে। অন্য এক কর্মী জানান, বর্তমানে বছরে ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ওই বরাদ্দের সবটাই বাচ্চা উৎপাদন ও খাবার খরচে ব্যয় হয়। এখানে আরো বরাদ্দ দেওয়া দরকার। এলাকার বাসিন্দা মো. আমির হোসেন জানান, আমানতগঞ্জ এই খামার থেকে এক সময় মানুষ লাইন ধরে ডিম এমং মুরগি কিনত। এখন সেই খামার প্রায় খালি পড়ে থাকে। এই খামার মানুষের কাজে আসছে না। কিছু বাচ্চা বিক্রি হলেও ডিম কিংবা মুরগি বিক্রি হয় না। হাঁস তো এখানে পালনই হয় না। শেড খালি থাকায় তেমন কোন কাজও নেই। কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভেতরে শাকসবজি চাষ করেন। বরিশাল সরকারি হাঁস-মুরগির খামারের এক কর্ম নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে সমস্যার অন্ত নাই। ১০টি শেড সবময় খালি পড়ে থাকে। চারটি হ্যাচারি চালু থাকলে শেডগুলো ভরা থাকতো। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই খামারে এখন হাঁস পালা বন্ধ আছে। কর্তৃপক্ষ জানার পরও এখানে খামার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। খামারের সহকারী পরিচালক ডা. রেজাউল করিম ভোরের আলোকে বলেন, বরাদ্দ কম থাকায় খামারটির এই অবস্থা হয়েছে। সীমানা প্রাচীর না থাকার কারণে দিঘির চারপাশ মানুষ দখল করে নিচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে মুরগির বাচ্চার হাহিদা প্রচুর। কিন্তু উৎপাদন কম থাকায় চাহিদা পুরণ করা যাচ্ছে না। এই খামারটিকে উন্নয়ন করলে এবং বরাদ্দ বাড়ালে এই অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে। এব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা ঢাকা পাঠানো হয়েছে।