গণ পরিবহন খোলার সিদ্ধান্ত, তারপরও সতর্ক থাকতে হবে

আজ ৩১ মে সারা দেশের গণ পরিবহণ চালু হচ্ছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্মহীন মানুষদের সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘবের জন্যই এই উদ্যোগ। সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানও খোলার নির্দেশনাও আছে। অনেকে প্রশ্ন করেছেন সবকিছু স্বাভাবিক হলে করোনার ছোবল ভয়াবহ হবে কি না? মানুষের মৃত্যুর মিছিল বাড়বে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এই মুহূর্তে কঠিন। জনসমাগম এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় না থাকলে এবং মাস্ক ব্যবহার না করলে অবস্থার অবনতি হওয়ার আশঙ্ক আছে। যেখানে জীবন এবং জীবিকার সম্পর্ক সেখানে অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। আমাদের জীবনের চাকা সচল রেখেই করোনাকে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জনজীবন স্বাভাবিক হলেও আমাদের স্বাস্থবিধি মানার প্রতি জোর দিতে হবে। সবকিছু খুলে দেওয়ায় আমাদের ঝুঁকি হয়তো বাড়বে। তারপরও আমাদের সতর্ক এবং সচেতন থাকতেই হবে।
সারা বিশে^র সঙ্গে বাংলাদেশও করোনা মহামারী মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। করোনা দিন দিন বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। তারপরও আমরা সতর্ক হতে পারছি না। করোনা যখন আমাদের চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। সেই সময় জীবন এবং জীবিকরা টানেই খলে দেওয়া হচ্ছে। ৩১ মে থেকে লঞ্চ, বাস এবং ১ জুন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হলে মানুষের ভীড় বাড়বে এটা স্বাভাবিক। এটা তো ৩১ মে’র আশঙ্কা। কিন্তু এর এগেই তো আমরা আমাদের ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-আরিচা ফেরীঘাটে মানুষের মিছিল দেখেছি। এতো মানুষ ভীড় জমিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসতে দেখেছি। একই চিত্র ছিল পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঢাকা যাওয়ার মিছিল। সবকিছু বন্ধ রেখেও এই মানুষের মিছিল বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। সরকারের সর্বত্মক চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মানুষ কোন ধরণের নিয়ম না মেনে পথে-প্রান্তরে ছুটেছে। এখন তো অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন স্বাস্থ্যবিধি কিংবা শারীরিক দূরত্ব মানার বিধান কি হবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে জীবন স্বাভাবিক করতে যেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, একই সঙ্গে যেন অন্তত শারীরিক দূরত্ব এবং নাক, মুখ ও চোখ ঢেকে রাখার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাহলে করোনার ঝুঁকি থাকলেও মাহামারী আকার ধারণ করতে পারবে না। সেই সঙ্গে নাগরিকদেরও সচেতন, সতর্ক থাকতে হবে।
গত প্রায় দুই মাস ধরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আমাদের করোনা থেকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিযে চলেছে। এক পর্যায় করোনা মহামারী আকার ধরণ করার আশঙ্কায় স্কুল, কলেজ বিশ^বিদ্যালয়সহ সমস্তকিছু বন্ধ করার ঘোষণা দেয় সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে তদরকীর দায়িত্বও দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় গণ পরিবহনসহ অধিকাংস যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু আমরা করোনাকে তেমন একটা গুরুত্ব না দেওয়ায় সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত হচ্ছে, ডাক্তার, পুলিশ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এরপরও ঈদ বাজারে মানুষের ভীড় কমানো যায়নি। করোনার এই যুদ্ধ আমাদের বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। এবার গণপরিবহন ও সব প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি আমাদের কোন পথে নিয়ে যাবে জানি না। বলা হচ্ছে, অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং কর্মহীন মানুষদের কথা বিবেচনায় নিয়ে এর বিকল্পও কিছু ছিল না।
আমরা বলতে চাই, অফিস, আদালত, গণ পরিবহন যতোই স্বাভাবিক হোক, আমাদের করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে। সব কিছু খোলার সুযোগে আমরা যেন জনসমাগম না করি। কমপক্ষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজেকে সুস্থ্য রাখার চেষ্টা করি। কর্মপরিবেশও যেন করোনাকে বিবেচনায় নিয়ে সাজানো হয়। করোনায় আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যেন আমাদের গণ পরিবহন, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চালানো হয়। কর্মজীবন সচলের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি ঝুঁকির আশঙ্কা মাথায় রেখেই আমাদের সতর্ক থকতে হবে। অর্থনীতির চাকা সচল করতে গিয়ে যেন আবার করোনার বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে না যায়। সেদিকে আমাদের সবার নজর দিতে হবে। কেবল সরকার নয়, প্রতিটি নাগরিকের সমান দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।