গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

বলা হয় গণমধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। চতুর্থ স্তম্ভ নাজুক হলে রাষ্ট্রের অস্তিত্বও নাজুক হয়ে যায়। রাষ্ট্রের ভীত মজবুত রাখতে যারা কাজ করছেন সেই গণমাধ্যমকর্মীরা কতটা নিরাপদে কাজ করতে পারছেন সেটা ভেবে দেখা একান্ত আবশ্যক। রাষ্ট্রের এই চতুর্থ স্তম্ভের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা কতটা নিরাপদ। কর্মক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রের বাইরে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটা কচুপাতার পানির মতো। সঠিক খবর জানতে ও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নানমূখি প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে চলতে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা রাষ্ট্রকে প্রগতির পথে নিয়ে যেতে নিরন্তর কাজ করে চলে। অথচ তাদের জীবন কঠিন অনিশ্চয়তায় ভরা। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা এখন নিত্যদিনের। এর বাইরে, হুমকী, মামলা এবং হামলার শিকারও হতে হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীদের। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ভেঙে পড়ার আগে এটাকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মক্ষেত্র, রাজপথ এবং বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মীরা যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারে তার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিন। গণমাধ্যমকর্মীরা নিরাপদ হলে রাষ্ট্রও অনেকটা নিরাপদ থাকবে।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা উঠলেই সরকার বলেন, সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে গণমাধ্যম। কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে তার উদাহরণ দিতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে। তবে দুই-একটি উদাহারণ দেওয়া যেতেই পারে। সঠিক তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়েও গণমাধ্যমকর্মীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নেতিবাচক থাবা ও হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। ঘরে-বাইরে গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলের নিষ্পেষণেরও শিকার হতে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। সেটা যে কেবল সরকারি দল তা নয়, বিরোধী দলের কর্মসূচিতেও গণমাধ্যম ঝুঁকিতে থাকে। সব শেষ স্বাধীনতা দিবসে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হেফাজতের তা-বে গণমাধ্যকর্মীরা আহত হয়েছে, ভাংচুর করা হয়েছে গণমাধ্যমের যানবাহন। যা সুস্থ্য সাংবাদিকতার পথে চরম হুমকী ও বাধা। এসব বাধা দূর করতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।

সারা দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে। হামলা-মামলাসহ এমন ঝুঁকির মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীদের। কাজ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের রাজনৈতকি হিংসার শিকারও হতে হয়। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে হেফাজতের তা-বে বিষ্মিত হয় ণনমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে গোটা জাতি। সেদিন হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম, ব্রহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এসব খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে চরম হামলার শিকার হয় গণমাধ্যমকর্মীরা। যা ১৯৭১ সালের পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। ১১ স্বনামধন্য শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মুজিব শতবর্ষে ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা ও বাংলাদেশবিরোধী হেফাজতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের নানা স্থানে যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়েছে তা কেবল ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের ঘৃণ্য ও নৃশংস কর্মকা-ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’

আমরা এমন উক্তি না করে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিন। পথেপ্রান্তরে সাংবাদিকরা যাতে নির্যাতন, হামলার শিকার না হয় সেজন্য তাদের নিরাপত্তা দিন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রগতির চাকা সচল রাখুন।