গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা স্বার্থে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চায় টিআইবি

গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা স্বার্থে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চায় টিআইবি

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার (২ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে অবাধ তথ্য ও মত প্রকাশের অধিকার, মুক্তচিন্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর এটা নিশ্চিত করা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ও ক্ষমতাসীনদের স্বার্থরক্ষায় যথেচ্ছভাবে অপব্যবহারের অন্যতম হাতিয়ার নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলেরও দাবি জানানো হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব হলো, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণমাধ্যম যাতে বিনা বাধায় তার ওপর অর্পিত ভূমিকা পালন করতে পারে, তার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লেও ভয়হীন স্বাধীন সাংবাদিকতা ঠিক ততটাই কমেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সময়ে দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যাগত তথ্য উপস্থাপন করে অন্তসারশূন্য আত্মতৃপ্তিলাভের চেষ্টা করতে দেখা যায়। অথচ রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের হয়রানি, হামলা ও মামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধসহ স্বাধীন মত ও চিন্তা প্রকাশের চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক ২০২২-এ এক বছরে দশ ধাপ পিছিয়ে ১৬২ তে বাংলাদেশের নেমে যাওয়া প্রমাণ করে, দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কতোটা আতঙ্কজনক হারে অবনমন ঘটেছে।

এছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগকে দায়ী করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য গবেষণা বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বলবৎ হওয়ার পর থেকে এই আইনে যতো মামলা হয়েছে, তার প্রতি চারটির একটিই হয়েছে সাংবাকিদকদের বিরুদ্ধে। এসব মামলার বাদীদের বড় অংশই সরকার ও ক্ষমতাসীন দলসংশ্লিষ্ট। তাই এটি বলা কোনভাবেই অত্যুক্তি হবে না, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহার মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার এবং গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার প্রতি প্রহসনের নামান্তর। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের তুলে নিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ সময় পর এই আইনে মামলা রুজু করা, অ-জামিনযোগ্য ধারায় আটক রেখে অভিযোগ প্রমানের আগেই দীর্ঘ সময় কারাগারে আটকে রাখা সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। এমতাবস্থায়, অবিলম্বে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

একদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাসমূহের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া, অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গসহ অদৃশ্য শক্তির প্রভাব বলয়ে সংবাদকর্মীদের সার্বিক কর্মক্ষেত্রে এক ধরনের ভীতিজাগানিয়া পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যম এখন সেল্ফ সেন্সরশিপের ফাঁদে আটকা পড়েছে বলে মনে করছে টিআইবি। প্রতিনিয়ত হামলা, মামলা, ক্ষেত্রবিশেষে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে নাগরিকদের বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতে ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে অধিকাংশ সংবাদকর্মী সাহসী ভূমিকা পালন করছেন, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে সেইসব সংবাদকর্মীদের টিআইবি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায়। দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসিত দেশ গঠনে গণমাধ্যমকর্মীরা যাতে এ সাহসী ভূমিকা অব্যাহত রাখতে পারেন এবং গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ, কর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ও নিয়মিত বেতনভাতার পাশাপাশি আপৎকালীন ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার, গণমাধ্যম মালিক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানায় টিআইবি।