লঞ্চে নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিন
বলা হয় নারীরা এখন যে কোন সময়ের চেয়ে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে। নারী স্বাধীনভাবে গণপরিবহনসহ কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে পারছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলে ভিন্ন কথা। কয়েকদিন আগে বরিশালে চলন্ত লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিতে হয়েছে এক নারীকে। দিনের বেলা লঞ্চে ওই নারীর নিরাপত্তা ছিল না। লঞ্চের ষ্টাফরা ওই নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। লঞ্চ স্টাফদের দ্বারা উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে রক্ষা পান তিনি। কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সেই নারীকে উদ্ধার করতে এগিয়েও আসেনি। নদীর মধ্যে ফেলে তারা চলে যান। এমন অমানবিক, বর্বর ও নির্মম ঘটনা আমাদের দেখতে হয়েছে। বিলাসবহুল লঞ্চ স্টীমারে নারীরা কতটা অসহায় তার প্রমাণ পাওয়া গেল ওই নারীর নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। অথচ সেই স্টাফদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। লঞ্চের ষ্টাফ দ্বারা নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা একটি জঘন্য এবং নির্মম ঘটনা। নারীর নিরাপত্তায় ব্যবস্থা না নিলে নারীরা উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে হঁটা বন্ধ করে দেবে। তাই লঞ্চ, স্টীমারসহ সকল গণপরিবহণে নারীর জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে। লঞ্চে নারীর শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য লঞ্চ মালিকসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকেও দায়িত্ব নিতে হবে।
বলা হয়, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলের নেতা নারী, সংসদে স্পীকার নারী, অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা নারী আছেন। এটা নারীদের অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু যেকজন নারী দায়িত্বশীল অবস্থানে আছেন তা মোট জনসংখ্যার কত অংশ? যেসব নারীরা সামনে এগিয়ে গেছেন তাদের ইতিহাসও যে খুব মশ্রিন তা কিন্তু নয়। তাদের ইতিহাস বের করা আমাদের কাজ নয়। আমরা ধরে নেবো তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিজয়ী। কিন্তু দেশের সব নারীরা কি সেই পরিবেশ, সুযোগ, অধিকার পান। বলবো পান না। তারা প্রতিবাদ করতে গিয়েও বারবার তোপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত অন্তরীণ হতে বাধ্য হন। যদিও নারীর প্রতি সকল বৈষম্য দূর করতে বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। তবে সেই চলার পথে সহযোগীর চেয়ে অসহযোগী মানুষের সংখ্যা এখনো বেশি। এখানো মোটাদাগে নারীকে অস্তন হিসেবেই দেখতে পছন্দ করে বেশিরভাগ মানুষ।
পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা থেকে বেড়িয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে নারীর সহযোগী হওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এখান থেকে উত্তোরণ ঘটাতে হলে নারীকে প্রথম মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে হবে। তারপর নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে নারীর শ্লীলতাহানি, উত্ত্যক্ত করার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সেই উদ্যোগ না থাকার কারণেই নারীরা কেবল লঞ্চ নয়, বাসাবাড়ি, সড়ক, জনপদ, কর্মক্ষেত্র এবং আইন-আদালতে বারবার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে আমরাই পিছিয়ে পড়বো।
আমরা বলতে চাই, কতটা বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়লে নারীকে লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিতে হয়। নদীতে ঝাঁপ দেওয়া ওই নারীর প্রতি সহানুভূতি তো নেই-ই, উল্টো তার দিকেই নানান প্রশ্ন বান ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। আজ লঞ্চের স্টাফদের হাতে আত্মসর্মন করলে কি ভালো হতো? আমরা বলবো অবশ্যই না। আমাদের দেখতে হবে কেন নারীকে নদীতে ঝাঁপ দিতে হলো। নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্ম রক্ষার চেষ্টার বিষয়টি জানার পরও কেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ওই নারীকে রক্ষায় এগিয়ে এলো না। কেন লঞ্চের ষ্টাফদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। এই কেনগুলোর উত্তর না দিলে একদিন আপনার আমার সন্তানেরাও কিন্তু এখান থেকে মুক্তি পাবে না। স্বাধীনতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবরূপ দিতে হলে এই দুষ্টক্ষতগুলো মেরামত করতেই হবে।
আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যে বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল করছে সেখানে নারীদের নিরাপত্তায় কোন ব্যবস্থা নেই। কেন তাদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই? লঞ্চ মালিকরা কেবল আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া ছাড়া আর কোন বিষয় খোঁজ খবর রাখেন না। লঞ্চের ষ্টাফদের হাতে অনেক নারী এভাবে লাঞ্চিত হয়েছে। অভিযোগ উঠলেও লঞ্চ ষ্টাফদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বারবার তারা এই সুযোগ নিচ্ছেন।
আমরা চই, লঞ্চে নারীসহ সবার নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এব্যাপারে লঞ্চ মালিকদের দৃষ্টি দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। যাতে নারীরা কোনভাবে নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে। একটি সুন্দর পরিবেশ যেন ফিরে পায় নারীরা সেই প্রত্যাশা করছি।