গর্বিত র্যাব কর্মকর্তা আতিকা ইসলাম
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশ্বের সকল নারীর প্রতি ভোরের আলোর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল বলেছিলেন, ‘কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরোবারি, প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়লক্ষী নারী। অথবা বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’।
পুরুষ শাসিত সমাজে এই সত্য সহজভাবে স্বীকার করে নিতে চায় ক’জন। কারণ নারীকে তাঁর পথ পরিক্রমায় অনেক বাঁধা অতিক্রম করতে হয়। শত বাঁধা অতিক্রম করেই নারী আমাদের উন্নয়নের সমান অংশিজন হয়ে উঠছে। তাঁরা এক একজন হয়েছেন আমাদের অভিভাবকও। বিশ্বের বুকে আমদের নারীরা যে অবদান রেখে চলেছে তার প্রমাণ তো আমাদের সামনেই রয়েছে। আজ বিশ্ব নারী দিবসে আমাদের শ্রদ্ধেয় এমন এক নারীকে ভোরের আলো’র পাঠকদের সামনে উপস্থান করতে পেরে আমরা গর্বিত। এই নারী কর্মক্ষেত্রে বিচরণ করে কিভাবে সমাজ ও রাস্ট্রে অবদান রেখে চলেছেন সেটা জানাতেই ভোরের আলো’র এই ক্ষুদ্র চেষ্টা।
গর্বিত র্যাব কর্মকর্তা আতিকা ইসলাম
বরিশাল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৮ প্রধান আতিকা ইসলাম। একজন নারী হিসেবে যোগ্যতার সঙ্গে অবদান রেখে চলেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কাজে। জীবনের শুরু থেকে প্রতিরোধ আর বাঁধার পাহাড় ডিঙিয়ে একজন সফল নারী হিসেবে দেশের নিরাপত্তায় অবদান রেখে চলেছেন আতিকা ইসলাম। প্রবাদ আছে, ‘যে রান্ধে, সে চুলও বান্ধে’। নারী যে পারে তাঁর প্রমাণ তিনি রেখেছেন তাঁর কর্মক্ষেত্রে। নারীরা যে কেবল হেসেল সামলাবে এমন চিন্তার বদলের কারিগরদের একজন হচ্ছে আতিকা ইসলাম। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমাদের দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। এটা আমাদের নারীদের উজ্জীবীত করবে।
আতিকা ইসলাম ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে ১৮তম বিসিএস-এ যোগ্যতাতা দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন। একজন নারী হিসেবে বাংলাদেশে চাকুরী করা এবং একই সঙ্গে সংসারে সামঞ্জস্য বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার বলে মনে করেন তিন। তারপরও তিনি সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে চলেছেন। সেখানে তাঁর পথ চলায় সম্ভাবনা জাগিয়েছে।
সকল প্রতিকূল পরিবেশে পরিবারের একান্ত সহযোগিতা এবং নিজের ইচ্ছা ও পছন্দে পুলিশের মত একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় যোগদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি। তাঁর অহংকারের বিষয় হচ্ছে সমাজের এবং দেশের কল্যাণে ভূমিকা রেখে নিজেকে একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছেন।
আমাদের সমাজে নারীদের এগিয়ে চলা খুবই কষ্টের বিষয়। পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিজেকে যোগ্য হিসেব উপস্থাপন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ আমাদের সমাজ এখনো নারীর এই এগিয়ে যাওয়াকে ইতিবাচকভাবে মেনে নিতে পারছে না। তিনি মনে করেন সমাজে নারীদের গ্রহণযোগ্যতা বা কাজে সহজভাবে এগিয়ে যাওয়া কখনই ইতিবাচক ছিল না। কিন্তু আতিকা ইসলাম একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর কর্মক্ষেত্রের সকল স্তরে পুরুষ সহকর্মীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা পেয়েছেন। কর্মক্ষেত্র এবং সামাজিক কর্মকা- পরিচালনায় তিনি কখনই নিজেকে অনুত্তম বা নিরুপায় মনে করেননি। এত প্রতিকূলতাকে জয় করা আতিকা ইসলাম মনে করেন, সমাজের সকল নারীদের জীবনের গল্পের কথন হয়তো বা তাঁর মতো এতটা সহজ নয়। অর্থাৎ তিনি তাঁর চ্যালেঞ্জকে ইতিবাচকভাবে দেখতে চান। এটা যেন ভয়কে জয় করার মতো অমিত মন্ত্র। এই মন্ত্রে দেশের সব নারীরা উজ্জীবীত হলে বাংলাদেশের সামনে চলার গতি আরো বাড়বে।
আতিকা ইসলাম বলেন, আধুনিক সমাজে বাইরে লোক দেখানো হাসিখুশি নারীরা এখনও ঘরের কোনে অনাদরে অবহেলায় গুমরে কাঁদে। নারীকে নিজেকে নিজের পরিচয়ে গর্বের সঙ্গে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখতে হবে। মাথা উঁচু করে নিজেকে গড়ে উঠার শিক্ষা নিতে হবে। পিছিয়ে থেকে অন্যের দয়া ও করুনার পাত্রী হওয়া কিংবা সমাজের মুখরোচক কাহিনীর চরিত্র হিসেবে বেঁচে থাকায় জীবনের কোন স্বার্থকতা নেই।আতিকা ইসলাম নারীদের স্বাবলম্বী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, নারীদের শিক্ষা অর্জনের সঙ্গে নিজের আত্মসম্মানবোধকেও জাগিয়ে তোলা একান্ত আবশ্যক। নিজের অধিকারকে সমুন্নত রাখতে এবং সমাজে গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে নিজের পরিচয় একজন নারী বা পুরুষ নয় মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। আর নারীদের অধিকার কখনই কাউকে উপহার হিসেবে দান করবে এমনটা নয়, নারীকে তাঁর অধিকার ছিনিয়ে আনতে হয়। যা পৃথিবীর সকল দেশের সকল নারীদের জন্যে সমানভাবে প্রযোজ্য। তিনি নিজেকে একজন নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে দেখতে পছন্দ করেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দেশের এবং সমাজের কল্যাণে অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন।