ঘরের ক্যাপ্টেনসি ঠিকভাবে করতে বলছেন মাশরাফী

করোনাভাইরাসের বিস্তার এড়াতে সবাইকে সচেতন করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারনা চালাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা পাঁচ দিনের ব্যবধানে তিনটি পোস্ট করেছেন নিজের ফেইসবুক পেজে। যার দুটিই করেছেন সোমবার।
এদিন সকালে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে মাশরাফী লিখেন, ‘এখন যৌবন যার বাসায় থাকার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ পরে রাতে একটি ডিভিও পোস্ট করেছেন। যে ভিডিও বার্তাতেও সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রামণ এড়াতে এই মুহূর্তে জরুরী করণীয় কি, সে সব নিয়েও বলেছেন মাশরাফী।
মাশরাফীর বলা কথাগুলো তুলে ধলা হলো:
‘আসসালামু আলাইকুম।
আশাকরি সবাই ভালো আছেন। যদিও ভালো আছেন কথাটা এই মুহূর্তে বলা ঠিক কিনা, কারণ সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারপরও কথা বলতে হবে।
করনাভাইরাস। অনেকেই এনিয়ে কথা বলছি সোস্যাল মিডিয়ায়। যেখানেই যাবেন আপনারা দেখবেন করোনাভাইরাস নিয়েই সবাই আতঙ্কিত। আতঙ্কিত না হওয়ারও কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর সমস্ত বড় বড় দেশগুলো এখন শারীরিক, মানসিক, সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত। তারা কোনোভাবেই ট্যাকেল দিতে পারছে না।
এখন আমাদের কি করা উচিত বা আমাদের কি করণীয়? কারণ, আজকে আমরা যতো বড় বড় দেশগুলো দেখছি, যেভাবে ভেঙে পড়ছে। আমাদের দেশতো এমনিতেই ছোট, মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের যদি এই ধরণের ক্রাইসিস আসে, আল্লাহ না করুণ। কী হতে পারে আমরা বুঝতেই পারছি। এই মুহূর্তে করণীয় অনেক কিছু আছে, যেগুলো আমি মনেকরি। যা আমাদের সবারই করা উচিত।
এক- ঘরে বসে আল্লাহকে ডাকা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া এবং আল্লাহর কাছে ডাকা যে, আল্লাহ আমাদেরকে রহমত করুণ। এই ধরণের দুর্যোগ থেকে আমাদের সহযোগিতা করুণ, যেন না হয় এবং সবাই যেন সুস্থ থাকে।
দুই- প্রবাসি ভাইয়েরা যারা আছেন, বিদেশ থেকে যারা আসছেন দেশে। বা যারা দেশে থাকেন, বেড়াতে গিয়েছিলেন...। তাদের কিন্তু অনেক কিছু করার আছে। প্রথম হচ্ছে নিয়মকানুনগুলো অবশ্যই মেনে চলা। কোয়ারেন্টাইন এই শব্দটা আমি ব্যবহার না করে বলবো গৃহবন্দী থাকা। সেটা পরিবার নিয়ে না, আপনি আলাদা ১৪ দিন থাকা। ১৪দিন পার হওয়ার পর যদি আপনি অসুস্থ না হন, তখন আপনার পরিবারকে নিয়ে ঘরে থাকা। যতক্ষণ না পর্যন্ত এই ঘোষণা আসছে, ডক্তররা বা সমাজের উচ্চপদস্ত যারা আছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ঘোষণা না আসছে আমরা নিরাপদ, ততক্ষণ পর্যন্ত ঘরে থাকা। এটা হচ্ছে প্রথম।
এরপর আমাদের অনেক করণীয় আছে। যেমন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। ১৫-২০ মিনিট অন্তর নিয়মিত পানি পান করা এবং আপনার ঘর, আপনার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা। আমাদের কিন্তু এই সব নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলতে হবে। এর থেকে কঠিন অবস্থায় যাওয়ার পর মানলে কিন্তু আর সুযোগ আমরা পাবো না। আমাদের উচিত এই জিনিসটাকে এখন থেকেই শক্ত হাতে প্রতিহত করা। কারণ এটা রাষ্ট্র ক্রাইসিস হয়ে যেতে পারে। আমরা কেউ জানি না যে আশে পাশে কার আছে। আমরা বের হচ্ছি, কার হাত ধরছি, কি ধরছি। আমরা কেউ জানি না আসলে এই ভাইরাসটা কে নিয়ে চলছে পথে।
এই ভাইরাসটা ১৪ দিন সময় নেবে বোঝার জন্য। আমার কাছে মনে হয় এটা গভীরভাবে চিন্তা করার ব্যপার। আমরা যেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না, সেটা যদি আকস্মিকভাবে আমাকে, আপনাকে, আপনার পরিবারকে বা সামাজিকভাবে আঘাত করে এটা কিন্তু সামাল দেওয়া খুব কঠিন হবে।
এটা আগেও বলেছি, ইতালির মতো দেশ, ইংল্যান্ড, স্পেন, চায়না, সব বড় বড় দেশগুলো কিন্তু হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে আমরা কতোটুকু পারবো সেটা ভাবার সময় এসেছে। কারণ দেশটা অনেক ছোট, মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে কিন্তু ভাবার সময় আছে।
আমাদের যে করণী জিনিসগুলো আছে, আমরা করি। এটা করা খুবই প্রয়োজন। একটা কথা মনে রাখবেন। আপনার ঘরের ক্যাপ্টেন কিন্তু আপানি নিজে। আপনি যদি আপনার ঘরের ক্যাপ্টেনসি ঠিকভাবে করতে পারেন, আমি শিউর আমরা কিছুটা হলেও কমাতে পারবো। অন্যথায় বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
আপনাদের কাছে বিনিতি অনুরোধ, আপনারা ঘরে থাকুন। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। আপনি নিজে সুরক্ষিত থাকুন। আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন। আপনার সমাজকে সুরক্ষিত রাখুন। এটা আমার দায়িত্ব, আপনার দায়িত্ব, সবার দায়িত্ব।
এই মুহূর্তে আমরা কোনোভাবেই বাইরে আসার চেষ্টাও করতে পারি না। কোনোভাবেই চেষ্টা করতে পারিনা বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়ার। আমরা সবাই বলি কাজের ব্যস্ততার কারণে আমরা অনেক সময় সময় পাই না, পরিবারকে সময় দেওয়ার। আপনি এখন সময় দেন, পরিবারকে সময় দেন। এখন আপনার কোনো কাজের ব্যস্ততা নেই। আপনি সময় দেন এবং যারা আছেন তারা চেষ্টা করুণ। যে যার জায়গা থেকে চেষ্টা করুণ।
দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করুণ, যতটুকু না করলেই না। তারপরও আমি বলবো, প্রথমত বাড়িতে থাকুন। ঘরে থাকুন, আপনার সমাজকে আপনি রক্ষা করুণ।
ভালো থাকুন সবাই।’