বরিশালে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজীর মামলায় তিন পুলিশ সদস্য, দুই নারীসহ ৬ জনকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আনিচুর রহমান কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো তিন পুলিশ সদস্য হলো জেলা পুলিশের সদস্য বেলাল হোসেন, মো. ইলিয়াস এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন (বিএমপি) পুলিশের সদস্য আনিচুর রহমান মৃধা। অন্য তিনজন হচ্ছে তাদের সহযোগী শিরিন সুলতানা, সুর্বণা আক্তার ও সুভাষ চন্দ্র শীল।
গত সোমবার দুপুরের পর ওই ৬জনকে নগরীর বিভিন্নস্থান থেকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর মল্লিক জানান, সংঘবদ্ধ ওই চক্রটি নানাভাবে নগরীতে চাঁদাবাজি ও প্রতারণা করছিল। ওই অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যসহ ৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন জানান, গত ১১ জুলাই পূর্ব পরিচিত শিরিন সুলতানা নামে এক নারী অপরিচিত আরেক তরুনীকে নিয়ে নগরীর জুমির খান সড়কে সবুজ মোল্লা ভাড়া বাড়িতে যান। কিছুক্ষণ পরেই শিরিন সুলতানার ফোন পেয়ে ওয়াকিটকি হাতে সবুজ মোল্লার বাসায় হাজির হন দুই পুলিশ সদস্য। আসেন আরো এক ব্যক্তি। এর পরপরই ওই দুই পুলিশ সদস্য নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে সবুজ মোল্লার সঙ্গে ওই তরুনীর একাধিক আপত্তিকর ছবি তোলেন। পরে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সবুজ মোল্লার কাছ থেকে নগদ ১৩ হাজার এবং বিকাশের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন ওই চক্র।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গত ১১ তারিখ তারা জুমির খান সড়কে কোন অভিযানে যাননি। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে সবুজ মোল্লা নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে গেলে তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এরপর গোয়েন্দা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে গত সোমবার সবুজ মোল্লা বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর গোয়েন্দা পুলিশ প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। অভিযান চালানো হয় নগরের বিভিন্ন স্থানে। এর অংশ হিসেবে নগরীর মুক্তিযোদ্ধা পার্ক এলাকা থেকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় শিরিন সুলতানাকে। শিরিন সুলতানা বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই গ্রামের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ডাকাত শুক্কুর আলীর স্ত্রী। শিরিন সুলতানার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেলা পুলিশের সদস্য বেলাল হোসেন ও মো. ইলিয়াস এবং মেট্রোপলিন পুলিশের সদস্য আনিচুর রহমান মৃধা এবং তাদের সহযোগী সুজন চন্দ্র শীল ও সুর্বনা আক্তার নামের আরেক তরুনীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুজন চন্দ্র শীল পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জ উপজেলার এবং সুর্বণা আক্তার ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসিন্দা।
বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাকিব হোসেন ও মহানগর ডিবির উপ-কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর মল্লিক জানিয়েছেন, ওই তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সব ধরণের বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।