চার নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

চার নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

আজ ৩ নভেম্বর। বাঙালি জাতির জাতীয় চার নেতাকে এই দিন কারাগারের ভেতর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় ছিল জেল হত্যা দিবস।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন কক্ষে জাতীয় চার নেতাকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের পরিচয়ের সঙ্গে এই চার নেতা আষ্টেপৃষ্টে মিশে আছেন। আজকের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু সহ চার নেতার অবদানের ফসল। অথচ জাতীয় জীবনে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় এই চার নেতা অনেকটা উপেক্ষিত। আজো এই চার নেতা পায়নি রাষ্ট্রীয় মর্যাদার স্বীকৃতি।  কেবল ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসের আলোচনার মধ্যেই সীমাদ্ধ থাকে তাদের জীবন দর্শন। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কালজয়ী ইতিহাসের অনন্য পথপ্রদর্শকদের খবর জানে না বলেই মনে হয়। জানে না বললে ভুল হবে, জানানোর তেমন কোন উদ্যোগও চোখে পড়ে না। যারা না হলে স্বপ্নের সোনার বাংলার ভীত রচনা হওয়াই কঠিন ছিল। আজকের এই দিনে তাঁদের প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা।

স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা অর্জনে যাঁদের ভূমিকা অবিস্মরণীয় তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন আমদের জাতীয় চার নেতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রজনৈতিক আদর্শের চার কারিগর ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচ এম কামারুজ্জামান। বঙ্গন্ধু সব সময় এই চার নেতার পরামর্শ নিয়েই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কারিগরও ছিলেন এই চার নেতা। বঙ্গবন্ধুসহ এই চার নেতা জীবীত থাকলে অনেক আগেই আমদের স্বপ্নের চূড়ায় নিয়ে যেতেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার তিন মাসের মাথায় চার নেতাকেও হত্যা করা হয়।

দু:খের বিষয় হচ্ছে, আমাদের এই চার নেতা সম্পর্কে আমরা সেভাবে জানি না। কেবল ৩ নভেম্বর এলে তাঁদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। হয় আলোচনাও। ছবি আর আলোচনার মধ্যেই থেকে যান তারা। সেই আলোচনাও হয় রাজনৈতিক চিন্তার ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাদ দিলে এই চার নেতা সম্পর্কে আামদের নেতা-কর্মীরাও সেভাবে জানেন না। আমাদের নতুন প্রজন্ম তাদের নামও সঠিকভাবে বলতে পারবেন কি না সন্দেহ। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পাড়ি দিয়েছি আমরা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের ভীত রচনাকারী চার নেতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি। জাতীয় চার নেতার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারলে আজকের প্রজন্ম আগামীতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ হতে পারত। তাই সরকার এবং দেশের প্রগতিশলী সব রাজনৈতিক দলের উচিত এই মহান নেতাদের জাতির সামনে আরও বেশি বেশি তুলে ধরা।

আমরা লক্ষ্য করেছি, জাতীয় চর নেতার অন্যতম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ-এর ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ  জেল হত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তার অন্য দুটি দাবি হলো ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার গঠনের দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা এবং জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনীসহ পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা।

মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর এই দাবি কেন একা সোহেল তাজের দাবি হবে। এই দাবি তো ১৭ কোটি বাঙালির দাবি হওয়া দরকার ছিল। কেন ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস হিসেবে পরিচিতি পাবে? দিবসটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদার সঙ্গে পালন করা উচিত। হয়তো আগামীতে সেরকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আমরা দেখবো, ৩ নভেম্বর গোটা দেশজুড়ে এই চার নেতার হত্যা দিবস পালন হবে হয়তো। সেখানেও তারা সেরকম মূল্যায়িত হবেন কি না বলাটা কঠিন। আবার মূল্যায়িত হয়নি সে কথা বলার সাহসও নেই। আমাদের চার নেতাকে যারা চেনেন এবং জানেন তাদের আচরণ দেখেও মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। কিন্তু সব সময় তো প্রশ্ন করা চলে না। তারপরও বলছি, অনেক মানুষ এই চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। কিন্তু চার নেতার প্রতিকৃতি যেন নতুন প্রজন্মের শ্লোগান, ব্যানার আর মানুষের ভীড়ে ঢাকা না পড়ে। শ্লোগান দেওয়া এই মানুষগুলো অবশ্য চার নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে ভীড় জমাবেন। চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা যেন লোক দেখানো না হয়। বাংলাদেশ বিনির্মাণের কারিগর চার নেতাকে আমাদের নতুন নেতাকর্মীরা চিনবেন এবং জানবেন এটা প্রত্যাশা করি।

আমাদের বাংলাদেশের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যে নামক’টি উচ্চারণ না করলেই হয় না তারা হচ্ছেন আমাদের জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচ এম কামারুজ্জামান। তাঁদের সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বেন কাদের জন্য?

আমরা বলতে চাই, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতীয় চার নেতাকে সম্মান জানাতে না পারলে আমরা কি সম্মানিত হতে পারবো? বঙ্গবন্ধুসহ চার নেতার মর্যাদা আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। দলের নেতা-কর্মীদের এব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা সত্যিকার সোনার বাংলায় রূপ নেবে।