গলদা চিংড়ি রেনুপোনা সংগ্রহ, পরিবহন এবং বেচাকেনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও প্রতিদিন বরিশাল অঞ্চল থেকে রেনুপোনা পাচার হচ্ছে। মাঝে মাঝে প্রশাসন কিছু কিছু রেনুপোনা জব্দ করেন। এসব রেনুপোনা নদীতে অবমুক্ত করা হয়। পরিবহন ও পাচারকারীদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে শাস্তিও দেওয়া হয়। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না রেনুপোনা পাচার।
পাচারকারীরা নানা পথে প্রশাসনের চোখের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়। প্রশাসন যত পরিমাণ রেনুপোনা জব্দ হয় তা পাচারের অতি ক্ষুতম অংশ। অভিযোগ উঠেছে যত পরিমাণ রেনুপোনা জব্দ হয়, সেগুলো মুক্ত জলাশয় অবমুক্ত করার কথা। কোন কোন ক্ষেত্রে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় ওই রেনুপোনা আবার পাচারকারীদের হাতেই পৌঁছে যায়। গত মঙ্গলবার সারাদিন ডিবিসি নিউজ চ্যানেলে এমন একটি সচিত্র প্রতিবেদনে ওই তথ্য উঠে এসেছে।
রেনুপোনা পাচারের সঙ্গে যুক্ত টুঙ্গিপাড়ার টুলু মিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পাথরঘাটা এবং বরিশাল থেকে পাচার হওয়া প্রতিটি রেনুপেনা তারা ৬০ (ষাট) পয়সায় কেনেন। এই পোনা বরিশাল হয়ে খুলনা বিভাগের বাগেরহাট এলাকার বিভিন্ন ঘেরে বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৩ টাকায়।
গতকাল বুধবার একদিনে পাচারের সময় বরিশাল থেকে ৪০ লাখ এবং পাথরঘটা থেকে আড়াই লাখ রেনুপোনা জব্দ করে কোস্টগার্ড ও পুলিশ। এ ঘটনায় বরিশালে ১৮জনকে তিন দিনের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। অন্যদিকে পাথরঘাটায় একজনকে ১০০০ টাকা জরিমানা করে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। একদিনে সাড়ে বিয়াল্লিশ লাখ গলদা চিংড়ি রেনুপোনা জব্দ হয়েছে। অর্থের হিসেবে ৫১ কোটি টাকার পোনা জব্দ করেছে প্রশাসন। কঠোর শাস্তি না হওয়ায় ছাড়া পেয়ে এইসব পাচারকারীরা আবারো রেনুপোনা পাচারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।
ডিবিসি নিউজের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বরিশাল অঞ্চল থেকে গড়ে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার রেনুপোনা চালান হচ্ছে খুলনা বিভাগে। এখানেও ম্যানেজ প্রক্রিয়ার কথা উঠে এসেছে। এই ম্যানেজ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে না পারলে আমাদের চিংড়ি সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে। আশার কথা হচ্ছে আমাদের প্রশাসন চিংড়ি সম্পদ রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছেন। আইন মানতে আহ্বানও জানিয়েছেন।
আমরা চাই, রেনুপোনা পাচারের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একই সঙ্গে মৎস্য বিভাগসহ যারা পাচারকারীদের ম্যানেজের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যারা জব্দ করা রেনুপোনা অবমুক্ত না করে কিংবা আংশিক অবমুক্ত করে বাকিটা পাচারকারীদের হাতে তুলে দেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমাদের গলদা চিংড়ি রেনুপোনা পাচার বন্ধ করতে পারলে নদী, খালসহ মুক্ত জলাশয়ে সহজেই মিলবে গরদা চিংড়ি। সেই চিংড়ি নিজেদের চাহিদা পূরণের পর রপ্তানী করা সম্ভব হবে। আসুন সবাই মিলে চিংড়ি সম্পদ রক্ষায় উদ্যোগী হই।